বার্তা সংস্থা ইকনা: এনআইএ অবশ্য ইতোমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে জানিয়েছে, লাভ জিহাদের ঘটনা সত্যিই ঘটছে বলে তারা মনে করে।
এর আগে ভারতে আরএসএস বা তাদের সহযোগী বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছিল দেশের নানা প্রান্তে মুসলিম যুবকরা প্রেমের ফাঁদ পেতে দলে দলে হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তরিত করাচ্ছে।
এই তথাকথিত অভিযানকেই তারা নাম দেয় 'লাভ জিহাদ'। এখন জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা যে এনআইএ, তারাও কার্যত মেনে নিল যে এই অভিযোগ সত্যি।
কেরালার বাসিন্দা শাফিন জাহানের করা এক মামলাতেই সুপ্রিমকোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে। শাফিন জাহান গত বছরের ডিসেম্বরে ওই হিন্দু তরুণীকে বিয়ে করেন, কিন্তু কেরালা হাইকোর্ট সেই বিয়ে খারিজ করে দেয়।
হাইকোর্টের যুক্তি ছিল, আপাতদৃষ্টিতে ওই মেয়েটিকে মগজধোলাই করিয়ে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে - এবং এই ঘটনা ভারতে নারী স্বাধীনতার জন্য চরম অপমান।
অখিলা অশোকের ইসলামে ধর্মান্তর ও পরবর্তীতে শফিন জাহানের সঙ্গে তার বিয়ে নিয়ে জাতীয় তদন্ত সংস্থার তদন্তের আগে এটা বুঝার চেষ্টা করতে হবে কেন হাজার হাজার পশ্চিমা, বিশেষকরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির শেতাঙ্গরা কেন ইসলামকে বেঁছে নিচ্ছেন।
এটি হয়তো তদন্ত সংস্থার ভ্রান্ত ধারণাকে দূর করতে সহায়তা করবে। তাদের ধারণা কেরালায় অমুসলমানদের ধর্মান্তরিত করার জন্য একটি ইসলামি ষড়যন্ত্র চলছে।
শেতাঙ্গদের ইসলাম গ্রহণ নিয়ে গবেষণারত যুক্তরাজ্যের সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ. কেভিন ব্রাইসের নেতৃত্বে সম্প্রতি একটি জরিপ পরিচালিত হয়েছে।
ব্রিসের জরিপে ওঠে এসেছে যে, ২০০১ সালে যুক্তরাজ্যে ৬০,৬৬৯ জন্য ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। তাদের মধ্য ৫৫ শতাংশই শেতাঙ্গ জাতিগত গোষ্ঠীর। এর দশ বছর পরে এই সংখ্যা আনুমানিক এক লাখ অতিক্রম করার কথা ছিল। যদিও তা হয়নি। ২০১০ সালে ৫২০০ জন মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিল বলে বলা হয়।
ব্রাইসসহ অন্যরাও বিশ্বাস করেন যে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি সংখ্যায় ধর্মান্তর হচ্ছেন। যুক্তরাজ্যে ধর্মান্তরিত নারী ও পুরুষের আনুপাতিক হার হচ্ছে ২:১।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের গবেষণায় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩.৩ মিলিয়ন মুসলমানদের ২৩ শতাংশই ২০১৫ সালে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছে। ধর্মান্তরিতদের মধ্যে ৯১ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাদের প্রায় ৫৯ শতাংশ আফ্রিকান-আমেরিকান।
২০০১ সালে কেনটাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহসান বাগবি এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ইসলামে ধর্মান্তরিতদের ২৭ শতাংশই ছিল শেতাঙ্গ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রেও নারীরা পুরুষের চেয়ে বেশি মাত্রায় ইসলাম গ্রহণ করছে। দেশটিতে ধর্মান্তরিত প্রতি চারজন নারীর মধ্য পুরুষের অনুপাত একজন।
ধর্মান্তরের কারণঅধিকাংশ ধর্মান্তরিত মুসলিমদের দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে। একটি অংশ তাদের বাস্তব জীবনের কারণেই ইসলাম গ্রহণ করে, কারণ তাদের জীবন-সঙ্গী মুসলমান। অন্য অংশটি যে কারণে ইসলাম ধর্মান্তরিত হয় তার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে ইসলামিক সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা, সুফিবাদ, মুসলিম দেশে ভ্রমণ ও মুসলিম বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন, ইসলামকে আবিষ্কারের অভিযান ইত্যাদি।
জরিপে দেখা যায়, ৪৫ শতাংশ ধর্মান্তরের পিছনে বিয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা তাদের বিয়ে করার আগেই ধর্মান্তর হয়েছে এবং তাদের ইসলাম গ্রহণের এই সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই তাদের জীবন-সঙ্গী মুসলিম পুরুষ কিংবা নারী প্রভাবিত হয়।
অখিলা যিনি ইসলাম গ্রহণের পর নিজের নাম রাখেন হাদিয়া। তিনি জানান, তার ধর্মান্তরের সময় শফিন জাহানের সঙ্গে তার পরিচয় ছিল না।
তিনি আরো জানান, ধর্মান্তরের পর তিনি একটি ম্যারিজ সাইটে নিবন্ধ করার পর তিনি জাহানের পরিচয় পান।
স্ক্রল ডট ইনের মতামত কলাম/ আরটিএনএন