IQNA

ফিতরার পরিমাণ সম্পর্কে ১০ জন বিশিষ্ট মারজায়ে তাকলিদের মতামত

4:45 - June 15, 2018
সংবাদ: 2605987
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফিতরার পরিমাণ সম্পর্কে ইসলামী বিপ্লবের মহামান্য নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী, আয়াতুল্লাহ সিস্তানী, আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজী, আয়াতুল্লাহ সাফী গুলপায়ীগনি, আয়াতুল্লাহ নুরী হামাদানী, আয়াতুল্লাহ আলাভী গোরগানী, আয়াতুল্লাহ শোবেইরী যানজানী, আয়াতুল্লাহ সোবহানি, আয়াতুল্লাহ ওয়াহিদ খোরসানী ও আয়াতুল্লাহ জাওয়াদ আমেলী মতামত প্রকাশ করেছেন।


বার্তা সংস্থা ইকনা: অধিকাংশ মারজায়ে তাকলিদের মতে এবছরে যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত)-এর পরিমাণ যারা রুটি খাই তাদের জন্য ৩ কিলোগ্রাম গমের মূল্য যা প্রায় ৮ হাজার তুমান (ইরানী অর্থ) এবং যারা ভাত খাই তাদের জন্য ২০ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারের উচিত তাদের প্রধান খাদ্যদ্রর্বের ওপর ভিত্তি করে যাকাতুল ফিতর বের করে তা পরিশোধ করা।
ফিতরার পরিমাণ সম্পর্কে ১০ জন বিশিষ্ট মারজায়ে তাকলিদের মতামত পেশ করা হল:


হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী
পরিবারের প্রত্যেক সদস্যদের জন্য ফিতরার পরিমাণ ৮ হাজার তুমান (যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তাদের জন্য আটার মূল্য) ধার্য করা হয়েছে এবং যেসকল পরিবারের প্রধান খাদ্য ভাত তারা তিন কেজি চাল অথবা সমমূল্য পরিমাণ অর্থ প্রদান করবেন।
এছাড়াও যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের জন্য রোজার কাফফারা ২৫০০ তুমান এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের রোজার কাফফারা একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে।

আয়াতুল্লাহ সিস্তানী
ইরানে নিবাসীদের জন্য যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তাদের জন্য ৬ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে। এছাড়াও যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের জন্য রোজার কাফফারা ২০০০ তুমান এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের রোজার কাফফারা একলক্ষ বিশ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে।

আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজী
এবছরে তেহরানে যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তাদের জন্য ৮ হাজার তুমান এবং অন্যান্য শহরের অধিবাসীদের জন্য ৭ হাজার তুমান যাকাতুল ফিতর ধার্য করা হয়েছে এবং যাদের প্রধান খাদ্য ভাত তাদের জন্য ২০ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে। উল্লেখ্য, যেসকল শহরে আটা অথবা চালে মূল্য ঘোষিত মূল্যে কমে ক্রয়-বিক্রয় হয় তারা তাদের শহরের রীতি অনুযায়ী অর্থাৎ সেই পরিমাণ মূল্য অনুযায়ী, প্রধান খাদ্য হিসেবে তিন কেজি গম অথবা চালের মূল্য পরিশোধ করবে।
এছাড়াও যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের জন্য রোজার কাফফারা ২৫০০ তুমান এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের রোজার কাফফারা একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে।

আয়াতুল্লাহ নুরী হামাদানী
আয়াতুল্লাহ নুরী হামাদানীর মতে, যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তাদের জন্য যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত) হিসেবে ৮০০০ তুমান ধার্য করা হয়েছে এবং যাদের প্রধান খাদ্য ভাত তাদেরকে তিন কেজি চাল অথবা সমপরিমাণ মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
অবশ্য, আয়াতুল্লাহ নুরী হামাদানীর মতে, অধিকাংশের খাদ্যের প্রকার (অর্থাৎ রুটি অথবা চাল) মানদণ্ড নয়। যদি কেহ তিন কেজি গম বা আটার মূল্য পরিশোধ করে তাহলে কোন অসুবিধা নেই।
এছাড়াও যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের জন্য রোজার কাফফারা ২০০০ তুমান এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের রোজার কাফফারা একলক্ষ বিশ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে।

আয়াতুল্লাহ আলাভী গোরগানী
আয়াতুল্লাহ আলাভী গোরগানীর দপ্তর ঘোষণা করেছে, যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তারা রোজার কাফফারা হিসেবে ২০০০ তুমান পরিশোধ করবে।
এছাড়াও ফিতরের যাকাত জন্য যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তাদের ২০০০ তুমান এবং যাদের প্রধান খাদ্য ভাত তাদের তিন কিলোগ্রাম চাল অথবা সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

আয়াতুল্লাহ শোবেইরী যানযানী
যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তাদেরকে ফিতরের যাকাতের জন্য ৮ হাজার তুমান পরিশোধ করতে হবে।
যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তারা ৯০০ গ্রাম গম কোন গরীব ব্যক্তিকে দেবে। যদি কেউ ৯০০ গ্রাম গমের মূল্য সম্পর্কে নিশ্চিত থাকে তাহলে সে সেই মূল্য কোন গরীব অথবা দুস্থ ব্যক্তিকে দেবে এবং গরীব ব্যক্তি তার উকিল হয়ে সেই অর্থ দিয়ে কোন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে খাবে।
এছাড়াও যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের জন্য রোজার কাফফারা ২০০০ তুমান এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের রোজার কাফফারা একলক্ষ বিশ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে।
যে ব্যক্তি ঈদের নামাজ আদায় করবে সে ঈদের নামাজ আদায়ের পূর্বে ফিতরা বের করে পরিশোধ করবে অথবা সেই অর্থ আলাদা করে রাখবে। আর যদি ঈদের নামাজ আদায় না করে তাহলে ঈদের দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত ফিতরা বের করে পরিশোধ করবে অথবা সেই অর্থ আলাদা করে রাখবে।

আয়াতুল্লাহ জাওয়াদ আমেলী
যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তাদেরকে ৮০০০ তুমান পরিশোধ করতে হবে এবং তাদের প্রধান খাদ্য ভাত তাদেরকে ৩ কিলোগ্রাম চাল দিতে হবে।
এছাড়াও যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের জন্য রোজার কাফফারা ২৫০০ তুমান এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের রোজার কাফফারা একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে। আর হানাছ কসমের জন্য ২৫ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে।

আয়াতুল্লাহ সোবহানি
যাদের প্রধান খাদ্য রুটি তাদেরকে ৮০০০ তুমান পরিশোধ করতে হবে এবং তাদের প্রধান খাদ্য ভাত তাদেরকে ৩ কিলোগ্রাম চাল দিতে হবে।
এছাড়াও যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের জন্য রোজার কাফফারা ২৫০০ তুমান এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের রোজার কাফফারা একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে।

আয়াতুল্লাহ ওয়াহিদ খোরসানী
প্রত্যেক ব্যক্তির সর্বনিম্ন ফিতরা ৭৫০০ তুমান (যাদের প্রধান খাদ্য রুটি) ধার্য করা হয়েছে। এছাড়াও যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের জন্য রোজার কাফফারা ২০০০ তুমান এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের রোজার কাফফারা একলক্ষ বিশ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে।

আয়াতুল্লাহ সাফী গুলপায়ীগনি
প্রত্যেক ব্যক্তির সর্বনিম্ন ফিতরা ৭০০০ তুমান (যাদের প্রধান খাদ্য রুটি) ধার্য করা হয়েছে। এছাড়াও যারা অনিচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের জন্য রোজার কাফফারা ২০০০ তুমান এবং যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রোজা ভেঙ্গেছে অথবা রাখেনি তাদের রোজার কাফফারা একলক্ষ বিশ হাজার তুমান ধার্য করা হয়েছে।
ঈদুল ফিতরের পূর্বের দিনের সন্ধ্যার পর থেকে যাকাতুল ফিতর (ফিতরের যাকাত) ওয়াজিব বা ফরজ হয়। মারাজেয়ে তাকলিদগণ ঈদের নামাজের পর ফিতরা প্রদান জায়েজ বা বৈধ মনে করেন না। তবে যদি কেউ ঈদের নামাজ আদায় না করে তাহলে ঈদের দিনের দুপুরের মধ্যে তার পরিশোধ করতে হবে।
যদি কোন ব্যক্তি যাকাতুল ফিতর পরিশোধ করার জন্য গরিব কোন ব্যক্তিকে খুঁজে না পাই, তাহলে ফিতরার নিয়তে ঐ অর্থ আলাদা ভাবে রাখতে হবে এবং যখন কোন গরিব ব্যক্তিকে খুঁজে পাবে তখন যাকাতুল ফিতরের নিয়তে তা পরিশোধ করতে হবে।
প্রত্যেক স্বয়ংসম্পূর্ণ ব্যক্তির জন্য যাকাতুল ফিতরা পরিশোধ করা ওয়াজিব বা ফরজ। যদি কোন ব্যক্তি সময়মতো যাকাতুল ফিতর পরিশোধ না করে অথবা আলাদা করে না রাখে তাহলে পরবর্তীতে আদা ও ক্বাযার নিয়ত ব্যতীত (ক্বুরবাতন ইলাল্লাহ'র নিয়তে) পরিশোধ করতে হবে।
উল্লেখ্য, সম্পূরকভাবে বলা যেতে পারে যেসকল পরিবার বা ব্যক্তির প্রধান খাদ্য রুটি তাদেরকে ৩ কিলোগ্রাম গম অথবা ৩ কিলোগ্রাম গমের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে এবং যাদের প্রধান খাদ্য ভাত তাদেরকে ৩ কিলোগ্রাম চাল অথবা ৩ কিলোগ্রাম চালের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে।
iqna

captcha