IQNA

‘ফাতেমার বিবাহের বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত‘

20:42 - August 14, 2018
সংবাদ: 2606464
একদিকে হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর অতুলনীয় ফজিলতপূর্ণ বৈশিষ্ট্য এবং অপর দিকে রাসূল (সা:)-এর সাথে সম্পৃক্ততা ও বংশীয় শ্রেষ্ঠতার কারণে রাসূল (সা:)-এর অনেক খ্যাতনামা সাহাবীগণ তাঁর সাথে বিবাহের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তারা সবাই না-সূচক জবাব পান। লক্ষণীয় হচ্ছে রাসূল (সা:) তাদের প্রস্তাবের জবাবে বলতেন, “ফাতেমার (বিবাহের) বিষয়টি আল্লাহর হাতে ন্যস্ত।”

 
বার্তা সংস্থা ইকনা: সবচেয়ে বেশি বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে আব্দুর রহমান ইবনে আওফের প্রস্তাব, যে ছিল বিপুল ঐশ্বর্যের মালিক। আর তৎকালীন আরবের প্রথা ছিল সব কিছু পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা এবং মোটা অংকের মাহরিয়াকে (দেন মোহর) নারীর সম্মানের মাপকাঠি এবং স্বামীর বিশেষ ব্যক্তিত্বের প্রমাণ বলে মনে করা হত। সে রাসূল (সা:)-এর নিকট পৌঁছে আরজ করল, “যদি হযরত ফাতেমা (আঃ) কে আমার সাথে বিয়ে দেন, তবে মিশরীয় দামী বস্ত্রে বোঝইকৃত একশত উঠ এবং দশ হাজার দিনার মাহরিয়া প্রদান করব। রাসূল (সা:) তার এ আপত্তিকর প্রস্তাবে রাগান্বিত হন এবং এক মুষ্টি নুড়ি পাথর নিয়ে তার দিকে এগিয়ে যান এবং বলেন, “তুমি ধারণা করেছ আমি অর্থ- সম্পদের লোভী এবং আমার সম্মুখে তোমার ঐশ্বর্যের দম্ভ প্রদর্শন করছ।”

হ্যাঁ , হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর বিবাহের প্রস্তাব তো ইসলামের মহান আদর্শসমূহকে সুনির্দিষ্ট করবে। সাথে সাথে জাহেলী যুগের প্রথাগুলোর মূলোৎপাটন এবং ইসলামী মূল্যবোধের সুপ্রতিষ্ঠা করবে। মদিনার জনগণ যখন এসব আলোচনাতে মশগুল। তখন চারিদিকে এ প্রতিধ্বনি শোনা গেল যে, রাসূল (সা:) তাঁর কন্যাকে একমাত্র আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ)-এর সাথে বিবাহ দিবেন। আলী (আঃ)-এর কোন ধন সম্পদ ছিল না এবং আরবের জাহেলী প্রথানুযায়ী ঐশ্বর্যের প্রাচুর্যও তাঁর ছিল না। কিন্তু তাঁর সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে ছিল ঈমান ও ইসলামী মূল্যবোধ।

যদি একটু অনুসন্ধান করা হয় তবে দেখা যাবে যে, এ ঐতিহাসিক বিবাহ সম্পর্কিত রাসূল (সা:)-এর সিদ্ধান্ত ছিল ওহি নির্দেশিত। কেননা তিনি স্বয়ং বলেন, “আল্লাহর ফেরেশতা আমার নিকট এসে বলল: আল্লাহ আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে, তিনি আপনার কন্যা হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)কে আসমানে আলী ইবনে আবু তালিবের সাথে বিবাহ দিয়েছেন। সুতরাং, আপনিও তাকে জমিনে (পৃথিবীতে) আলীর সাথে বিবাহ দিন।”
যখন আমিনুল মু’মিনীন হযরত আলী (আঃ) হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তখন লজ্জায় তাঁর চেহারা মোবারক গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছিল। রাসূল (সা:) এরূপ অবস্থা দেখে মুচকি হেসে বলেন, “ আমার নিকট কি কাজে এসেছ? ” কিন্তু আলী (আঃ) রাসূল (সা:)-এর ফজিলতপূর্ণ গাম্ভীর্যের কারণে নিজের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করতে পারলেন না বরং নীরব থাকলেন। রাসূল (সা:) যেহেতু আলী (আঃ)-এর অন্তরের ইচ্ছা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, সেহেতু বলেন, “ ফাতেমার প্রস্তাব নিয়ে এসেছ।” আলী (আঃ) বলেন: “ জী, এ উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছি।”

রাসূল (সা:) বলেন, “ হে আলী! তোমার পূর্বেও অনেকে ফাতেমার প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। কিন্তু যখনই আমি তাদের প্রস্তাব ফাতেমার (আঃ)-এর কাছে উপস্থাপন করেছি , সে না-সূচক জবাব দিয়েছে। এখন তোমার বিষয়টিও তাঁর কাছে তুলে ধরব।” এটা সত্য যে এ বিবাহটি হচ্ছে একটি আসমানী বিষয় এবং তা সম্পন্ন অবশ্যম্ভবই। কিন্তু বিশেষত: হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব এবং সাধারণভাবে সহধর্মী নির্বাচনে নারীদের মতামতের গুরুত্ব প্রমাণের জন্য রাসূল (সা:) হযরত ফাতেমা (আঃ)-এর সাথে পরামর্শ ব্যতিরেকে কোন পদক্ষেপ নেননি। যখন রাসূল (সা:) আমিরূল মু'মিনীন আলী (আঃ)-এর ফজিলত নিজ কন্যার নিকট বর্ণনা করে বলেন, “ আমি চাই তোমাকে আল্লাহর সর্বোত্তম সৃষ্টির সাথে বিবাহ দিতে। এ সম্পর্কে তোমার মতামত কি? ” হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ) অত্যন্ত লজ্জিত হয়ে মাথা নত করেন এবং নীরব থাকেন তখন রাসূল (সা:) মাথা তুললেন এবং প্রসিদ্ধ বাক্যটি যা বিবাহ সংক্রান্ত ব্যাপারে ফকীহগণের নিকট অত্যন্ত সুপরিচিত তা উল্লেখ করেন,

“ আল্লাহু আকবার! তার (ফাতেমার) নীরবতা হচ্ছে সম্মতির প্রমাণ।” অতঃপর রাসূল (সা:) তাদের উভয়ের বিবাহের আকদ্ পাঠ করেন।"

হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর বিবাহের দেনমোহর
এখন আমরা দেখব যে, হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর বিবাহের দেনমোহর কী ছিল? নিঃসন্দেহে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সাথে নারীকুলের শিরোমণি নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)-এর বিবাহ সার্বিক বিবেচনায় দৃষ্টান্তনীয় হওয়া বাঞ্ছনীয় । সকল যুগ ও শতাব্দীতে তা হবে এক অনুপম আদর্শ । অতএব রাসূল (সা:) আলী (আঃ)-এর দিকে তাকিয়ে বললেন,“এমন কিছু কী আছে যা দ্বারা তোমার স্ত্রীর দেন মোহর প্রদান করবে ? ” আলী (আঃ) বলেন, “ আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি উৎসর্গিত হোক। আপনি আমার জীবন-যাপন সম্পর্কে ভালভাবেই অবগত আছেন। আমার নিকট একটি তরবারি, একটি ঢাল ও একটি উট ছাড়া আর কিছুই নেই।”

রাসূল (সা:) বলেন, “ ঠিক আছে, ইসলামের শত্রুদের সাথে যুদ্ধের সময় তোমার তরবারি প্রয়োজন হবে। তাছাড়া উঠটি দিয়ে খেজুর বাগানে পানি দিতে এবং সফরের সময়ও তোমার উঠের প্রয়োজন হবে। অতএব, অবশিষ্ট থাকে শুধুমাত্র ঢালটি, আর তা দিয়েই তোমার স্ত্রীর দেন মোহর প্রদান করবে। আমি আমার কন্যা ফাতেমাকে কেবলমাত্র উক্ত ঢালের বিনিময়ে তোমার সাথে বিবাহ দিলাম।”

অবশ্য ইতিহাসে এ ঢালটির সর্বোচ্চ যে মূল্যটি উল্লেখ করেছে তা হচ্ছে পাঁচ শত দিরহাম। অপর দিকে হাদীসে উল্লেখ আছে যে, হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ) তাঁর পিতার নিকট অনুরোধ জানান স্বীয় দেনমোহরকে কিয়ামতের দিন উম্মতের গুনাহকারীদের শাফায়াতের জন্য নির্ধারণ করা হোক। তাঁর এ আবেদন কবুল করা হয় এবং হযরত জিবরাঈল (আঃ) আসমান থেকে অবতীর্ণ হয়ে রাসূল (সা:)কে এ সুসংবাদ প্রদান করেন।

হ্যাঁ, এভাবে ভ্রান্ত রীতি-পদ্ধতির অবসান ঘটিয়ে তদস্থলে প্রকৃত সঠিক রীতি-পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হচ্ছে ঈমানদার নর-নারীদের রীতিনীতি। আর এমনই ছিল মানবজাতির প্রকৃত নেতাদের জীবন পদ্ধতি।

captcha