IQNA

কানাডায় মুসলিম নারীদের সম্পর্কে ভুল ধারণা ও হিজাবী স্কুলশিক্ষিকা নাদিয়া নাকভীর গল্প

20:35 - December 17, 2018
সংবাদ: 2607568
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং কুইবেক প্রদেশের বৃহত্তম শহর মন্ট্রিয়ালের মুসলিম নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে থাকেন। তাদের কেউ শিক্ষিকা,সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ,সমাজ কর্মী অথবা পুলিশ অফিসার হয়ে থাকেন। কিন্তু তাদের সকলের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সাধারণ তা হচ্ছে তারা সকলেই তাদের হিজাব নিয়ে গর্ববোধ করেন। তাদের সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা হয়ে থাকে কিন্তু সাধারণত কোনো আলোচনায় তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হয় না।

বার্তা সংস্থা ইকনা: নাদিয়া নাকভী নামের ৩৬ বছর বয়সী কানাডার মন্ট্রিয়ালের উপশহর বেকনসফিল্ডে বসবাস করেন এবং স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে তিনি বিজ্ঞান শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত আছেন:-

কেন তিনি হিজাব পরিধান করেন:

নাদিয়া নাকভীর নিজের ভাষায়- ‘আমরা যারা হিজাব পরিধান করি তাদের কাছে এ প্রশ্নটি সচরাচার করা হয়। আর আমরা যা করি তা হচ্ছে আগে থেকে তৈরি করা একটি উত্তর দিয়ে থাকি। এর ফলে আমাদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে আমি তেমনটি মনে করি না। আমার বয়সের ১৫ বছর থেকেই আমি হিজাব পরিধান করে থাকি।

প্রথমত হিজাব পরিধান করি কারণ এটি আমার ধর্মের একটি অংশ। দ্বিতীয় যে কারণে আমি হিজাব পরিধান করি তা হচ্ছে, এটি আমার জন্য একটি আবশ্যকীয় বিষয়। এটিই ঠিক করে দেয় কিভাবে আমি হাঁটি,কিভাবে কথা বলি, কিভাবে চিন্তা করি, কিভাবে অর্থ খরচ করি এবং অন্যের সাথে আমার সম্পর্ক ঠিক কী রকম তা এর মাধ্যমে নির্ধারিত হয়ে যায়।

শালীনতা আমার নিকটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার কারণ এটি আমার জীবন পরিবেষ্টন করে আছে।’

হিজাব পরিধান করার কারণে একজন শিক্ষিকা হিসেবে তিনি কতটা প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হন:

নাদিয়া নাকভী বলেন- ‘লোকজন যখন আমার দিকে তাকায়,তখন তারা দ্বিতীয় বার এর পুনরাবৃত্তি করে। আমাদের কনভোকেশন অনুষ্ঠানে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি এসেছিলেন, তাদের একজন আমার দিকে তাকিয়েছিলেন এবং তিনি দ্বিতীয় বার তা করলেন। পরবর্তীতে তিনি অন্যদের নিকটে গেলেন এবং আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেদের রোব (মহিলাদের হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখে একধরনের পোশাক) পরিহিত অবস্থার সাথে মিলিয়ে আমার হিজাব নিয়ে অস্পষ্ট স্বরে কথা বলা শুরু করেন।

আর আমি আমার সহকর্মীদের দিকে ফিরে বললাম,তারা আমাদের বিশিষ্টজন এবং তারা কতটা সম্মানী যখন তাদেরকে আমার দিকে দ্বিতীয় বার তাকাতে হল। তারা কি এর পূর্বে কখনো একজন হিজাব পরিহিত মুসলিম নারীকে দেখে নি? আর কুইবেকে এটাই হল সমস্যা কারণ এখানে হিজাব পরিহিতদের তেমন একটা দেখা যায় না।’

তার শিক্ষার্থীরা তাকে কিভাবে দেখে:

‘আমি যখন শিক্ষকতা শুরু করেছিলাম তখন আমি নিজেকে সবসময় এ বিষয়টি বলতাম যে,তাদেরকে দয়ার মনোভাব দিয়ে ঘায়েল কর। শিশুরা মানুষ দেখতে অভ্যস্ত তারা ধর্ম দেখে না। আমার শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগের বয়স ১৪ তবে কারো কারো বয়স ১৩ বছরের মত হবে এবং তারা সবাই খুবই ছোট বয়সের। সুতরাং মুসলিমদের সম্পর্কে তারা যা শুনেছে সে মতে তারা সকল মুসলিম সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে থাকে।

কারণ ইংলিশ প্রথায় তারা খুব কম সংখ্যক মুসলিমকে দেখে থাকে। কিন্তু তাদেরকে দ্বিতীয় বার আমার দিকে তাকাতে হয় না কারণ বিদ্যালয়ে আমার সুনাম এবং দয়ার মনোভাবের কথা সকলেই জানে। আর আমার সকল শিক্ষার্থীই জানে আমি কে। আমি এমনটি পছন্দ করি কারণ এর মাধ্যমে আমি নিজেকে তাদের একজন মনে করতে পারি।’

কেন মুসলিম নারীদের হিজাব পরিধান করতে হয়,এমন ভুল ধারণা কিভাবে দূর করা যেতে পারে:

‘আমি সচরাচার বলে থাকি যে,আমরা কোনো গাধা নই। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত সমূহ হালকাভাবে নেই না। আমাদেরকে জোর করে হিজাব পরিধান করানো হয় এমনটি খুব কমই ঘটে।

যেসব লোক বলে যে, মুসলিম নারীগণ হিজাব পরিধান করে কারণ তাদেরকে তা জোর করে পরিধান করানো হয়,ঠিক আছে আমাদের জোর করে পরিধান করানো হয়,আর এই জোর আমি আমার নিজেকেই করি।

আমি সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই হিজাব পরিধান করে থাকি। আমি এর পরে যা উত্তর দিই তা হচ্ছে আমি নিজেকে জানার জন্য হিজাব পরিধান করে থাকি। আমি এমন কোনো নারী নই যাকে জোর করে কিছু করানো যাবে এবং আমি আমার সহকর্মীদের মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্টবাদী নারী।’- নাদিয়া নাকভী এমনটি বলেন। আরটিএনএন

captcha