IQNA

এঞ্জেলিক খ্রিস্টান থেকে আয়েশা লেমু যেভাবে মহীয়সী নারী ও ইসলামি শিক্ষার পথিকৃৎ

18:31 - February 08, 2019
সংবাদ: 2607898
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আয়েশা লেমু জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ব্রিডজেট আয়েশা হানির ঘরে এবং তিনি এঞ্জেলিক খ্রিস্টান হিসেবে বেড়ে উঠেছিলেন। তিনি ৭৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। যদিও তিনি খ্রিষ্টান হিসেবে শৈশবে বড় হয়েছিলেন কিন্তু তিনি পরবর্তীতে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং একজন নাইজেরিয়ান শেখের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

বার্তা সংস্থা ইকনা: ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পরে তিনি একজন বিখ্যাত শিক্ষাবিদ হয়ে উঠেন এবং নারী শিক্ষার জন্য ‘Federation of Muslim Women Associations in Nigeria (Fomwan)’ নামের সংগঠন গঠন করেন।

২০০২ সালে দেয়া এক বক্তৃতায় তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, ‘তিনি ১৯৪০ সালের অক্টোবর মাসের ১৪ তারিখে জন্ম গ্রহণ করেন।’ তিনি বলেন, ‘আমি চার্চ অব ইংল্যান্ডের সাহচর্যে থেকে বড় হই কিন্তু কখনো এর শিক্ষাসমূহ বিশ্বাস করতে পারতাম না। আমি সত্য খুঁজে নেয়ার জন্য তাগিদ অনুভব করতাম।’

সত্য খুঁজে নেয়া সম্পর্কে তা অদম্য ইচ্ছার কারণে তিনি তার ১৪ বছর বয়সে বৌদ্ধধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা করতে থাকেন। কিন্তু তার ২০ বছর বয়সের সময় তিনি কিছুটা আধ্যাত্মিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকেন। তার ভাষায়- ‘সেসময় আমার মনে হত আমি কোনো কিছুতেই বিশ্বাস করি না, এমনকি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব সম্পর্কেও আমি অবিশ্বাস করতে শুরু করি।’

এর কিছুদিন পরে তার সাথে কিছু মুসলিম শিক্ষার্থীর পরিচয় ঘটে, যাদের কাছ থেকে তিনি ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারেন এবং সেইসকল শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে তিনি ইসলাম সম্পর্কে তার ভুল ধারণাসমূহ দূর করার জন্য পবিত্র কুরআনের একটি অনুদিত কপি সংগ্রহ করেন।

আয়েশা লেমু এ-সম্পর্কে বলেন- ‘আমি ইসলাম সম্পর্কে খুব কমই জানতাম এবং একে আমার গ্রহণযোগ্য ধর্ম হিসেবে একেবারেই মূল্যায়ন করাতাম না, কারণ আমি ইসলাম সম্পর্কে খ্রিস্টান ধর্মের চাইতেও বেশী নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতাম।’

তথাপি যখন থেকে তিনি পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করা শুরু করেছিলেন, তার ভাষায়- ‘আমার মনে হয়েছিল আমি সত্য খুঁজে পাচ্ছি। এটি শুধুমাত্র ১৪শত বৎসর পূর্বের কোনো মরুবাসী গোত্র-পতিকে সম্বোধন করে লিখা কোনো বই নয়। এটি এমনকি এই বিশ শতকের আমাকে উদ্দেশ্য করে লিখা কোনো বই বিজ্ঞানের যুগে যার বসবাস।’

এর কয়েক সপ্তাহ পরে তিনি লন্ডনের রিজেন্ট’স পার্ক মসজিদে সফর করেন এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তিনি এর পরে লন্ডনের ‘SOAS’ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘Islamic Society’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেন এবং সংগঠনটির প্রথম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

‘SOAS’ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করার পরে তিনি ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং এ কাজ করতে গিয়েই তার সাথে তার ভবিষ্যৎ স্বামী শেখ আহমেদ লেমুর সাথে পরিচয় ঘটে।

১৯৬৬ সালে আয়েশা লেমু নাইজেরিয়ার কানো নামক স্থানে বসবাস করতে চলে আসেন এবং সেখানকার একটি স্থানীয় বিদ্যালয়ে পাঠ দান করা শুরু করেন। তার স্বামী শেখ আহমেদ লেমু বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি এবং আহমেদ লেমু ১৯৬৮ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

১৯৭৬ সালে তিনি তার স্বামী শেখ আহমেদ লেমুর সাথে নব গঠিত নাইজার রাজ্যে বসবাস শুরু করেন এবং তিনি সেখানকার মিন্না শহরের ‘Women Teachers' College’ এ শিক্ষকতা শুরু করেন। এবং তার স্বামী নাইজারের শরিয়া আদালতের আপীল বিভাগের প্রধান বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন।

আয়েশা লেমু যখন নাইজেরিয়ায় প্রথম এসেছিলেন তখন তিনি সেখানকার বিদ্যালয়সমূহে ইসলাম সম্পর্কে দেয়া শিক্ষা পদ্ধতি দেখে হতবম্ব হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘সেখানে শুধুমাত্র কিভাবে প্রার্থনা করতে হবে, কিভাবে উপবাস থাকতে হবে ইত্যাদি শেখানো হত। কিন্তু কেউই শিক্ষার্থীদের এ কথা বলতো না যে, কেন তারা প্রার্থনা করবে বা উপবাস থাকবে এমনকি কেনই বা তারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করবে।’

১৯৬৯ সালে আয়েশা লেমু এবং তার স্বামী যৌথভাবে ‘Islamic Education Trust (IET)’ নামে একটি দাতব্য সংস্থা গড়ে তুলেন যার মাধ্যমে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দেয়া শুরু হয় এবং ১৯৭৮ সালে তিনি সংস্থাটির পরিচালক নিযুক্ত হন। একই সাথে তিনি নাইজেরিয়ার বিদ্যালয় সমূহের জন্য ইসলামিক নীতিমালা গঠন বিষয়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৫ সালে আয়েশা লেমু নাইজেরিয়ার মুসলিম নারীদের মতামতকে আরো জোরালো করার জন্য ‘Fomwan’ নামের সংগঠন গড়ে তুলেন এবং তিনি সংগঠনটির প্রথম জাতীয় নেতা হিসেবে নির্বাচিত হন। সংগঠনটির শুরু থেকে আজ অবধি নাইজেরিয়ার মুসলিম নারীদের উপযুক্ত শিক্ষা প্রদানে কাজ করে চলেছে।

আয়েশা লেমু অন্তত ৩০টি বই লিখেছেন যার বেশির ভাগই জুনিয়র ইসলামিক অধ্যয়নমূলক বই এবং এগুলো নাইজেরিয়ার বিদ্যালয়সমূহে পাঠ্য আকারে পড়ানো হয়। ২০০০ সালে তিনি ‘Order of Nigeria’ এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ২০১৯ সালের ৫ জানুয়ারি এই মহীয়সী নারী জীবনাবসান ঘটে।: দ্যা টেলিগ্রাফ

captcha