IQNA

উজবেকিস্তানের শ্রেণীকক্ষে হিজাব নিষিদ্ধ, শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ের গল্প

19:08 - April 20, 2019
সংবাদ: 2608381
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: উজবেকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মত মুসলিম নারীদের ইসলামিক পোশাক নিয়ে দেশটির উচ্চ আদালতে একটি মামলার শুনানি হয়েছে। দেশটির উচ্চ আদলতে চলমান এই মামলায় ‘Tashkent International Islamic Academy’ এবং দেশটির একজন তরুণ নারী পক্ষে বিপক্ষে তাদের যুক্তি তুলে ধরেছেন।

বার্তা সংস্থা ইকনা: উজবেকিস্তানের ৪৫ বছর বয়সী আবদুভাহোব ইয়াকুবোভ ‘Tashkent International Islamic Academy’ এর বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেছেন। তিনি ‘Tashkent International Islamic Academy’ নামক সগঠনটিতে অধ্যয়নরত তার তরুণী মেয়ের পক্ষে মামলাটি দায়ের করেন।

তিনি বার্তা সংস্থা ইউরএশিয়ানেট কে বলেন, ‘আমি আদলতে আবেদন জানিয়েছি যাতে করে আমার মেয়ের উপর হিজাব পরিধানের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার মেয়ে নোজিমা আবদুখারোভা তার দ্বিতীয় বছরের অধ্যয়ন শুরুর পর থেকে তাকে শ্রেণী কক্ষে হিজাব পরিধান করতে দেয়া হচ্ছে না।’

আবদুভাহোব ইয়াকুবোভ নিজে একজন আইনজীবী এবং তিনি নিজেই এই মামলাটি পরিচালনা করছেন।

Tashkent University of Information Technologies এর উলুগবেক সাফারোভ নামের ২৩ বছর বয়সী একজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘হিজাব নিয়ে চলমান মামলাটি কোথায় গিয়ে পৌঁছে তা দেখার জন্য আমি আগ্রহ নিয়ে বসে আছি। প্রথমবারের মত এমন কিছু ঘটতে চলেছে।’

সাফারোভ সোশ্যাল মাধ্যমে এই মামলাটির বিষয়ে শুনেছেন এবং তিনি নিজে একজন শিক্ষার্থী হয়ে আরেকজন শিক্ষার্থীকে সমর্থন দিতে আদালত প্রাঙ্গণে এসেছিলেন।

বোটির শেরমাতোভ নামের একজন আইনজীবী মস্কো থেকে তাসখন্দে এসেছেন মামলাটির উভয় পক্ষের যুক্তি তর্ক শোনার জন্য।

তিনি বলেন, ‘উজবেকিস্তানের আইনে জনসাধারণের স্থান সমূহে ধর্মীয় পোশাক পরিধান করার শাস্তি হিসেবে হয় জরিমানা করা হয়, না হয় ১৫ দিন যাবত প্রশাসনিকভাবে আটক রাখা হয়। এ দেশে শুধুমাত্র ধর্ম গুরুগণ ধর্মীয় পোশাক পরিধান করতে পারেন।’

আবদুভাহোব ইয়াকুবোভ আদালতে যুক্তি দেন যে, ‘Tashkent International Islamic Academy’ ধর্মীয় পোশাকের অবমাননা করেছে। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে হিজাব নিষিদ্ধ করার কোনো আইনগত বৈধতা নেই।

একই সময়ে ‘Tashkent International Islamic Academy’ এর পক্ষে লুতফুল্লো আবদুকাদইয়োরভ নামের একজন আইনজীবী আদলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য উজবেকিস্তানের পোশাক নীতিমালা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘Tashkent International Islamic Academy তে মেয়েদের জন্য শুধু মাত্র হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয় নি, একই সাথে এই নীতি ছোট স্কার্ট এবং জিন্সের উপর প্রযোজ্য। দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেয়া পোশাকে শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠানে আসতে বাধ্য।’

তবে উভয় পক্ষের শুনানির আদালত ‘Tashkent International Islamic Academy’ এর পক্ষে রায় প্রদান করেন এবং যুক্তি দেন যে, প্রতিষ্ঠানটি পোশাক নীতিমালা অনুসরণ করে কোনো আইন ভঙ্গ করে নি।

এদিকে আবদুভাহোব ইয়াকুবোভ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উজবেকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে আপীল দায়ের করেছেন এবং তিনি আশা করেন যে, সুপ্রিম কোর্ট থেকে তিনি আশানুরূপ রায় পাবেন।

ইসলামিক নাম থাকলেও ‘Tashkent International Islamic Academy’ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান, যদিও দেশটির সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের ধর্মীয় শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছে বলে প্রচারণা চালায়।

নোজিমা আবদুখারোভা এই ক্ষেত্রে একা নন
লুউজা মুমিনজোনোভা নামের ১৯ বছর বয়সী নারী শিক্ষার্থী ‘Tashkent International Islamic Academy’ তে অধ্যয়ন করার জন্য ভর্তি হন।

তিনি যখন প্রথম দিন তার অধ্যয়ন কক্ষে প্রবেশ করতে যান তাকে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি।

তিনি বলেন, ‘প্রবেশ দ্বারে একটি বিষয় লিখা ছিল যে, নারীরা শুধুমাত্র কালো স্কার্ট এবং সাদা জ্যাকেট পরিধান করতে পারবেন। আমাকে এমনটি পরিধান করতে বলা হয়েছিল এবং আমার হিজাব খুলে ফেলতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি তাদের কথায় কর্ণপাত করি নি কারণ আমি এটি আমার ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরোধী।’

এর পরের কয়েকটি ক্লাসে যোগদান না করায় তাকে প্রতিষ্ঠানটি থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল।

লুউজা মুমিনজোনোভা জানান তিনিও নোজিমা আবদুখারোভা এর মত চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন কিন্তু আদালত তার মামলাটি খারিজ করে দিয়েছিল এবং তাকে বহিষ্কার করার বিষয়টিকে আইন সম্মত কাজ বলে অভিহিত করেছিল।

তিনি বলেন, ‘যদি উজবেকিস্তানের আদালত আমার অধিকার ফিরিয়ে দিতে না পারে তবে আমি জাতিসংঘের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিভাগে আবেদন জানাবো।’

উজবেকিস্তানে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞার এমন নজির প্রথম নয়। ২০১৬ সালে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ইসলাম খারিমোভের মৃত্যুর পরে অনেকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে।

গত বছর সরকার বিদ্যালয় সমূহের জন্য পোশাক নীতিমালা প্রকাশ করেছিল যাতে মাথা ঢেকে রাখে এমন স্কার্ফ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।

রাভাশান নাজারোভ নামের একজন বামপন্থী ঐতিহাসিক বলেন, ইসলামিক একাডেমী নিজেরা সিদ্ধান্ত নিবে তাদের শিক্ষার্থীরা কি পরিধান করতে পারবে আর কি পরিধান করতে পারবে না।

তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে উজবেকিস্তান একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। এখানে ধর্ম এবং রাষ্ট্র দুটো আলাদা। সুতরাং হিজাব সম্পর্কে দেয়া আদালতের রায় একটি বৈধ আইনি নজির।’ ইউরাসিয়ানেট ডট কম।

captcha