IQNA

ইরানে ইসলামী বিপ্লবের গৌরবময় অগ্রযাত্রার ৪১ বছর (পর্ব ছয়)

0:02 - February 07, 2020
সংবাদ: 2610185
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানে ইসলামী বিপ্লব ৪১ তম বছরে পদার্পণ করেছে। এই মহাবিপ্লবের অগ্রযাত্রা এখনও বিশ্বের গবেষক, বিশ্লেষক, চিন্তাবিদ ও পর্যবেক্ষকদের কাছে অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয়।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: এই বিপ্লবের বিপুল ও বহুমাত্রিক সাফল্যকে বড় ধরনের অলৌকিক সাফল্যও বলা যায়। কারণ যে বিপুল বাধা, যুদ্ধ, সংঘাত, অবরোধ আর নিষেধাজ্ঞা এবং বিরামহীন বিষাক্ত প্রচারণার শিকার হয়েছে ইসলামী ইরান ও তার মহান বিপ্লব তা হাজার বছরের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এতসব বাধা, নিষেধাজ্ঞা ও প্রচারণার শতভাগের এক ভাগও যদি বিশ্বের অন্য কোনো দেশের সরকার বা সেখানকার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হত তাহলে বহু আগেই সেই সরকার ও রাষ্ট্র-ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ত এবং নতজানু হত শত্রুদের কাছে।

কিন্তু ইরানের ইসলামী বিপ্লব ও বিপ্লবী ইরানি জাতি অর্থনৈতিক খাতসহ কোনো কোনো খাতে বাইরের শত্রুর নজিরবিহীন বাধা আর নিষেধাজ্ঞার কারণে বেশ অসুবিধা ও হয়রানির শিকার হলেও –এসব কিছুই ইসলামী ইরানের দুর্বার অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারেনি মোটেও। বরং এসব বাধা ও নিষেধাজ্ঞা ইরানের জন্য শাপে বরে পরিণত হচ্ছে এবং যেসব খাতেই বাধা আসছে ইসলামী ইরান সেইসব খাতেই হয়ে উঠছে স্বয়ংসম্পূর্ণ বা প্রায় পুরোপুরি স্বনির্ভর।

উল্লেখ্য, পাশ্চাত্যের ব্যাংকিং নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের তেল-রপ্তানির আয় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হলেও বা রপ্তানি আয়ের অর্থের প্রবাহ দেশে ফেরত আসতে দেরি হলেও ইরান পণ্যের বিনিময়ে পণ্য প্রদান ব্যবস্থা বা বার্টার সিস্টেমসহ নানা ধরনের বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে এই সমস্যা সমাধান করছে। এ ছাড়াও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যসহ তেল-বহির্ভূত নানা পণ্যের রপ্তানি বাড়িয়ে দিয়ে ইসলামী ইরান তার অর্থনীতিকে অপরিশোধিত জ্বালানী-তেলের নির্ভরতা থেকে অনেকাংশেই বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে। আগামী অল্প কিছুকালের মধ্যেই ইরানের অর্থনীতির সিংহভাগই জ্বালানী তেল-বিক্রির নির্ভরতা থেকে মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এভাবে পাশ্চাত্যের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের অর্থনীতি হয়ে উঠছে বহুমুখী, বিচিত্রময় ও স্বনির্ভর।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি, কূটনীতি, সমরনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং অন্য অনেক খাতে বিপ্লবী ইরানের বিস্ময়কর সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ হল এই বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার সময়োপযোগী, বিপ্লবী ও ইসলাম-সম্মত দিক-নির্দেশনা এবং জনগণ ও রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এই মহান নেতার প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনির আহ্বানে যেমন ইরানের মুসলিম জাতির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই জীবনকে বিপন্ন করতে প্রস্তুত ছিল সব সময় তেমনি এখনও ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বর্তমান কাণ্ডারি আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির ডাকে সংগ্রামী এই জাতির বেশিরভাগই একই ধরনের ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।

ইমাম খোমেনির আহ্বানে ইরানি জাতি দীর্ঘ ৮ বছর ধরে প্রত্যক্ষ জিহাদে অংশ নিয়েছে। আর এখনও ইরানি জাতি খোমেনির স্থলাভিষিক্ত সর্বোচ্চ নেতার আহ্বানে অর্থনৈতিক জিহাদ ও সাংস্কৃতিক জিহাদে অংশ নিয়ে বছরের পর বছর ধরে নানা ধরনের ত্যাগ ও কুরবানির নজির দেখাতে সক্ষম হয়েছে।

ইরানি যুব সমাজের এক উল্লেখযোগ্য অংশ ইরাক ও সিরিয়ায় তাকফিরি সন্ত্রাস-বিরোধী জিহাদে অংশ নিয়ে ইসলাম ও মাতৃভূমির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তাকে সুদৃঢ় করেছে। তাদের অনেকেই ছিলেন শহীদ হওয়ার জন্য ব্যাকুল এবং শেষ পর্যন্ত সেই মহান মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। শাহাদাতের এই সংস্কৃতি ইরানি যুব সমাজ ও ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত সশস্ত্র বাহিনীর এক বড় অংশের মধ্যেই অঙ্গাঙ্গীভাবে মিশে আছে বা বদ্ধমূল হয়ে আছে। কারবালা ও মহান আশুরার ত্যাগের সংস্কৃতি ইসলামী ইরানে যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়সহ নানা ধরনের চোখ-ধাঁধানো সাফল্যের রহস্য লুকিয়ে আছে এই আশুরা সংস্কৃতির মধ্যেই যার অন্যতম শ্লোগান হল: প্রতিটি দিনই আশুরা ও প্রতিটি ময়দানই কারবালা।

ইরানের ইসলামী বিপ্লবের নানা সাফল্যের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি তথা শাহাদাতের সংস্কৃতি জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে দেশটির নারী সমাজ। ইরানের বিপ্লবী যুবতি নারীদের অনেকেই বিয়ের পর হাতের মেহেদির রং ম্লান না হতেই স্বামীকে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি দিতে অভ্যস্ত ছিলেন এবং সংগ্রামী মায়েদের অনুপ্রেরণা থাকায় যুবক পুত্ররা দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে জিহাদে অংশ নিয়েছেন।

জিহাদের ডাক আসলে ইরানে আজও সেই একই চিত্র দেখা যাবে। মোটকথা শাহাদাত ও জিহাদের প্রতি অসাধারণ আকর্ষণের ক্ষেত্রে ইরানের নারী ও পুরুষ উভয়ই মুসলিম জাতিগুলোর জন্য অনুকরণীয় মডেল বা আদর্শ হিসেবে সম্মান পাওয়ার যোগ্য।

অন্য কথায় ইরানের ইসলামী বিপ্লবের আধ্যাত্মিক অগ্রগতিরই অন্যতম স্বাক্ষর হচ্ছে দেশটিতে শাহাদাতের সংস্কৃতির বিস্তার এবং এর প্রাতিষ্ঠানিকতা। খাঁটি মোহাম্মাদি ইসলাম তথা মহানবীর (সা) আহলে বাইতের ধারায় প্রচারিত ইসলামের কল্যাণেই এইসব অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে ইরানের সংগ্রামী মুসলমানরা। ধর্মীয় নেতৃত্বের প্রতি জনগণের ও বিশেষ করে বিপ্লবী যুব সমাজের অসাধারণ আনুগত্য ইসলামী ইরানকে আরও বড় বড় সাফল্য অর্জনের পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

মহান আল্লাহ ইরানের বিপ্লবী মুসলিম জাতিকে প্রকৃত ইসলাম ও ঈমানের পথে অবিচল রাখুন ইসলামী বিপ্লবের ৪১ তম বিজয়-বার্ষিকীর প্রাক্কালে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে বিশ্বের ইসলাম-প্রেমী ও মুক্তিকামী জনগণের পক্ষ থেকে এই প্রার্থনা জানিয়ে শেষ করছি আজকের এই পর্বের আলোচনা।
সূত্র:parstoday

captcha