IQNA

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গ্র্যান্ড মুজতাহীদের ধর্মীয় ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সুপারিশ

22:40 - February 27, 2020
সংবাদ: 2610316
তেহরান (ইকনা)- আয়াতুল্লাহ সোবহানী, আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি, আয়াতুল্লাহ ওয়াহিদ খোরাসানী এবং আয়াতুল্লাহ শোবেইর যানজানি পৃথক পৃথক বানীতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য মহান আল্লাহর উপর ভরসা এবং ইমামগণের শরণাপন্ন হয়ে ধৈর্য সহকারে স্বাস্থ্য টিপস মান্য করার আহ্বান জানিয়েছেন।

করোনাভাইরাস সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব আয়াতুল্লাহ শোবেইর যানজানি বলেন: এই ভাইরাসের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য সকলকেই স্বাস্থ্যবিধি এবং চিকিৎসকরে পরামর্শ মান্য করতে হবে।


গ্র্যান্ড মুজতাহীদের নিকট করোনাভাইরাস সংক্রান্ত প্রশ্ন ও তার উত্তর নীচে তুলে ধরা হল:


চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত সন্দেহজনিত ব্যক্তি যদি এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ না করে জনসাধারণের মধ্যে প্রবেশ করে তাহলে তার বিধান কী? শরীয়তগত ভাবে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের এই পরামর্শ মান্য করা কী জরুরী? বিশেষত, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ থাকা সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তি ক্লাস, ধর্মীয় ও অ-ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং সমাবেশ বন্ধ করার বিষয়টা সঠিক বলে মনে করছেন না। শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের এধরণের কাজ কী বৈধ?


জবাব আয়াতুল্লাহ শোবেইর যানজানি’র উত্তর:
করোনাভাইরাসের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। এজন্য সকলকেই স্বাস্থ্যবিধি এবং চিকিৎসকরে পরামর্শ মান্য করতে হবে। এই রোগের বিস্তার রোধ করতে কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে এবং এ ব্যাপারে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা আশা করি যে, আমাদের দেশের প্রিয় জনগণ সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর নির্ভর করে এবং ১৪ মাসুমের (আ.) শরণাপন্ন হয়ে এই ভয়ঙ্কর রোগ প্রতিরোধ করতে পারবে।


স্বাস্থ্য পরামর্শ মান্য ও সূরা হামদ পাঠ করা:
উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরে আয়াতুল্লাহ ওয়াহিদ খোরাসানী উদ্বেগজনক হয়ে জনগণের উদ্দেশ্যে বলেছেন: স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশাবলী অনুসরণ করার পাশাপাশি প্রতিদিন আপনাদের হৃদয়ে (বুকে) হাত রাখুন এবং সাতবার সূরা হামদ পড়ুন।
এই মারজায় তাকলীদ আরও সুপারিশ করেছেন: আপনাদের হাতকে হৃদয়ের উপর রেখে প্রতিদিন সকাল ও রাতে সাতবার আয়াতুল কুরসি «وَ هُوَ الْعَلِیُّ الْعَظِیمُ» (ওয়া হুয়াল আলিউল আযীম) পর্যন্ত পাঠ করুন। এছাড়াও তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ ও নির্দেশাবলী পালন করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।


জনগণকে আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখতে হবে
২২শে ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক ভিডিওতে আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন: করোনাভাইরাসের ব্যাপারে জনগণকে ভয় এবং বিচলিত হলে চলবে না। মহান আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে।
তিনি বলেন: সকল বাড়িতে জিয়ারত-এ-আশুরা এবং হাদীস-এ-ক্বিসা পাঠ করা উত্তম হবে। কারণ, এরমাধ্যমে আত্মিক শান্তি বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থবিধীসমূহ গুরুত্ব সহকারে পালন করতে হবে এবং সাধারণ সভা ও ভিড়ের মধ্যে উপস্থিত পরিহার করতে হবে।
প্রতিটি মানুষের জন্য জীবন রক্ষা ফরজ এবং যদি কেউ এই বিষয়টি ছোট করে দেখে তাহলে তিনি আল্লাহ নিকট দায়বদ্ধ হয়ে থাকবেন। এ বিষয়ের উপর আয়াতুল্লাহ নাসের মাকারেম শিরাজি গুরুত্বারোপ করে বলেন: এ বিষয়ে মানুষকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। চিকিৎসকদের নির্দেশাবলী ও স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। জনসাধারণের মধ্যে কম উপস্থিত হতে হবে এবং মহান আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে।
তিনি বলেন: ইনশাআল্লাহ! এই রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে দোয়াসমূহ, জিয়ারত-এ-আশুরা এবং হাদীস-এ-ক্বিসা বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি করবে। আমরাও দোয়া করবো। তবে শর্ত হচ্ছে, জনগণের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে নির্দেশাবলী দিয়েছেন তার প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং সেগুলো গুরুত্ব সহকারে পালন করতে হবে।


চিকিৎসকদের পরামর্শ ন্যায়সঙ্গত
কোমসহ ইরানের কয়েকটি শহরে করোনারি হার্ট ডিজিজের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আয়াতুল্লাহ জাফর সোবহানী বলেন: মহাবিশ্বে যা কিছুই ঘটুক না কেন মহান আল্লাহ সেগুলো সুসংহত রেখেছেন এবং এই বিষয়ে আমরা অবগত নই। আমাদের সর্বদা মহান আল্লাহর প্রতি  মনোযোগী হতে হবে এবং জেনে রাখা উচিত যে, আল্লাহ তায়ালা সর্বদা তাঁর বান্দাদের প্রতি ক্ষমাপরায়ণ ও করুণাময় হন।
তিনি বলেন: মহান আল্লাহ:

وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ وَيُرْسِلُ عَلَيْكُمْ حَفَظَةً حَتَّى إِذَا جَاءَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا وَهُمْ لَا يُفَرِّطُونَ»(انعام/۶۱)؛


তিনি তাঁর বান্দাদের ওপর প্রবল এবং তিনি তোমাদের প্রতি রক্ষকদের (ফেরেশতাদের) প্রেরণ করতে থাকেন সে সময় পর্যন্ত যখন তোমাদের মধ্যে কারও মৃত্যু ঘনিয়ে আসে, তখন আমাদের প্রেরিতরা (ফেরেশতা) তাকে (আত্মাকে) পূর্ণরূপে গ্রহণ করে এবং তারা (আমাদের আদেশ পালনে) সামান্যতমও অবহেলা করে না। (সূরা আনআম/ আয়াত ৬১)
এই আয়াতের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় যে, মহান আল্লাহ তার বান্দাদের রক্ষার জন্য রক্ষক প্রেরণ করেন। এসকল রক্ষক আমাদের অনেক বালা-মুসিবত বা দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেন। আশা করি যে, দোয়া ও তাওয়াস্সুলের মাধ্যমে এই দুর্যোগও দুর হবে। ঠিক যেমনটি পূর্বেও অনেক দুর্যোগ নিষ্পত্তি হয়েছে।
আয়াতুল্লাহ সোবহানী বলেন: চিকিৎসকদের পরামর্শ আমাদের মান্য করতে হবে। চিকিৎসকগণ বলেছেন, জনসম্মুখে কম উপস্থিত হতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে, তাদের নির্দেশ আমাদের পালন করতে হবে। নিঃসন্দেহ সর্বশক্তিমান স্রাষ্টার করুণা সকলের উপর বর্তাবে। iqna



আরও পড়ুন:

করোনা প্রতিরোধে নিয়োজিত ডাক্তার এবং নার্সদের প্রচেষ্টার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ

কুয়েতে করোনা বিস্তার/ এক সপ্তাহের জন্য সকাল স্কুল বন্ধ

করোনা প্রতিরোধে নিয়োজিত ডাক্তার এবং নার্সদের প্রচেষ্টার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ



 

captcha