IQNA

করোনাভাইরাস: মুসলমানের ঔদার্য, অমানবিক ট্রাম্প ও আমাদের করণীয়

19:10 - April 06, 2020
সংবাদ: 2610549
তেহরান (ইকনা)- ড. সোহেল আহম্মেদ: মুসলমানেরা রোগমুক্ত থাকার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার সহযোগিতা প্রার্থনায় বিশ্বাসী। ইরানসহ সারা বিশ্বের মুসলমানেরাই করোনাভাইরাসের কবল থেকে মুক্তি পেতে প্রতিনিয়ত আল্লাহর কাছে দোয়া করছেন। এসব দোয়ায় ঔদার্যের ছাপ স্পষ্ট। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশ তথা গোটা মানব সমাজের মুক্তির জন্য দোয়া করছেন।

ইরানে করোনাভাইরাস ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা:

ইরানের সাধারণ মানুষ ও আলেমদের চোখে-মুখেও একই আর্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দশকের পর দশক ধরে যে আমেরিকা ইরানকে বিপদে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই দেশের মানুষের জন্যও দোয়া করছেন তারা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বিশ্বের এই কঠিন পরিস্থিতিতেও মার্কিন সরকারের মানবিক বোধ জাগ্রত হচ্ছে না। ক’দিন আগেও আমেরিকা ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। করোনাভাইরাস মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী ও চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে কঠিন বাধা তৈরি করে রেখেছে।

ইরান চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি অগ্রগামী দেশ। কিন্তু এরপরও কিছু ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন হয়। করোনাভাইরাস হানা দেওয়ার পর এর প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা রোগের খুব ভালো চিকিৎসা বের হয়নি। কিন্তু আক্রান্ত রোগীদের অবস্থা স্থিতিশীল রাখতে ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার মতো কিছু রোগের ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইরানে ক’দিন আগ পর্যন্তও টামিফ্লু নামের একটি ওষুধ করোনা রোগীদের দেওয়া হচ্ছিল যা ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্তদের সারিয়ে তুলতে কার্যকর। করোনা রোগী শনাক্ত করতে টেস্ট কিটের সাহায্য নেওয়ার পাশাপাশি ফুসফুসের সিটি-স্ক্যান রিপোর্টকেও আমলে নিচ্ছেন ইরানি চিকিৎসকরা। এর ফলে ইরানে সিটি স্ক্যান মেশিনের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানি ইরানের কাছে প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বিক্রি করতে রাজি হলেও আমেরিকা নিজের প্রভাব খাটিয়ে আর্থিক লেনদেন আটকে দিচ্ছে। কারণ বিশ্বের আন্তঃব্যাংক আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক এখনও আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে। বেশ কিছু দিন আগেই মার্কিন মিত্র ব্রিটেনের কাছ থেকে কয়েক লাখ মাস্ক কিনেছে ইরান। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কথা বলে সেগুলো ইরানে পাঠাচ্ছে না লন্ডন।

কঠিন বিপদে বাঘ-মহিষের মতো চতুষ্পদী প্রাণীর মধ্যেও সাময়িকভাবে বিদ্বেষ ভুলে যাওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে, কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে এমন বোধের উদয় হওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। বৈশ্বিক মহামারি করোনার মধ্যেও ইরান-বিরোধী নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হবে না বলে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। যখন যা ইচ্ছে বলছেন, যা ইচ্ছে করছেন। তিনি কখনো পরিবেশ বিজ্ঞানী আবার কখনো চিকিৎসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন, পরমাণু বোমা দিয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার মতো পরামর্শ দিচ্ছেন। মার্কিন পুঁজিপতিদের স্বার্থে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অস্বীকার করে ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি বর্জন করেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও বহুজাতিক কাঠামো থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। মার্কিন সরকার এর আগে রাখঢাক করে অপকর্ম চালাত কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প লোকদেখানো ফিটফাট অবস্থাটাও ধরে রাখার পক্ষে নন। ট্রাম্পের আচার-আচরণ দেখে মনে হচ্ছে মার্কিন প্রশাসনের সব স্তর থেকে মানবিকতা শব্দটি ধুয়ে-মুছে বিদায় করার মিশনে নেমেছেন তিনি।

ট্রাম্পের একা ভালো থাকার নীতি:

ট্রাম্প একা ভালো থাকার নীতি অনুসরণ করছেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস ইস্যুতেও তিনি একা ভালো থাকার চেষ্টা করছেন। জার্মান বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের যে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেটার ওপর একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একশ’ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। জার্মানির অর্থনৈতিক ও জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী পিটার আল্টমায়ার নিজে এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে গোটা বিশ্বের অদৃশ্য শত্রু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ইতোমধ্যে এটা প্রমাণিত, বর্তমান যুগে কেউ একা ভালো থাকতে পারে না। লুকোচুরি বা একক প্রচেষ্টায় এই ভাইরাসকে পরাস্ত করা যাবে না।

জ্ঞান-বিজ্ঞানে আমেরিকা ও ইউরোপের সাফল্য অনস্বীকার্য। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রেও তারা অনেক এগিয়ে। ইউরোপ-আমেরিকায় মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৮০ বছর। এসব সাফল্যের কারণে ইউরোপ-আমেরিকা প্রায় ভুলতেই বসেছিল তুলনামূলক কম বয়সেও মানুষ রোগাক্রান্ত হতে পারে অথবা মৃত্যুবরণ করতে পারে। চীনে করোনাভাইরাস ধরা পরার বহু দিন পর তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে ছড়িয়েছে। কিন্তু প্রস্তুতি নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ পাওয়ার পরও এই ভাইরাসের কারণে ইউরোপ-আমেরিকা বিপর্যস্ত। বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ইউরোপ-আমেরিকাও ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু এক থেকে দেড় বছরের আগে কোনোভাবেই এই রোগের ভ্যাকসিন সাধারণের ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে না। এ অবস্থায় কার্যকর ওষুধ তৈরিতে জোর দিতে হবে। একইসঙ্গে বিশ্ব বাজারে থাকা যেসব ওষুধ ব্যবহারে কিছুটা ফল পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে হবে। সব দেশের জন্য তা সহজলভ্য করতে হবে। মার্কিন বিদ্বেষের শিকার ইরানও যাতে সহজেই এসব ওষুধ কিনতে পারে তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সমাজের পক্ষ থেকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়:

যেহেতু এখন পর্যন্ত করোনা রোগের ভালো কোনো ওষুধ নেই এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি সে কারণে আমাদেরকে প্রতিরোধের ওপরই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে। আমরা জানি, যেকোনো রোগ নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ অনেক সহজ ও সস্তা। যদিও এই করোনাভাইরাস প্রতিরোধ অন্য রোগের চেয়ে একটু বেশি কঠিন। তবুও জীবন বাঁচাতে আমাদেরকে এই কঠিন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। এটাকে যুদ্ধ বলছি এই কারণে যে, আপনাকে ঘরের বাইরে গিয়ে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে। কারণ বিজ্ঞানীরা বলছেন, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় ভাইরাসযুক্ত যে জলীয় কণা (ড্রপলেট) বেরিয়ে আসে তা কিছুক্ষণ বাতাসেও থাকতে পারে। এছাড়া যেকোনো বস্তুর ওপর এই ভাইরাসের বেঁচে থাকার ক্ষমতা আরও বেশি। বাইরের কোনো বস্তু স্পর্শ করলেই এই সন্দেহ করতে হবে যে, করোনাভাইরাস হয়তো আপনার হাতে লেগে আছে। এ কারণে ঘরের বাইরে বের হলেই মাস্ক পরতে হবে, যেসব পথ দিয়ে মানুষের চলাচল বেশি সেগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।বাইরের কোনো কিছুতে হাত লাগলেই দ্রুত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। মুখে, নাকে ও চোখে হাত দেওয়া যাবে না। মাস্ক একদিকে যেমন আপনার দেওয়া হাঁচি-কাশি থেকে অন্যকে রক্ষা করে তেমনি আপনার হাতকেও সহজেই মুখে-নাকে স্পর্শ করার সুযোগ দেয় না।

এই অদৃশ্য শত্রুর আরেকটি ভয়ানক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বাহ্যত পুরোপুরি সুস্থ মানুষও এই ভাইরাসের বাহক হতে পারে, বাহকের শরীরে রোগের কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই সংস্পর্শে আসা অন্য জনের শরীরে গিয়ে তা বাসা বাধতে পারে। আবার অনেক বাহকের শরীরে কখনোই এই রোগের কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না এবং কিছু দিনের মধ্যে বাহকের রোগ প্রতিরোধ শক্তির কাছে তা পরাস্ত হয়। অবশ্য এই বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটি ইতিবাচক বার্তাও রয়েছে আর তাহলো করোনাভাইরাস সবাইকে কাবু করতে পারে না। যাদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বেশি তারা আক্রান্ত হলেও দ্রুতই সেরে ওঠেন। এ কারণে চিকিৎসকরা বলছেন, এই অদৃশ্য শত্রুর হাত থেকে দূরে থাকার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে পারতপক্ষে ঘরের বাইরে না যাওয়া। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের মানুষের সবার পক্ষে হয়তো ঘরে থাকার ফর্মুলা মেনে চলা সম্ভব নয়। কারণ এসব দেশের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ শ্রমজীবী, তারা যেদিন যা আয় করেন সেদিনই তা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু অন্তত যাদের ঘরে থাকা সম্ভব তাদেরতো উচিত বাইরে না বেরিয়ে রোগ প্রতিরোধে সহযোগিতা করা।

শ্রমজীবী মানুষের কী হবে:

এই মুহূর্তে দরিদ্র মানুষেরা চরম সংকটে। তাদেরও যাতে ঘর থেকে একটু কম বের হয়েই তিন বেলা খাবার জুটে সে ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সরকারের পাশাপাশি সমাজের সব মানুষের। মনে রাখতে হবে, করোনাভাইরাস ধনী-দরিদ্র চেনে না। রাজা-রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী চেনে না। সব শ্রেণীর মানুষ এই রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইরান সরকারের একটি উদ্যোগ উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যেতে পারে। করোনাভাইরাসের কারণে যেসব দিনমজুর ঠিকমতো কাজে যেতে পারছেন না তাদেরকে চিহ্নিত করে পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ-সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। গত মাসে প্রথম দফায় এ ধরণের ৩০ লাখ শ্রমজীবীকে যে পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে ইরানের বাজার থেকে পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য ৩০ কেজি মোটা চাল বা আটা কেনা সম্ভব হবে। এর বাইরে নিম্নবিত্তের প্রত্যেক ইরানিকে প্রতিমাসে কিছু ভাতা দেওয়া হয় যা আগে থেকেই চালু ছিল। অবশ্য সরকারের দেওয়া এসব অর্থসাহায্য যে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত তা বলা যাবে না, কিন্তু বিপদের সময় খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারাটাও এক ধরণের বিজয়।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় ইরানের নানা উদ্যোগ:

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইরানে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দুই রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই সরকার নানা পদক্ষেপ নিতে শুরু করে। ইরান প্রথমেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলা বিষয়ক কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করে, ওই কমিটিতে সামরিক বাহিনীর প্রধানকেও রাখা হয়েছে। করোনা মোকাবেলা বিষয়ক কেন্দ্রীয় কমিটিকে উচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই কমিটির সিদ্ধান্তেই ইরানের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সব সিনেমা ও থিয়েটারসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। সব ধরণের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রথমে কয়েকটি জাতীয় ফুটবল ম্যাচ দর্শকবিহীন অবস্থায় সম্পন্ন করা হলেও পরবর্তীতে সেগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ইরানের সামরিক বাহিনীও এ সংকট মোকাবেলায় মাঠে নেমেছে। সামরিক বাহিনীর ৮০ শতাংশ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও পরীক্ষাগার করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। জুমার নামাজসহ গণজমায়েত বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন জনাকীর্ণ স্থান নিয়মিত ওষুধ ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। পাবলিক বাস, ট্রেন এবং পাতাল রেলের বগিগুলোকেও প্রতিদিন জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তবে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যের দোকানগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে বলা হয়েছে।

তবে ইরান সরকারের যে উদ্যোগটি সবচেয়ে বেশি কাজে আসছে তাহলো করোনা মোকাবেলায় সমন্বিত জাতীয় পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার আওতায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই পরিবারের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পরিবারের সদস্যের মধ্যে কোনো উপসর্গ আছে কিনা বা পরিবারের কেউ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন কিনা তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। এরপর তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কেউ আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ হলে তাকে নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে। সেখানে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর প্রয়োজনে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত কয়েক কোটি মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে বলে সরকার ঘোষণা করেছে। ইরানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে মেডিক্যাল টিমের যেসব সদস্য মারা গেছেন তাদেরকে শহীদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাদেরকে স্বাস্থ্য খাতের প্রতিরোধ সংগ্রামী হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। ইরানের আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয়ভাবে যাদেরকে শহীদ হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাদেরকে সব সময় বিশেষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় এবং তাদের পরিবারের জীবিত সদস্যরা বিশেষ সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা পান। ইরান নিজেই করোনাভাইরাস শনাক্তের টেস্ট কিট তৈরি করেছে। ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরির কাজও এগোচ্ছে।

ইরানের গণমাধ্যমও এ রোগ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। করোনাভাইরাস নিয়ে সংবাদ ও টকশোর পাশাপাশি নাটক, নাটিকা ও বিজ্ঞাপন সম্প্রচারিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পেতে সবার জন্য দোয়া ও এবাদতের পাশাপাশি আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তা এড়িয়ে সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। ভয় ও দুশ্চিন্তা না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, কারণ ভয় ও দুশ্চিন্তা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল করে দেয়, এর ফলে করোনাভাইরাস সহজেই মানুষকে কাবু করতে পারে।#

লেখক: রেডিও তেহরানের সিনিয়র সাংবাদিক।

captcha