IQNA

ইরান ইস্যুতে একা হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র: সর্বশেষ নতুন প্রস্তাবও বাতিলের সম্ভাবনা

18:00 - September 19, 2020
সংবাদ: 2611497
তেহরান (ইকনা): যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানবিরোধী অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা নবায়নে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন ইরানের বিরুদ্ধে পরমাণু সমঝোতার নীতিমালা লঙ্ঘনের বানোয়াট অভিযোগ তুলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো ট্রাম প্রশাসনের এ দাবির বিরোধিতা করেছে।

'ইউরোপীয় ত্রয়ী' হিসেবে পরিচিত তিন ইউরোপীয় দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে লেখা এক যৌথ চিঠিতে আবারও ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের মার্কিন প্রচেষ্টার বিরোধিতা করেছে। চিঠিতে বলা হয়, আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের পর জাতিসংঘের ইরানবিরোধী নিষেধাজ্ঞাগুলো স্থগিত থাকবে এবং তার পুনর্বহাল হবে না। এতে আরও বলা হয়, নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের যেকোনো প্রচেষ্টা হবে বেআইনি এবং তা কেউ মেনে চলতে বাধ্য থাকবে না। চিঠিতে ইউরোপীয় ত্রয়ী ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতায় অটল থাকার সংকল্প ব্যক্ত করেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইউরোপের এই তিন দেশের ঘোষণা ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন যে চেষ্টা চালাচ্ছে তার প্রতি বড় আঘাত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ইরান ইস্যুতে কেবল চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছিল। কিন্তু এখন ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোও ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করেছে। অর্থাৎ ইরানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টায় আমেরিকা কার্যত একা হয়ে পড়েছে। ইউরোপীয়রা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মূলত পরমাণু সমঝোতাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। কারণ ইউরোপীয়রা মনে করে পরমাণু সমঝোতার মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ইউরোপের স্বার্থ রক্ষা হবে। এছাড়া এই চুক্তিকে ইউরোপের কূটনৈতিক সাফল্যের বড় নিদর্শন বলে মনে করে ইউরোপীয়রা। এ কারণে তারা যেকোনো উপায়ে ইরানের সাথে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতাকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তবে এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে ইউরোপের এই তিন প্রভাবশালী দেশ ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নীতিকে সমর্থন করার মতো কোনো অজুহাতও খুঁজে পাচ্ছে না। যদিও ইউরোপ ইরানের সঙ্গে ব্যবসা ও অর্থ লেনদেন বিষয়ক ইন্সটেক্স ব্যবস্থা চালুর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানও পাঁচটি ধাপে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছে কিন্তু তেহরান একথাও ইউরোপকে জানিয়ে দিয়েছে তারা যদি ইন্সটেক্স ব্যবস্থা চালু করে তাহলে তেহরান পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন কাজ আবারো শুরু করবে।

যাইহোক, যুক্তরাষ্ট্র ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ইরান বিরোধী নিষেধাজ্ঞা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বলবৎ করার যে চেষ্টা করছে তাতে ইউরোপের কোন দেশ সাড়া দেয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের পরও ইরানবিরোধী নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখার চেষ্টা করার পাশাপাশি ওই নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের জন্য নজরদারি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিতে পারে। জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন সরকার নিরাপত্তা পরিষদের প্রধানের কাছে লেখা এক চিঠিতে নজরদারি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিতে পারে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ এ ধরনের প্রস্তাব মেনে নেবে না বলে আভাস দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনিও গুতেরেস বলেছেন, পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে তিনি নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে সমন্বয় করে চলবেন।

যাইহোক, সার্বিক পরিস্থিতিকে ট্রাম্পের জন্য বড় ধরনের পরাজয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: পার্সটুডে

captcha