IQNA

সরকারবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল থাইল্যান্ড

9:21 - September 21, 2020
সংবাদ: 2611509
তেহরান (ইকনা): থাইল্যান্ডে গত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রকট রূপ নিতে শুরু করেছে। শুধু থাই সরকারের বিরুদ্ধেই নয়, থাই রাজার বিরুদ্ধেও আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়েছেন। বিক্ষোভকারীরা থাইল্যান্ডকে ‘জনগণের দেশ’ বলে ঘোষণা করে একটি ফলক স্থাপন করেছেন, এটিকে তারা রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধেও জয় হিসাবে দেখছেন। থাই রাজা মহা বাজিরালংকর্নকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্রাসাদের সামনে ফলকটি স্থাপন করা হয়েছে।

গত জুলাই মাস থেকেই রাজতন্ত্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে থাইল্যান্ডে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ চলছিল। এর মধ্যে শনিবারের বিক্ষোভ ছিল সবচেয়ে বড়। কর্তৃপক্ষ বলছে, এ দিনের বিক্ষোভে অন্তত ১৮ হাজার মানুষ যোগ দিয়েছিল। যদিও অন্যরা বলছেন, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে। থাইল্যান্ডে ধারাবাহিকভাবেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে। এর মধ্যে কিছু বিক্ষোভকারী দেশটির রাজার অপসারণও চাইছেন। যদিও থাইল্যান্ডে রাজার বিরুদ্ধে কথা বলার সাংবিধানিক বিধিনিষেধ রয়েছে। শুধু তাই নয়, এ আইন অমান্য করলে দীর্ঘমেয়াদি জেল হওয়ার নিয়ম রয়েছে। এই বিক্ষোভে সাধারণত শিক্ষার্থীরাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ব্যাংককের গ্র্যান্ড প্যালেসের কাছে রাজকীয় মাঠে আন্দোলনকারীরা যে ধাতব ফলকটি বসিয়েছে, তাতে তারিখ দেখানো হয়েছে ২০শ সেপ্টেম্বর, ২০২০ এবং তাতে থাই ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে, ‘জনগণ এই আকাঙ্খা প্রকাশ করেছে যে, এই দেশ জনগণের সম্পত্তি, রাজার নয়।’ আয়োজকরা বলছেন, ১৯৩০ সালে থাইল্যান্ডে সর্বময় ক্ষমতাধর রাজতন্ত্রের অবসানের পর যে ফলকটি বসানো হয়েছিল - সেই জায়গাতেই এই নতুন ফলক বসানো হয়েছে। আগেরটি ২০১৭ সালে চুরি যায়।

বিক্ষোভকারীরা সরকারের কাছে আন্দোলনের ১০ দফা দাবির তালিকা দিয়েছে। এতে থাই রাজতন্ত্রে সংস্কার আনার দাবি জানানো হয়েছে। আরও দাবি জানানো হয়েছে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রায়ুত জান-ওচার সরকারকে বরখাস্ত করতে হবে, নতুন করে থাই সংবিধান লিখতে হবে, এবং সরকারের সমালোচকদের হেনস্তা করা চলবে না। ব্যাংকক পোস্ট জানায়, থাইল্যান্ডের আইন অনুযায়ী দেশটির রাজার বিরুদ্ধে কোনো অবমাননাকর মন্তব্য করলে ১৫ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে। আন্দোলনে ওই আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন ছাত্রনেতা ও কর্মী পানাসায়া রুং সিত্থিজরাওয়াত্তানাকুল। মেট্রোপলিটান পুলিশ ব্যুরো প্রধানের কাছে দাবি দাওয়ার তালিকা জমা দিলেও আন্দোলনকারীরা বৃহস্পতিবার সংসদ ভবনের সামনে জড়ো হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এছাড়াও ১৯৭৩ সালের ছাত্র আন্দোলন স্মরণে আগামী ১৪ অক্টোবর আরও একটি সমাবেশের আয়োজন করা হবে। এতে সাধারণ মানুষকেও যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
থাইল্যান্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিক্ষোভের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে আদালত গণতন্ত্রপন্থি একটি বিরোধী দল ভেঙে দিতে নির্দেশ দেয়ার পর নতুন বিক্ষোভ শুরু হয়। ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টি (এফএফপি) নামের দলটি দেশটির তরুণ, প্রথমবার ভোটার হওয়াদের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০১৯ সালের মার্চ থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে দলটি তৃতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক আসন লাভ করে। ওই নির্বাচনে জয় পায় ক্ষমতাসীন সাবেক সামরিক নেতাদের নেতৃত্বাধীন দলটি। বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার আয়োজকরা থাই রাজপ্রাসাদের কাছেই একটি পার্ক প্রতীকীভাবে দখল করার পরিকল্পনা করেছে। এই পার্কটি রাজকীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। এ আগে গত মাসে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ১০ হাজার লোক সমবেত হয়েছিল। সেটি পুলিশও স্বীকার করে নিয়েছিল। এই বিক্ষোভ তার চেয়েও বড় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা ২০১৪ সালে সেনা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। এর পর গত বছর তিনি বিতর্কিত নির্বাচনে জয়লাভ করেন। চলতি বছর জুন মাসে কম্বোডিয়ায় নির্বাসিত গণতন্ত্রপন্থি নেতা ওয়ানচালেরাম সাতাসাকসিত নিখোঁজ হন। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ ওই নিখোঁজ ঘটনার পেছনে বর্তমান থাই সরকারের হাত রয়েছে। এর পরই আন্দোলনের নতুন মাত্রা যায়। তবে দেশটির পুলিশ ও সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এসব ঘটনার জেরে জুলাই মাস থেকে থাইল্যান্ডে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে নিয়মিত বিক্ষোভ চলছে।
সূত্র: বিবিসি।

captcha