IQNA

'আশুরা ও কারবালার চেতনা থেকেই ইরানের ইসলামি বিপ্লব'

20:17 - October 16, 2020
সংবাদ: 2611644
তেহরান (ইকনা): ইমাম হুসাইন (আ.)'র শাহাদাতের চেহলাম বার্ষিকী বা আরবাঈন পালিত হয়েছে। আরবাঈন পালনের বিভিন্ন দিক নিয়ে রেডিও তেহরানের সঙ্গে কথা বলেছেন, ইরান প্রবাসী বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক জনাব মুহাম্মাদ মুনির হুসাইন খান। তিনি বলেছেন, আশুরা বা কারবালা বিপ্লব থেকে ইরানে ইমাম খোমেনী (র.) নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবের জন্ম নিয়েছে।

পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ ও উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।

রেডিও তেহরান: জনাব, মুনির হুসাইন খান, ইমাম হুসাইন (আ)'র শাহাদতের চেহলাম বার্ষিকী উপলক্ষে কারবালার ময়দানে আরবাঈনের অনুষ্ঠান পালন করা হয়। ইসলামের নিরীখে এই আরবাঈন অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব ও গুরুত্ব সম্পর্কে আপনি যদি কিছু বলেন।

মুনির হুসাইন খান: ইসলামের দৃষ্টিতে ইমাম হুসাইনের (আ.) শাহাদাতের চেহলাম অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআনে ৪০ সংখ্যার সবিশেষ গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। যেমন-হযরত মুসা (আ.)র উপর তাওরাত অবতীর্ণ করার জন্য মহান আল্লাহ ৪০ রাত নির্ধারণ করেছিলেন। এ চল্লিশ রাত এবং দিন হয়রত মূসা (আ.) তুর পর্বতের গুহায় ইবাদত বন্দেগি করে বিশেষ আত্মিক এবং আধ্যাতিক উৎকর্ষ লাভ করেন। তিনি এর মাধ্যমে তাওরাত গ্রহণ করার জন্য প্রস্তত হন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মানুষ ৪০ বছর বয়সে বুদ্ধিবৃত্তিক পূর্ণতা লাভ করে।

হাদিস শরিফে আছে-৪০ দিন নিষ্ঠার সাথে মহান আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করলে বান্দার অন্তর থেকে তারঁ কণ্ঠে হিকমত ও প্রজ্ঞার ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হয়। তাই আমরা দেখতে পাই যে, ইসলামে ৪০ দিনের সবিশেষ গুরুত্ব আছে।

আশুরার দিন কারবালায় ইমাম হুসাইন(আ.)র শাহাদাত, বিপ্লব ও আন্দোলনের ৪০ তম দিবসে অর্থাৎ ২০ সফর পূর্ণতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এর চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটে আরবাঈনের শোকানুষ্ঠানের মাধ্যমে। আরবাঈনের পদযাত্রা ও আশুরা দিবসে জিয়ারত আধ্যাত্মিক ও রুহানি বরকতময়। ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের শোকানুষ্ঠান পালানের মাধ্যমে কোটি কোটি ইমাম ভক্তের অন্তর ঋদ্ধ হয়।

রেডিও তেহরান: আরবাঈন উপলক্ষে প্রতিবছর কারবালা অভিমুখে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মূলধারার গণমাধ্যম বলতে আমরা যা বুঝি তাতে এই খবর কেমন একটা গুরুত্ব পায় না। এর কারণ কি?

মুনির হুসাইন খান: মূলধারার গণমাধ্যমগুলো আসলে ইসলামবিরোধী পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রাধীন। তাদের নিয়ন্ত্রিত মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো সবসময় নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী প্রভূদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে। তাই যেসব খবরাখবর সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থবিরোধী সেসব খবর তাদের কাছে গুরুত্ব পায় না। বিশেষ করে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর মর্যাদা বৃদ্ধি করে এমন খবর তাদের গণমাধ্যমে গুরুত্বহীন একটি বিষয়।

যেহেতু আরবাঈনের শোক মিছিলে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ অংশ নেয়। এটি ইসলাম ও মুসলমানদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে সে কারণেই তারা এসব খবর প্রচার করে না। করলেও খুবই সামান্য। তাছাড়া আরবাঈনের খবর প্রচারিত হলে বিশ্ববাসী ইসলাম, মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত(আ.) এবং পবিত্র কুরআনের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবে যা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো কখনই চায় না।

রেডিও তেহরান: ক্ষমতাসীন উমাইয়া শাসকগোষ্ঠী আশুরা ও কারবালার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। ইমাম হুসাইনের চেহলাম বার্ষিকী বা আরবাঈন অনুষ্ঠান কি সময়ের ব্যবধানে উমাইয়াদের সেই প্রচেষ্টার জবাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে?

মুনির হুসাইন খান: ইমাম হুসাইন (আ.)র চেহলাম অনুষ্ঠান পালন-আশুরা ও কারবালার ঘটনাকে ধামাচাপ দেয়া সংক্রান্ত উমাইয়াদের অপচেষ্টা ভন্ডুল করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়; যুগে যুগে সকল জালিমরা চেয়েছিল ইমাম হুসাইনের নাম নিশানা মুছে দিতে। এই আরবাঈনের শোকানুষ্ঠান পালন তাদের সকল অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। তাই আমরা দেখতে পাই যে, আরবাঈনের দিন কোটি কোটি হুসাইনি আশেক কারবালায় মওলা হুসাইনের মাজার জিয়ারত করেন। ইমাম হুসাইন (আ.)এর শাহাদাতের পূণ্যস্মৃতি চিরজাগরুক করে রেখেছে আরবাঈনের শোকানুষ্ঠান ও জিয়ারত। আর ইমাম হুসাইনের স্মৃতি জাগরুক থাকা আসলে ইসলাম চির জাগরুক থাকা। তাই ইমাম খোমেনী (র.) যথার্থই বলেছেন, 'এই মুহররম ও সফর মাস ইসলামকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত রেখেছে।'

রেডিও তেহরান: বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, হুসাইনের প্রতি মু’মিনের হৃদয়ে ভালোবাসার যে উত্তাপ রয়েছে তা কখনও প্রশমিত হবে না। আরবাইন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুসলমানেরা কি সেই ভালবাসার নিদর্শন দেখানোর সুযোগ পেতে পারেন?

মুনির হুসাইন খান: জ্বি হ্যাঁ, আরবাঈনের শোকানুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুসলমানরা ইমাম হুসাইন (আ.)র প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন দেখানোর সুযোগ পান। সাইয়্যেদ্যুশ শুহাদা, বেহেশতের যুবকদের নেতা ইমাম হুসাইনের প্রতি ভালোবাসা প্রত্যেক মুসলমানদের অন্তরে অবশ্যই প্রজ্বলিত রয়েছে। ইমামের প্রতি ভালোবাসার উত্তাপ কখনও নিভে যাবে না। নিঃসন্দেহে ইমাম হুসাইনের প্রতি ভালোবাসা হচ্ছে-মহানবী (সা.), হযরত আলী (আ.), হযরত ফাতিমা (সা.আ) ইমাম হাসান (আ.), পবিত্র কুরআন ও আহলুল বাইতের (আ.) প্রতি ভালোবাসা।

রেডিও তেহরান: ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের চেহলাম পালন ও আশুরার শোকগাঁথা বর্ণনার প্রচলন না থাকলে কারবালার বিপ্লবের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার ক্ষেত্রে উমাইয়াদের ষড়যন্ত্র অনেকাংশেই সফল হতো বলে অনেকেই মনে করেন। আপনি কি বলবেন?

মুনির হুসাইন খান: আপনি ঠিকই বলেছেন। আসলেই তাই। যদি ইমাম হুসাইন(আ.)র শাহাদাতের চেহলাম পালন ও আশুরার শোকগাঁথা বর্ণনার প্রচলন না থাকত তাহলে কারবালা বিপ্লবের ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যেত। এসব শোকানুষ্ঠান পালন ইমাম হুসাইনের(আ.) শাহাদাত ও কারবালা বিপ্লবকে চিরজাগরুক রেখেছে একইসাথে বনী উমাইয়া, ইয়াজিদসহ সব জালিমের প্রতি ঘৃণার আগুন জ্বালিয়ে রেখেছে। এই আশুরার শোকানুষ্ঠান ও কারবালা বিপ্লব থেকে জন্ম নিয়েছে ইমামা খোমেনীর নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী বিপ্লব। লেবাননে হিজবুল্লাহর নেতৃত্বে ইসরাইলবিরোধী ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন, ইরাকে মার্কিন দখলদারিত্ববিরোধী ইরাকীদের প্রতিরোধ সংগ্রাম ও আন্দোলন।
সূত্র: পার্সটুডে

captcha