IQNA

নাসার মঙ্গল অভিযান

রোভার তো অনেক গেল, মানুষ যাবে কবে

0:02 - February 21, 2021
সংবাদ: 2612285
তেহরান (ইকনা): লাল গ্রহ মঙ্গলে বৃহস্পতিবার সফলভাবে কাঙ্ক্ষিত অবতরণ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) রোভার ‘পাসিভিআরান্স’। গ্রহটির বুকে প্রথম রোভার নেমেছিল ১৯৯৭ সালে। এরপর একে একে সেখানে পা রাখল পাঁচটি রোভার। এখন বিজ্ঞানীদের কাছে বিশ্ববাসীর প্রশ্ন, লাল মাটিতে কবে পড়বে মানুষের পা।
বর্তমানে নাসার আর্টিমিস (মহাকাশে মানুষ পাঠানোর অভিযান) কর্মসূচিকে ‘মুন টু মার্স’ (চাঁদ থেকে মঙ্গল) মিশন হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। লাল গ্রহটির বুকে চলতি শতাব্দীর ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি থেকে শেষ সময়ের মধ্যেই মানুষের পদার্পণ ঘটবে বলে দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন এ কর্মসূচির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক স্টিভ জার্কজিক।
 
 মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর অভিযান পরিচালনা করা কারিগরিভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরের কিছু নয়। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই অভিযান শুরু করতে সম্ভবত এখনো কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, এর পেছনে যে বিপুল অর্থায়নের প্রয়োজন, সেটি নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা রয়েছে।
 
মঙ্গলে মানুষের টিকে থাকা কঠিন
সেই ১৯৬৯ সালে চাঁদের বুকে প্রথম মানুষের পদার্পণ ঘটার পরপরই মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর অভিযান নিয়ে কাজ শুরু করেন অ্যাপোলো কর্মসূচির কারিগর ওয়ের্নহার ভন ব্রাউন। কিন্তু অনেক পরিকল্পনার মতো এটিও এখন পর্যন্ত মনের আয়নাতেই লুকিয়ে আছে। বাস্তবের ক্যানভাসে ধরা দেয়নি।
 
পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন এত কঠিন করে তুলল কিসে? শুরুতেই বলতে হয়, মানুষের বসবাসস্থল এই পৃথিবী আর আকাশের উজ্জ্বল গ্রহ মঙ্গলের মধ্যকার বিশাল দূরত্বের বিষয়টি।
 
মঙ্গল অভিযানে যেতে ইচ্ছুক নভোচারীদের গ্রহটিতে যেতে হলে পাড়ি দিতে হবে প্রায় ১৪ কোটি মাইল বা সাড়ে ২২ কোটি কিলোমিটার। যার অর্থ, এ অভিযানে তাঁদের মহাশূন্যে কাটিয়ে দিতে হবে মাসের পর মাস। এই দীর্ঘ সময়ে দুই বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা করতে হবে তাঁদের। এর একটি হলো, তেজস্ক্রিয়তা; অন্যটি মাইক্রোগ্রাভিটি বা প্রায় শূন্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তি (যেখানে মানুষ বা কোনো বস্তু ভাসমান অবস্থায় থাকে)।
 
প্রথম ঝুঁকিতে আজীবন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ও দ্বিতীয়টিতে হাড়ের ঘনত্ব ও পেশির ভর কমে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। আবার মঙ্গলে নামার পর কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে তা ওই গ্রহে থেকেই তার সমাধান করতে হবে।
 
বিজ্ঞানীরা বলেন, চাঁদ ও মহাকাশ স্টেশনের যাত্রা থেকে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় জেনেছেন তাঁরা। যেমন, হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিকসের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোনাথন ম্যাকডোয়েল বলেন, ‘আমরা দেখেছি, পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা মহাকাশযানে একজন নভোচারী দেড় বছর বেঁচে থাকতে সক্ষম।’ তিনি বলেন, মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর মিশন কীভাবে কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে কিছু সাধারণ ধারণা আমাদের সামনে রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্যের ঘাটতি রয়েছে।’
 
মহাকাশবিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রালিটিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা ও গ্রহবিজ্ঞানী লরা ফোর্সজিক বলেন, মঙ্গলের দীর্ঘযাত্রায় তেজস্ক্রিয়তা হ্রাসের একটি উপায়, যাত্রাপথকে অধিকতর দ্রুতগতিতে পাড়ি দেওয়া। আরেকটি উপায়, পানির বেশ কিছু কনটেইনার যুক্ত নভোযান তৈরি; যে কনটেইনারগুলো মহাকাশ থেকে বিচ্ছুরিত তেজস্ক্রিয়তা শুষে নিতে পারবে।
 
বিজ্ঞানীরা বলেন, মঙ্গলে পৌঁছানোর পর সেখানকার ৯৫ শতাংশ কার্বন ডাই-অক্সাইড সংবলিত বায়ুমণ্ডলে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার পথ বের করতে হবে। ‘পাসিভিআরান্স একটি যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে যা কার্বন ডাই-অক্সাইডকে অক্সিজেনে রূপান্তর করতে সক্ষম। শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য আরও একটি উপায় হলো, গ্রহটির মেরু অঞ্চলে থাকা বরফকে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনে ভেঙে ফেলা। এটি রকেটের জ্বালানি হিসেবেও কাজে লাগবে।
 
মঙ্গলে তেজস্ক্রিয়তা আরেক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে। কেননা, এটির খুবই পাতলা বায়ুমণ্ডল ও চৌম্বকীয় স্তরের সুরক্ষা ঘাটতিতে নভোচারীর আশ্রয়স্থলকে হতে হবে ভালোভাবে সুরক্ষিত; এমনকি তা মঙ্গলের মাটির নিচেও হতে পারে। প্রথম আলো
ট্যাগ্সসমূহ: ইকনা ، মানুষ ، অভিযান ، মঙ্গল
captcha