IQNA

ভারতে ২৬টি আয়াত বাতিলের প্রতিবাদে মুসলিম গবেষকের মতামত

20:17 - March 14, 2021
সংবাদ: 2612452
তেহরান (ইকনা): ভারতে পবিত্র কোরআন থেকে ( ইসলামবিদ্বেষী একদল লোকের মতে ) সন্ত্রাসবাদের প্রসারে সহায়ক এমন ২৬ আয়াত ( জিহাদের আয়াত ) বাদ দেয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে জনৈক রিযভী নামের  এক ব্যক্তি। তার ( রিযভী ) মতে এই ২৬ আয়াত প্রথম , ২য় ও ৩য় খলিফা পবিত্র কুরআনে সংযোজন করেছিলেন ইসলাম ধর্মকে জোর করে প্রচার করার লক্ষ্যে । আর এই ২৬ আয়াত নাকি সন্ত্রাসবাদ লালন ও বিস্তৃতির জন্য অত্যন্ত সহায়ক ও উপযোগী !!!!
এটা হচ্ছে এক নতুন ষড়যন্ত্র ইসলামের বিরুদ্ধে যা কতিপয় মুসলমান নামধারী সেক্যুলার ব্যক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়নের  চেষ্টা চালাচ্ছে দুশমনরা । লক্ষ্য হচ্ছে পবিত্র কুরআন কে বিকৃত তাহরীফ হওয়া ধর্ম গ্রন্থ দেখানো এবং সেই সাথে প্রচার করা যে বিশেষ করে পাক ভারত উপমহাদেশে শিয়ারা কুরআন তাহরীফে বিশ্বাসী এবং বিশ্বব্যাপী এবং বিশেষ করে এই অঞ্চলে শিয়া সুন্নী সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত খুব ভালোভাবে উস্কে দেওয়া।
 
আর সার্বিক ভাবে ইসলাম ধর্মকে সন্ত্রাসবাদের হোতা ও দোসর এবং মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসবাদী দেখিয়ে বিশ্বব্যাপী ইসলামের উত্থান , অগ্রযাত্রা ও প্রসার স্তব্ধ করে দিতে চাচ্ছে ইসলামের দুশমনরা । আর এ লক্ষ্যেই ভারতের সুপ্রিম কোর্টে পবিত্র কোরআন থেকে ২৬ আয়াত বাদ দেয়ার পিটিশন করানো হয়েছে। 
 
ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্রের পিছনে রয়েছে ইসলামের চিরদুশমন পাশ্চাত্য ( বিশেষ করে ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) , ইসরাইল ও ভারতের মুশরিক মূর্তিপূজারী চক্র। কারণ ইসরাইলের সাথে হিন্দুত্ববাদী মোদী প্রশাসনের রয়েছে অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক যা মধুচন্দ্রিমা ( হানিমুন ) পর্যায়ের বললেও অত্যুক্তি হবে না । আর এটা ভারতে বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার সমূহ থেকে বঞ্চিত করার অশুভ চেষ্টা হতে পারে । তাই ভারতে ভবিষ্যতে হয়তো সার্বিক ভাবে মুসলিম নিধন ও নির্যাতন ভয়ানকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ব্যাপারে সবার উচিত সজাগ দৃষ্টি রাখা ও অত্যন্ত সতর্ক হওয়া। 
 
 
এটা এক নয়া ষড়যন্ত্র ইসলামের শত্রুদের । অতএব সাবধান । শিয়া -সুন্নী নির্বিশেষে সকল ইসলামী ফির্কা ও মাযহাব অকাট্য ঐকমত্য ( ইজমা ও ইত্তিফাক ) পোষণ করে যে পবিত্র কুরআন অবিকৃত আসমানী কিতাব মা মহানবীর ( সা.) উপর যেভাবে নাযিল ( অবতীর্ণ ) হয়েছিল ঠিক হুবহু সেভাবে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন, পরিবর্ধন , সংযোজনের ও বিযোজন কোনো ধরণের বিকৃতি ও তাহরীফ ছাড়াই  অকাট্য মুতাওয়াতির সূত্রে আমাদের কাছে পৌঁছেছে। 
 
এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনের অবিকৃত ও বিশুদ্ধ থাকার ব্যাপারে বহু অগণিত সুনিশ্চিত বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তি এবং অকাট্য বৈজ্ঞানিক দলীল-প্রমাণ বিদ্যমান। এর জন্য উলূমুল কুরআনের ( পবিত্র কোরআন সম্পর্কিত জ্ঞান ও বিদ্যা সমূহ ) গ্রন্থাদি দ্রষ্টব্য। এ স্বর্গীয় গ্রন্থের বিশুদ্ধতা ও অবিকৃত থাকার জন্য ব্যস এতটুকুই যথেষ্ট যে এ গ্রন্থটির মূল টেক্সট ( মতন ) মহানবীর ( সা.) যুগ থেকে আমাদের যুগ পর্যন্ত ১৫ শতাব্দী যাবৎ বিশুদ্ধ , অবিকৃত ও অপরিবর্তিত রয়েছে । এ গ্রন্থের ভাষা শৈলী , সাহিত্যিক ও অলংকার শাস্ত্রীয় মান , অন্তর্নিহিত বিষয়বস্তু , শিক্ষা ও আদর্শের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক গভীরতা , ব্যাপকতা , নবীনত্ব , বৈজ্ঞানিকত্ব  ( ইল্মীয়ত ) ও যৌক্তিকতা এবং এ আসমানী গ্রন্থে মানব জীবনের সৌভাগ্যের সমুদয় সার্বিক দিক ও পর্যায়ের যাবতীয় সমস্যা সামাধানের মূলনীতি সমূহের বিদ্যমানতা প্রমাণ করে যে এ গ্রন্থটি বিশ্ব জগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহর ঐশী ঐশ্বরিক গ্রন্থ যা মহান আল্লাহ কর্তৃক সর্বদা সংরক্ষিত ও  অবিকৃত ( মাহফূয ও মাসূম ) থাকবে এবং দুনিয়ার কোনো শক্তি এর ধ্বংস ও বিকৃতি সাধন ( তাহরীফ ) করতে পারবে না। 
 
পবিত্র কুরআন সকল মানব ও জ্বিন জাতিকে  পবিত্র কুরআনের আয়াত সমূহের সদৃশ ও অনুরূপ ১০ টি আয়াত অথবা অন্ততঃ একটি আয়াত রচনা করে আনার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে যা ১৫ শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি ইসলামের দুশমনরা । অথচ এই ১৫ শতাব্দীতে শুধু আরবীয় মুসলিম কবি সাহিত্যিক ও পণ্ডিত ছাড়াও বহু অগণিত আরবীয় খ্রীষ্টান , ইহুদী , সাবিয়ী ও নাস্তিক কবি , সাহিত্যিক ও পণ্ডিত গত হয়েছেন । কিন্তু তাদের কেউ পবিত্র কুরআনের এ চ্যালেঞ্জ মুকাবেলা ও খণ্ডন করে পবিত্র কুরআনের আয়াত সমূহের অনুরূপ ও সদৃশ মাত্র একটি আয়াত বা বাক্যও রচনা করে দেখাতে পারে নি। অথচ পবিত্র কোরআন মুসলমান , খ্রীষ্টান ,  ইহুদী সাবিয়ী ও নাস্তিক নির্বিশেষে সকল ( ৫০ কোটি ) আরবী ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে আরবী ভাষা , সাহিত্য ও অলংকার শাস্ত্রের সর্বোচ্চ নিদর্শন ও স্ট্যান্ডার্ড  বলে ১৫ শতাব্দী যাবৎ গণ্য ও বিবেচিত হচ্ছে। 
 
শুধু তাই নয় সমগ্র খ্রীষ্টান ইউরোপও ১৫ শতাব্দী ধরে ইসলাম ও পবিত্র কুরআনের সাথে পরিচিত । কৈ কোনো ইউরোপীয় খ্রীষ্টান , ইহুদী  ও নাস্তিক কবি , সাহিত্যিক ও পণ্ডিত পবিত্র কুরআনের এ চ্যালেঞ্জ খণ্ডন করে এ গ্রন্থটির  আয়াত সমূহের  সদৃশ ও অনুরূপ অন্তত একটি আয়াতও রচনা করে দেখাতে পারে নি । আর এটা করতে পারলে তো সব ল্যাটা চুকে যেত । বরং বহু নিরপেক্ষ অমুসলিম মনীষী ও পণ্ডিত পবিত্র কুরআনের তাত্ত্বিক জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্ব , এর অন্তর্নিহিত অনুপম সাহিত্যিক মান ও সৌন্দর্য এবং বিষয়বস্তুগত তাৎপর্যের গভীরতা ও ব্যাপকত্ব এবং নির্মল পবিত্র পরিশুদ্ধ মানব জীবন গঠন অর্থাৎ মানব জাতির হিদায়তে এর অপরিসীম গুরুত্ব ও কার্যকরী প্রভাবের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন এবং অনেক অমুসলিম মনীষী ও পণ্ডিত ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং করছেন। 
 
অগণিত প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকূলতা সত্ত্বেও পাশ্চাত্যে  ইসলাম  ক্রমপ্রসারমান ধর্ম । ইসলামের দুশমনরা এ দ্বীনের আলোকে ফুৎকার দিয়ে নিভিয়ে দিতে চায় । কিন্তু আল্লাহ পাক তাঁর ঐশী দ্বীনের আলো প্রজ্জ্বলিত রাখবেনই যদিও কাফির মুশরিকরা তা পছন্দ করে না । তাই ওয়াসিম রিযভীর মতো ইসলাম বিদ্বেষী বিভ্রান্ত গুমরাহ ব্যক্তি এ ধরণের ঘৃণ্য কাজ করে নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করল । আর এ ধরণের ব্যক্তি কোনো ইসলামী মাযহাবেরও প্রতিনিধিত্ব করে না এবং এর অন্তর্ভুক্ত নয়।
 
তাই ভারতের সুন্নী মুসলিম ব্যক্তিত্ব ওসংগঠন সমূহের মতো ভারতীয় শিআ মুসলিম সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব গণ এই ওয়াসিম রিযভীর এ জঘন্য ঘৃণ্য পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
captcha