IQNA

মুসলিম শিল্প-সংস্কৃতিতে ক্যালিগ্রাফি

0:02 - May 18, 2021
সংবাদ: 2612805
তেহরান (ইকনা): জাহেলি যুগের আবহেও আরব সমাজে কৃষ্টি-সাংস্কৃতিক প্রয়াস ছিল। তখন আরবরা যুদ্ধবিদ্যা, অতিথিসেবা, পশুপালন, দেশভ্রমণ, আন্তর্দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদিতে ছিল বিখ্যাত।

সে সময়ের ইতিহাস খ্যাত ‘উকাজের মেলা’ ছিল। কবিতা উৎসবের সর্বশ্রেষ্ঠ সাতটি স্থান পেয়েছিল পবিত্র কাবার দেয়ালে, যাকে বলে ‘সাবউল মুয়াল্লাকাত’ (সাত ঝুলন্ত কবিতা)। ছিল নববর্ষ ও ঘোড়দৌড়ের দুটি উৎসব ‘নওরোজ’ ও ‘মেহেরগান’। তবে তৎকালীন আরবে সংস্কৃতির নামে চলত মানবতা ও নৈতিকতাবিরোধী অপতৎপরতা। তাদের উৎসবের অশ্লীলতার পটভূমিতেই সুরা মায়িদার ৯০ নম্বর আয়াত নাজিলের মাধ্যমে মদ, মূর্তি, জুয়া, লটারিকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণার পাশাপাশি একে ‘ঘৃণিত শয়তানের কাজ’ বলা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘শয়তান এই মদ ও জুয়ার মধ্যে (ফেলে) তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে দিতে চায় এবং এভাবে সে তোমাদের আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে; তবু কি তোমরা ফিরে আসবে না?’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯১)

জাহেলি যুগের অনাচার, অসভ্য, অসত্যের নিকষ অন্ধকারের অবসান ঘটিয়ে প্রিয় নবী (সা.)-এর আবির্ভাব এবং ইসলামের জয়যাত্রা সুদূরের অভিসারে জ্ঞানার্জনের প্রেরণা দেয়। ডাকাত ও ডাক্তারের হাতের ছুরির মতোই স্পষ্ট পার্থক্য হলো সংস্কৃতি, অপসংস্কৃতির। ইসলামী সংস্কৃতি মানবমনের সুকোমল অভিব্যক্তি বিকাশের পথে ভূগোল ও বিশ্বাসের সীমা ছাড়িয়ে পরিশীলিত ঐক্য ও বিবেকের জাগরণ ঘটায়। এ ক্ষেত্রে আরবি ও ইসলামী ক্যালিগ্রাফি অনন্য মর্যাদা পেয়েছে। ক্যালিগ্রাফি পবিত্র কোরআনের অলংকরণ, মসজিদ স্থাপত্যশৈলী ও ইসলামী শিল্পসুষমার মূল্যবান চিত্ররূপ। ক্যালিগ্রাফি শব্দটি ইংরেজি, যা গ্রিক ক্যালিগ্রাফিয়া থেকে উৎপত্তি। গ্রিক ক্যালোস (শধষষড়ং)- সুন্দর, গ্রাফেইন (মত্ধঢ়যবরহ)- লেখা শব্দদ্বয়ের সমষ্টি ক্যালিগ্রাফি বলতে বোঝায় Calligraphy is the art of producing decorative handwriting or lettering with a pen or brush.

ক্যালিগ্রাফিকে আরবিতে ‘খত আল আরব’, তুর্কিতে hattatlk, ফারসিতে ‘খোশনবিশি’ বলে (মোহাম্মদ আব্দুর রহীম, বাংলা ক্যালিগ্রাফি : অনুভব ও শৈলী)।

আরবি, ফারসি ও তুর্কি-অটোমান ক্যালিগ্রাফি পবিত্র কোরআনের প্রচ্ছদ ও পৃষ্ঠা, মসজিদের দেয়াল, সিলিং অথবা বই-পুস্তকের অলংকরণ-আকর্ষণ সৃষ্টিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো শিল্পীর সৌন্দর্যবোধকে ধর্মীয় নান্দনিকতায় বিকশিত করে।

আরবি ক্যালিগ্রাফি দুই প্রকার—ক. ট্র্যাডিশনাল বা ঐতিহ্যবাহী, যেমন অক্ষরকে দৃষ্টিনন্দন করা, খ. পেইন্টিং বা চিত্রকলা। এখানে রয়েছে : স্ক্রিপ্ট ক্যালিগ্রাফি (বই, নথি, ফরমান, মানপত্র ইত্যাদিতে অক্ষরের বিশেষ বিন্যাস) এবং ভিজ্যুয়াল ইমেজ ক্যালিগ্রাফি। ভিজ্যুয়াল ইমেজ ক্যালিগ্রাফিতে অক্ষর, বাক্য, বাণীর বিশেষ বিন্যাসের মাধ্যমে একটি চিত্ররূপ তৈরি করা হয়। ভিজ্যুয়াল ইমেজ ক্যালিগ্রাফি কোনো বস্তুর সঙ্গে মিল থাকতেও পারে আবার না-ও থাকতে পারে। ক্যালিগ্রাফি আঁকতে কালি ও ক্যালিগ্রাফির জন্য তৈরি কলম, ব্রাশসহ নানা উপকরণ ব্যবহৃত হয়। এতে কাগজ, কাপড় বা ক্যানভাসে শিল্প সৃষ্টির উপযোগ তৈরি হয়, যাকে মারবেলিং বলে।

আরবি ক্যালিগ্রাফির মূল পাঁচটি স্টাইল। তা হলো নাশখ, নাস্তালিক, দিওয়ানি, তুলুত ও রুকআহ। এ ছাড়া আরবি ও ইসলামী ক্যালিগ্রাফিতে বহুল ব্যবহৃত ফন্টের মধ্যে আছে : সুলুক, নাশখ, দিওয়ানি, তালিক, ফারসি, ইজাজা, কারামাতিয়ান কুফি, ইস্টার্ন কুফি, মাগরেবি কুফি, আন্দালুসিয়ান কুফি, বিহারি, বেঙ্গল তুগরা (সুলুক, নাশখ), রায়হানি, মুহাক্কাক, জালি সুলুস, জালি দিওয়ানি ইত্যাদি। অন্যদিকে আরবি ও ইসলামী ক্যালিগ্রাফিতে বহুল ব্যবহৃত কলমকে বলে ‘কলম খাশাব’ ও ‘কলম বুস’।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ গাজীপুর

captcha