IQNA

সৃষ্টির অপূর্ব নিদর্শন ভিনিকুঙ্কা পর্বত

19:52 - August 01, 2021
সংবাদ: 3470425
তেহরান (ইকনা): মহাবিশ্বের সর্বত্রই মহান আল্লাহর সৃষ্টির অগণিত নিদর্শন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে, যার প্রতিটিই মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও একত্ববাদের কথা বারবার স্মরণ করিয়ে দেয়।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) জমিনকে বিস্তৃত করেছেন এবং এর মধ্যে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন। আর তিনি প্রতিটি ফল সৃষ্টি করেছেন দুই ধরনের। তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন। এতে অবশ্যই চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন আছে।’ (সূরা : রাদ, আয়াত : ৩)

মহান আল্লাহর তেমনই একটি বিস্ময়কর সৃষ্টি ভিনিকুঙ্কা পর্বত, যার অপরূপ সৌন্দর্য বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করে। শুধু সৌন্দর্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে পাহাড়-পর্বতের ওজন স্থাপন করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করেছেন। পাহাড় সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে পৃথিবী নড়াচড়া করতে না পারে। পৃথিবী নড়াচড়া করলে পৃথিবীর বুকে বসবাসকারীদের পৃথিবীতে টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে যেত। এ বিষয়ে কোরআন বলছে, ‘আমি জমিনের ওপর সুদৃঢ় পর্বতমালা সৃষ্টি করেছি, যাতে তাদের নিয়ে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে...।’ (সূরা : আম্বিয়া, আয়াত : ৩১)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর (আমি) পর্বতসমূহকে পেরেক (স্বরূপ সৃষ্টি করিনি?)।’ (সূরা : নাবা, আয়াত : ৭)

সুবহানাল্লাহ, এভাবেই মহান আল্লাহ তাঁর অসংখ্য, অগণিত নিয়ামত দ্বারা আমাদের নিশ্চিন্তে জীবনযাপনের সুযোগ করে দিয়েছেন, সেগুলো থেকে আমাদের জন্য উৎপাদন করছেন বিভিন্ন রকমের খনিজ সম্পদ, ফসল, ফল-ফলাদি। আবার সেগুলোর সৌন্দর্য নিয়ে আমাদের মনের প্রশান্তিরও ব্যবস্থা করেছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি কি দেখেন না, আল্লাহ আকাশ থেকে বৃষ্টিপাত করেন; তারপর আমরা তা দ্বারা বিচিত্র বর্ণের ফলমূল উদ্গত করি। আর পাহাড়ের মধ্যে আছে বিচিত্র বর্ণের পথ, শুভ্র, লাল ও নিকষ কালো।’ (সূরা : ফাতির, আয়াত : ২৭)

এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে মহান আল্লাহ কিছু পাহাড়কে বিচিত্র বর্ণ দিয়েও সৃষ্টি করেছেন। কোরআনের এই আয়াতটি মানুষকে অবাক করলেও এর নিদর্শন দুনিয়ার বেশ কিছু জায়গায় রয়েছে। আর তার মধ্যে অন্যতম হলো পেরুর ভিনিকুঙ্কা পর্বত, যাকে মন্টেসা ডি সিয়েটস কলোরস (সাত রঙের পর্বত) বলা হয়। এটি ভিলকান্তো পর্বতশ্রেণির একটি অংশ। নানা রঙের বাহারি সাজে সজ্জিত এই পর্বত পেরুর কুসিপাতা এবং পিটামার্কার মাঝে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৭ হাজার ১০০ ফুট (পাঁচ হাজার ২০০ মিটার) উচ্চতায় থাকা এই পর্বতকে স্থানীয় লোকজন পবিত্র বলে বিবেচনা করে থাকে।

বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাকৃতিক খনিজগুলোর জারণ, ক্ষয়, অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক কারণ এবং আর্দ্রতাই এই রঙিন পাহাড় সৃষ্টির কারণ। অতীতে কোনো এক সময় পাহাড়টি বরফের আস্তরণে আবৃত ছিল। বৈশ্বিক উন্নয়নের কার্যকলাপ এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে, সমস্ত বরফ গলে তার জায়গায় রেখে গেছে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। কাসকোর প্রাকৃতিক ভূচিত্র বিকেন্দ্রীকরণ অফিসের তদন্ত অনুসারে, পর্বতের খনিজশিল্পগুলোই সাতটি ভিন্ন রং হওয়ার কারণ। গোলাপি রংটি লাল কাদামাটি ও বালুর কারণে হয়। শুভ্র বর্ণটির কারণ আর্সেনিক ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট। ক্লেস্টোনসের (লোহা) কারণে লাল, ফিরোম্যাগনেসিয়ামের কারণে সবুজ, ম্যাগনেসিয়াম ও ফ্যাংলোমরেটের কারণে বাদামি এবং সব শেষ সালফিউরাস খনিজ সমৃদ্ধ ক্যালকেরিয়াস বেলেপাথরের জন্য সরিষার হলুদ রং।

রংধনুর রঙে রঙিন পর্বত শুধু পেরুর ভিনিকুঙ্কা পর্বতেই সীমাবদ্ধ নয়, মহান আল্লাহর এই বিস্ময়কর সৃষ্টি ইরানের উত্তর খুরাসান প্রদেশ, পূর্ব তুরস্কের ওল্টু জেলায় অবস্থিত রেইনবো হিল, আর্জেন্টিনার জুজুইতে অবস্থিত হর্নাকাল পর্বত, চীনের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ঝাংয়ে দাংজিয়া পার্কও মহান আল্লাহর সৃষ্টির অপার রহস্য ও মহান আল্লাহর অসীম শক্তির জানান দিয়ে যাচ্ছে। কালের কণ্ঠ

captcha