IQNA

মহানবী (সা.)-এর পবিত্র নামসমূহ

0:01 - October 20, 2021
সংবাদ: 3470847
তেহরান (ইকনা): মহান আল্লাহর যেমন একাধিক গুণবাচক নাম আছে, নবীজি (সা.)-এর একাধিক গুণবাচক নাম আছে। তবে নামের পরিমাণ বিষয়ে একাধিক মতামত থাকায় সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যায় সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়। সিরাত গবেষকরা মহানবী (সা.)-এর নামের সংখ্যা ৯৯ থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার পর্যন্ত উল্লেখ করেছেন। (জাদুল মাআদ, পৃষ্ঠা ২৮)
একাধিক নাম থাকার ব্যাখ্যা : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মূল নাম ‘মুহাম্মদ’। জন্মের পর দাদা আবদুল মুত্তালিব এই নাম রাখেন। পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে আল্লাহ তাঁকে মুহাম্মদ নামেই সম্বোধন করেছেন। অবশিষ্ট নামগুলো তাঁর গুণবাচক নাম, যা দ্বারা নবীজি (সা.)-এর প্রশংসা ও গুণাবলি বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য।
 
নবীজি (সা.)-এর উপনাম : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বড় ছেলে ‘কাসিম’-এর নামের সঙ্গে যুক্ত করে নবীজি (সা.) উপনাম নির্ধারণ করা হয় ‘আবুল কাসিম’ বা কাসিমের পিতা। তিনি বলেন, ‘তোমরা আমার নামে নাম রাখো। কিন্তু আমার উপনামে নামকরণ কোরো না। নিশ্চয়ই আমি আবুল কাসিম। তোমাদের মাঝে বণ্টন করি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৩৩)
 
গুণবাচক নামের প্রকার : মহানবী (সা.)-কে যেসব নামে গুণান্বিত করা হয় তা দুই প্রকার—
. এমন গুণ, যা শুধু তাঁর মধ্যেই পাওয়া যায়। অন্য কারো মধ্যে পাওয়া যায় না। সুতরাং এমন গুণবাচক নামগুলো তাঁর জন্য বিশেষায়িত। যেমন আল-আকিবু, আল-হাশিরু, আল-মুকতাফা ইত্যাদি।
 
খ. এমন গুণ, যা অন্যদের মধ্যে পাওয়া যায়। তবে নবীজি (সা.)-এর মধ্যে তা পূর্ণ মাত্রায় পাওয়া যায়। তাই এমন নাম অন্যের জন্য ব্যবহার করা বৈধ। যেমন আশ-শাহিদু, আল-মুবাশশিরু, আন-নাজিরু ইত্যাদি। (জাদুল মাআদ, পৃষ্ঠা ২৮)
 
পবিত্র কুআনে বর্ণিত নাম : পবিত্র কোরআনে নবীজি (সা.)-কে দুটি নামে সম্বোধন করা হয়েছে। তা হলো মুহাম্মদ ও আহমদ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের মধ্যে কোনো পুরুষের পিতা নন, তিনি আল্লাহর রাসুল ও শেষ নবী।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪০)
 
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘(ঈসা আ. বলেন,) নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি আমার পরবর্তী এমন একজন রাসুলের, যার নাম হবে আহমদ।’ (সুরা সাফ, আয়াত : ৬)
 
কুরআনে বর্ণিত গুণবাচক নাম : পবিত্র কোুআনের বিভিন্ন আয়াতে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ২৪টি গুণবাচক নাম আছে। নামগুলো হলো—
 
১. শাহিদ তথা সাক্ষ্যদাতা (সূরা আহজাব, আয়াত : ৪৫)
 
২. মুবাশশির তথা সুসংবাদদাতা (সূরা আহজাব, আয়াত : ৪৫)
 
৩. নাজির তথা সতর্ককারী (সূরা আহজাব, আয়াত : ৪৫)
 
৪. দায়ি ইলাল্লাহ তথা আল্লাহর দিকে আহবানকারী (সূরা আহজাব, আয়াত : ৪৬)
 
৫. সিরাজুম মুনিরা তথা প্রজ্জ্বল বাতি (সূরা আহজাব, আয়াত : ৪৬)
 
৬. মুজাক্কির তথা যিনি আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেন (সূরা গাশিয়া, আয়াত : ২১)
 
৭. রাসুল তথা প্রেরিত পুরুষ, যিনি শরিয়ত লাভ করেছেন (সূরা আহজাব, আয়াত : ৪৬)
 
৮. রাউফুর রহিম তথা কোমল হৃদয়ের অধিকারী ও দয়াশীল (সূরা তাওবা, আয়াত : ১২৮)
 
৯. রাহমাতুল-লিল-আলামিন তথা যিনি জগদ্বাসীর জন্য আল্লাহর অনুগ্রহস্বরূপ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)
 
১০. মুজ্জাম্মিল তথা চাদরাবৃত (সূরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ১)
 
১১. মুদ্দাসসির তথা বস্ত্রাবৃত (সূরা মুদ্দাসসির, আয়াত : ১)
 
১২. নবী তথা প্রেরিত পুরুষ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৬৪)
 
১৩. রাসুলুল্লাহ তথা আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ,
 
১৪. খাতামুন-নাবিয়্যিন তথা শেষ নবী (সূরা আহজাব, আয়াত : ৪০)
 
১৫. হাদি তথা পথপ্রদর্শক (সূরা আশ-শুরা, আয়াত : ৫২)
 
১৬. মাসুম তথা যিনি পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত (সূরা মায়িদা, আয়াত : ৬৭)
 
১৭. আন-নাবিয়্যুল উম্মি তথা নিরক্ষর নবী (সূরা আরাফ, আয়াত : ১৫৮)
 
১৯. সাহিবু খুলুকুল আজিম তথা উত্তম চরিত্রের অধিকারী (সূরা কালাম, আয়াত : ৪)
 
২০. নুর তথা জ্যোতি (সূরা মায়িদা, আয়াত : ১৫)
 
২১. কায়িমুন আলাল-হাক তথা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত (সূরা নামল, আয়াত : ৭৯)
 
২২. কারিম তথা সম্মানিত (সূরা দুখান, আয়াত : ৪৯)
 
২৩. মুবিন তথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনাকারী (সূরা হাজর, আয়াত : ৮৯)
 
২৪. শাহীদ তথা তা সাক্ষ্যদাতা (সূরা হজ, আয়াত : ৭৮)
 
এ ছাড়া নবীজি (সা.)-এর আরো কিছু নাম আছে।
 
আরো কিছু নাম : উল্লিখিত নামগুলো ছাড়াও হাদিস ও সিরাত গ্রন্থে নবীজি (সা.)-এর যেসব নাম পাওয়া যায় তার কয়েকটি হলো—
 
১. মুকাফফা (শেষ নবী),
২. সাইয়িদু উলদি আদম (আদম সন্তানদের নেতা),
৩. হাবিবুল্লাহ (আল্লাহর প্রিয়),
৪. মুখতার (নির্বাচিত),
৫. মোস্তফা (নির্বাচিত)
৬. মুজতাবা (বাছাইকৃত),
৭. সাদিক (সত্যবাদী),
৮. মাসদুক (যাকে সত্যায়ন করা হয়েছে),
৯. আমিন (বিশ্বস্ত),
১০. সাহিবুল মিরাজ (যিনি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন),
১১. সাইয়িদুল মুরসালিন (নবী-রাসুলদের নেতা),
১২. সাহিবু কাউসারে (হাউসে কাউসের অধিকারী) ইত্যাদি। (বিস্তারিত দেখুন : আসমাউন-নাবি, পৃষ্ঠা ৫৩-৭৫)
captcha