IQNA

ইরান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির তুলনামূলক পর্যালোচনা

16:14 - January 16, 2022
সংবাদ: 3471290
তেহরান (ইকনা): ইরানের সামরিক শক্তি অপ্রচলিত ও অপ্রথাসিদ্ধ রণকৌশল ও কৌশলগত স্থান সমূহে (অধিষ্ঠিত) প্রক্সি সমূহের মাধ্যমে জোরদার ( ও সমৃদ্ধ ) হয় ।

সমর কৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন :  প্রযুক্তি , জৌলুস ও চাকচিক্য এবং অগ্নিশক্তির ( আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলা বারুদের শক্তি ও ক্ষমতা ) দিক থেকে ইরানের সামরিক অস্ত্র  ভাণ্ডার আসলে কখনোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমান ও সমকক্ষ হতে পারে না । কিন্তু তেহরান রণকৌশল এবং কৌশলগত জায়গা সমূহে (তার বসানো প্রক্সি সমূহের ) সংখ্যার মাধ্যমে তা ( সামরিক শক্তির এই অসমতা ) পূরণ করছে ও পুষিয়ে নিচ্ছে।

 

(( অনুবাদকের টীকা ১ : ইরানের বাৎসরিক সামরিক ও জাতীয় বাজেট যথাক্রমে ৮ বিলিয়ন ও ১১৯ বিলিয়ন ডলার এবং বাজেট ঘাটতি প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার । কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাৎসরিক সামরিক ও জাতীয় বাজেট যথাক্রমে ৭৬৬•৫৮ বিলিয়ন ও ৬ ট্রিলিয়ন ( ৬০০০বিলিয়ন ) ডলার এবং দেশটির বাজেট ঘাটতি ১•৮ ট্রিলিয়ন ( ১৮০০বিলিয়ন ) ডলার।

স্মর্তব্য যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান বিপ্লব ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিপ্লবী পদক্ষেপ ও নীতি অবস্থানের কারণে ৪২ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধের শিকার যদিও সাম্প্রতিক দশকে পারমাণবিক বিষয়কে কেন্দ্র করে এ অবরোধ ( তাহরীম ) অত্যন্ত কঠোর ও তীব্রতর হয়েছে। যা হোক, ইরানের প্রায় ৯৬ বছরের সামরিক বাজেটের সমান হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক বছরের সামরিক বাজেট এবং ইরানের ৫০ বছরের জাতীয় বাজেটের পরিমাণ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক বছরের জাতীয় বাজেট! ইরানের ভৌগলিক আয়তন : প্রায় ৬৫০,০০০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা প্রায় ৮৫ মিলিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগলিক আয়তন: প্রায় ৩,৩০০,০০০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা: প্রায় ৩২০ মিলিয়ন। সুতরাং এ দুই দেশের মধ্যে কোনো দিক থেকেই তুলনা চলে না। এ ছাড়া মহাশক্তিধর ন্যাটো , এবং বিশ্বের অন্যান্য উন্নত ও শক্তিধর দেশ যেমন: কানাডা , অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড , জাপান , দক্ষিণ কোরিয়া , তাইওয়ান , মিসর , জর্দান , ইসরাঈল , সৌদি আরব সহ পারস্য উপসাগরীয় তেল সমৃদ্ধ দেশ সমূহও আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিত্র হিসেবে। সম্পদ , অর্থবল , লোকবল , বিজ্ঞান - প্রযুক্তি , শিল্প , সৈন্য সামন্ত , যুদ্ধাস্ত্র ইত্যাদি সব দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুনিয়ার ১ নং পরাশক্তি যা বিশ্বের বিরাট অংশের ওপর প্রভুত্ব ও আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে এবং ফির'আওন , হামান , শাদ্দাদ , নমরুদ , আবরাহা এবং অতীতের যে কোনো তাগুত ও যালিমের চেয়েও অধিক শক্তিশালী  অর্থাৎ পবিত্র কুরআনের মতে শিরক ও কুফরের প্রতিভূ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা হচ্ছে ফিআতুন্ কাসীরাহ্ ( فِئَةٌ کَثِیْرَةٌ ) বা খোদাদ্রোহী তাগুতী বড় দল ও গোষ্ঠী। বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান এবং হিযবুল্লাহ , হামাস , ফিলিস্তীনী প্রতিরোধ সংগ্রামী গ্রুপ সমূহ , ইয়েমেনের হুথি আন্দোলন ও আনসারুল্লাহ , ইরাকের আল - হাশদুশ শা'বী ও অন্যান্য প্রতিরোধ সংগ্রামী গ্রুপ , সিরিয়া , আফগানিস্তান ও বাহরাইনের প্রতিরোধ সংগ্রামীরা , ভেনেজুয়েলার মতো কিছু  সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশ যারা ইরানের আদর্শিক সংগ্রামী মিত্র তারা পবিত্র কুরআনের ভাষায় ফি'আতুন্ ক্বলীলাহর ( فِئَةٌ قَلِیْلَةٌ ) বাস্তব নমূনা। সত্যপন্থীরা সব সময় ফিআতুন ক্বলীলা ( ক্ষুদ্র বা ছোট দল ও গোষ্ঠী ) এবং বাতিল পন্থীরা সবসময় ফিআতুন্ কাসীরাহ্ ( বড় দল বা বৃহৎ গোষ্ঠী ) এবং এদের মধ্যে দ্বন্দ্ব - সংঘাত ও সংগ্রামের কথা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে । এরশাদ হচ্ছে : আল্লাহর হুকুমে ( অনুমতি ক্রমে ) কত ক্ষুদ্র দল কত

বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে ! আর আল্লাহ ধৈর্যশীল ( সাবির ) দের সাথে আছেন ( সূরা -ই বাক্বারাহ্ ২ : ২৪৯ ) ।

کَمْ مِّنْ فِئَةٍ قَلِيْلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً کَثِيْرَةً بِإِذْنِ اللّٰهِ ، وَ اللّٰهُ مَعَ الصَّابِرِيْنَ .

       এছাড়াও সমসাময়িক কালে ফিআতুন্ কাসীরাহ , ফিআতুন্ ক্বলীলাহ কর্তৃক পরাভূত হওয়ার আরো বেশ কিছু ঘটনা ও উপমা বিদ্যমান রয়েছে । যেমন : লেবাননের হিজবুল্লাহ আন্দোলন দুবার ইসরাঈলকে  ২০০০ সালে এবং ২০০৬ সালের ৩৩ দিনের যুদ্ধে , হামাস ও ফিলিস্তীনী প্রতিরোধ সংগ্রামীরা ইসরাইলকে ৫টি ইসরাঈল - গাযা যুদ্ধে পরাজিত করে । আর নি: সন্দেহে ইসরাঈল ফিআতুন্ কাসীরাহর ( বৃহৎ দল ) বাস্তব নমূনা বা মিসদাক  এবং হিজবুল্লাহ , হামাস ও ফিলিস্তীনী প্রতিরোধ সংগ্রামীরা ফিআতুন্ ক্বলীলাহর বাস্তব উদাহরণ ( মিসদাক ) । আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সার্বিক সমর্থন পুষ্ট সৌদি নেতৃত্বাধীন ৩৩ জাতি জোট ইয়েমেনের আনসারুল্লাহর বিরুদ্ধে ৭ বছর ধরে আগ্রাসন ও যুদ্ধ চালিয়ে জয়লাভ করতে পারে নি । আনসারুল্লাহ ফিআতুন ক্বলীলাহ হয়েও পূর্ণ ঈমান নিয়ে মহান আল্লাহর রাহে বীরত্বের সাথে আগ্রাসী যালিম ফিআতুন কাসীরাহ্ সৌদি - আমীরাতের নেতৃত্বাধীন ৩৩জাতি জোটের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও জিহাদ করে যাচ্ছে । আর নি: সন্দেহে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত এবং এই আগ্রাসী ৩৩ জাতি জোট ফিআতুন্ কাসীরাহর বাস্তব প্রতিভূ । আসলে মহান আল্লাহয় পূর্ণ ঈমান , তাক্বওয়া , তাওয়াক্কুল (ভরসা) নিয়ে সত্য , ন্যায়নীতি ও আদালতের ( ন্যায়পরয়ণতা ) উপর দৃঢ়পদ থেকে অর্থাৎ খাঁটি ইসলামী আদর্শ নিয়ে জিহাদ ও সংগ্রাম করলে মহান আল্লাহ মুজাহিদ দেরকে এ সংগ্রাম ও জিহাদের পরিণতি , প্রতিদান ও পুরস্কার ইহদাল্ হুসনায়াইন্ ( বিজয় ও শাহাদাত অর্থাৎ এ দুই মংগলের একটি ) দেবেনই । এটা হচ্ছে মহান আল্লাহর ওয়াদা ( প্রতিশ্রুতি ) । ইমাম খোমেইনীর ( রহ ) নেতৃত্বে ইরানে ইসলামী বিপ্লব বিজয় হওয়ার পর থেকে ৪৩ বছর ধরে ইরানী জাতি  ফিআতুন্ ক্বলীলাহ হয়ে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ফিআতুন কাসীরাহ্ অর্থাৎ বড় শয়তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিশ্বগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী শয়তানী চক্রের বিরুদ্ধে অক্লান্ত সংগ্রাম করেই যাচ্ছে এবং মহান আল্লাহ পাক সংগ্রামরত ইরানকে যে বিজয়ী , সম্মানিত ও পুরস্কৃত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরাজিত পরাভূত ও লাঞ্ছিত করেছেন তা মার্কিন সংবাদ ও প্রচার মাধ্যম সি এন এনের এ প্রবন্ধ পড়ে বোঝা ও উপলব্ধি করা যায় এবং এ থেকে আবারো প্রমাণিত হয় পবিত্র কুরআনের এ শ্বাশত চিরন্তন বাণী : মহান আল্লাহর হুকুমে কত ক্ষুদ্র দল কত বৃহৎ দলকে পরাভূত করেছে এবং মহান আল্লাহ ধৈর্যশীল ( সাবির ) দের সাথে আছেন । আর এ বিজয়ের শর্ত হচ্ছে ধৈর্য্য অর্থাৎ ধৈর্যের সাথে ঈমানদার গণ আল্লাহর পথে জিহাদ ও সংগ্রাম করলে মহান আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দেবেনই এমনকি তারা ক্ষুদ্র দল ( ফিআতুন ক্বলীলাহ ) হলেও ।

এ ছাড়াও যারা  মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে তিনি তাদেরকে তাঁর পথসমূহের নির্দেশনা দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পবিত্র কুরআনে । এরশাদ হচ্ছে :

যারা আমাদের পথে সংগ্রাম করে আমরা তাদেরকে অবশ্যই আমাদের পথসমূহের নির্দেশনা দান করব এবং নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পূণ্যকর্মশীলদের সাথে আছেন ( অর্থাৎ তাদের সাথী ) । ( সূরা - ইং আনকাবূত্ ২৯ : ৬৪ )

وَ الَّذِيْنَ جَاهَدُوْا فِيْنَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا . وَ إِنَّ اللّٰهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِيْنَ .

মহান আল্লাহ পাক ইরানী জাতিকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে মহান আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার কারণে তাদেরকে বিজয়ের বিভিন্ন পথ ও পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন যার ফলে আজ বড় শয়তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা অস্থির , ভীত , বিচলিত , উদ্বিগ্ন ও পর্যদুস্ত । আর এ বিষয়টা এ প্রবন্ধ পাঠ করে বেশ ভালো ভাবে উপলব্ধি করা যায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , পাশ্চাত্য ( ন্যাটো ) , ব্রিটেন কেন ইরানের আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যাপী আদর্শিক প্রভাব এবং সমর শক্তি যেমন : ১.ক্ষেপনাস্ত্র , ২.নৌ শক্তি , ৩.আকাশ প্রতিরক্ষা এবং ৪. অপ্রচলিত অপ্রথাসিদ্ধ ( unconventional ) অথচ কার্যকর শক্তি ও প্রক্সি সমূহ নিয়ে যার পর নাই খুবই উদ্বিগ্ন , কিংকর্তব্যবিমূঢ় , হতভম্ব ও শংকিত । আর আপনারা সুপ্রিয় পাঠকমণ্ডলী এ সব বিষয় সম্পর্কে সিএনএনের এ প্রবন্ধ বিস্তারিত পড়ে মুজাহিদ ইসলামী বিপ্লবী ইরানের প্রতি মহান আল্লাহর অপার

অনুগ্রহ ( আলতাফ ) এবং এ সত্য কারামতটাও উপলব্ধি করতে পারবেন যে মহান আল্লাহ ইরানের মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলারের বাৎসরিক সামরিক বাজেটকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলারের বাৎসরিক সামরিক বাজেটের সমান বা তার চেয়েও বেশি কার্যকর করে দিয়েছেন । এটাই হচ্ছে মহান আল্লাহর অশেষ বরকত , রহমত ও অপার করুণা । শুধু তাই নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি বিশাল বাৎসরিক সামরিক বাজেট নিয়ে ন্যাটো জোট এবং ঠিক তেমনি বিশাল বাৎসরিক সামরিক বাজেট নিয়ে ইসরাইল ও অত্র অঞ্চলের প্রতিক্রিয়া শীল আরব রাষ্ট্রগুলোও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একত্রে কাজ করছে মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলারের বাৎসরিক সামরিক বাজেটের অধিকারী ইরানের বিরুদ্ধে । কিন্তু এরা সবাই ইরানের সাথে কুলিয়ে ও পেরে উঠতে  পারছে না ! এটা কি মহান ইমাম খোমেইনী ও ইসলামী বিপ্লবের কারামত নয় ?! সুধী পাঠক বর্গ ভাবুন চিন্তা করুন । ----- অনুবাদকের টীকা ১ সমাপ্ত ))

 

এখানে ইরানের সামরিক শক্তির উপাদান সমূহ কিভাবে কাজ করে তা আলাদা আলাদা করে উল্লেখ ও আলোচনা করা হচ্ছে ।

ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি:

ইরাকস্থ যে সব সামরিক ঘাঁটিতে  মার্কিন সৈন্যরা অবস্থান করছে সেগুলোয় গত বুধবার ইরানের আক্রমণ থেকে দেখা যাচ্ছে যে  নির্ভর করা যায় এমন কিছু ( কার্যকর ) ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইরান উদ্ভাবন করেছে ।

 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক কম্যান্ডের যুগ্ম গোয়েন্দা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক কার্ল্ শুষ্টার্ বলেন :

এ আঘাত গুলো থেকে প্রতীয়মান ও প্রমাণিত হয় যে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র সমূহের সুক্ষ্ম ও নির্ভুল গাইডেন্স সিস্টেম আছে ।  তিনি আরো উল্লেখ করেন যে মার্কিন লক্ষ্যবস্তু সমূহের দিকে ছোরা ১২টির বেশি ক্ষেপণাস্ত্র একজন মার্কিন সেনারও মৃত্যুর কারণ হয় নি যে সম্পর্কে তিনি এবং অন্য সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা ছিল না বরং তা ছিল (ইরানীদেরই) পরিকল্পনা ।

 

[ অনুবাদকের টীকা ২ : ইরানীদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্য ছিল  মার্কিন সেনাদেরকে ( মানুষ ) হত্যা নয় বরং মার্কিন সামরিক অস্ত্র , সাজসরঞ্জাম ও স্থাপনা যেমন :  ঘাঁটিতে হেলিকপ্টার , যুদ্ধবিমান , হ্যাঙ্গার , অস্ত্র গুদাম ও রসদপত্র অর্থাৎ মার্কিন ওয়ার মেশিনের ধ্বংস সাধন ; আর এ কারণেই তারা ( ইরানীরা ) মার্কিন সৈন্য ও পার্সোনেলদের ডর্মেটরীতে সরাসরি কোনো ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় নি । বরং তারা ঘাঁটিগুলোর হেলিকপ্টারের জায়গা ও বিমানের হ্যাঙ্গার ও অস্ত্র শস্ত্র ও গোলাবারুদের গুদাম ও স্টোর এবং সামরিক স্থাপনা সমূহে অক্রমণ চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে । আর এ সব ক্ষেপনাস্ত্র নিখুঁত ও সুক্ষ্ম আঘাত হেনেছে ঐ সব লক্ষ্যবস্তুর ওপর । যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামলার পরপরই বলেছিল যে তাদের কোনো পার্সোনেল এ হামলায় নিহত বা আহত হয় নি । কিন্তু কিছু দিন পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার স্বীকার করে যে এ হামলায় শতাধিক মার্কিন সৈন্যের ব্রেইন ইনজুরি হয়েছে অর্থাৎ মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । আর হামলার সময় উক্ত ঘাঁটিতে উপস্থিত ইরাকী কর্মচারীদের উদ্ধৃতি দিয়ে ইরাকী গ্রুপ সমূহ ৮০ জনের অধিক মার্কিন পার্সোনেল নিহত ও বেশ কিছু সংখ্যক আহত হওয়ার খবর প্রকাশ করেছিল। যদি এরা নিহত হয়ে থাকে তাহলে এরা হয়তোবা ক্ষেপণাস্ত্র গুলো যে সব স্থান আঘাত করেছিল সে সব স্থানে অথবা সেগুলোর আশে পাশে ও নিকটে ছিল । ইরানীরা মার্কিন সেনা ও কর্মচারীদের ডরমেটরী লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত এবং কয়েক শোর অধিক মার্কিন সেনা ও কর্মচারী ( সার্ভিসমেন ) নিহত হত । কিন্তু ইরানীরা এ হামলার দ্বারা মানুষ হত্যা করতে চায় নি । ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা হযরত আয়াতুল্লাহ আল উযমা ইমাম খামেনেঈর মতে এটা শহীদ জেনারেল কাসেম সুলাইমানীর হত্যার আসল প্রতিশোধ ছিল না বরং এটা ছিল চপেটাঘাত মাত্র । - অনুবাদকের টীকা ২ সমাপ্ত ]

 

এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ইরান আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকার বার্তাও শত্রুপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে ইরান । কারণ , ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার যা হচ্ছে আই আই এস এসের (  ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিয্ ) রিপোর্ট অনুযায়ী অত্র অঞ্চলের বৃহত্তম অস্ত্র ভাণ্ডার তার আওতায় ভালোভাবে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে সৈন্য সহ ডজন ডজন মার্কিন সামরিক স্থাপনা।

 

জেমস মার্ক নামের একজন অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন জেনারেল এবং সিএনএনের বিশ্লেষক বলেন : তারা ( ইরানীরা ) ইচ্ছা করলে প্রায় অনেক কম অর্থাৎ ন্যূনতম পূর্ব সতর্কতা সহকারেই এ সব অবস্থান ও স্থাপনার ওপর আঘাত হানতে সক্ষম। প্রায় ৬০,০০০ মার্কিন সৈন্য বিপদ ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

 

আই এস এসের নভেম্বর ২০১৯ এর রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি ধ্বংস সংক্রান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত যে কোনো প্রচেষ্টা ও পদক্ষেপ বড় বড় বাঁধা ও চ্যালঞ্জের সম্মুখীন হবে ।

 

ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে : নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্রের টিকে থাকার (সার্ভাইভ্যাবিলিটি) সময়কাল বৃদ্ধি করার জন্য  ইরান ভ্রম্যমান লঞ্চার ( উৎক্ষপনমঞ্চ ) এবং টানেলের ওপর নির্ভরশীল । আর দেশের আনাচে কানাচে এ সব মিসাইলের লঞ্চিং প্যাড (সমগ্র দেশ জুড়ে )ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা আছে ।

 

ঐ রিপোর্টে বলা হয়েছে : এ সব ফ্যাক্টর বা কারণের জন্যই শত্রুর পূর্বাক্রমণ এবং  ( শত্রু কর্তৃক ইরানীক্ষেপণাস্ত্র হামলা ) প্রতিহত করার বিষয়টি কঠিন ও জটিল হয়ে গেছে ।

 

নৌ শক্তি:

যেখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত মার্কিন নৌবাহিনীর বড় বড় যুদ্ধ জাহাজ আছে , সেখানে ইরান সমুদ্রে সুচিন্তিত ভাবে ভিন্ন এক ধরনের পথ ও পদ্ধতি গ্রহণ করেছে । আর তা হচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমণ ও হামলা করার রণকৌশল ।

 

২০১৫ সালে একটি অত্যন্ত দেখার মতো সামরিক মহড়ায় ইরানের ইসলামী বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর নৌবাহিনী শাখা পারস্য উপসাগরে মার্কিন বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ ইউ এস এস নিমিতযের রেপ্লিকায় বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে তা উড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১০০ টি ছোট বোট ব্যবহার করেছিল ।

 

সৈন্যরা ছোট ছোট বোটে চড়ে নিমিযতের রেপ্লিকার দিকে কাঁধে বহন যোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র , রকেট এবং মর্টার নিক্ষেপ করে । ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে নিমিতযের রেপ্লিকা থেকে অগ্নি কুণ্ডলি ও ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে ।

 

  আই আই এস এসের রিপোর্টে প্রকাশ : ইরানের ৩০০০ - ৫০০০ টি এ ধরণের ছোট ছোট বোট আছে এবং এ গুলো ব্যবহার করার সবচেয়ে উপযুক্ত ও ভালো জায়গা বা স্পট হচ্ছে পারস্য উপসাগরে প্রবেশ স্থলের মুখে অবস্থিত হোর্মুয প্রণালী ( The strait of Hormuz ) ।

 

   আই আই এস এসের রিপোর্টে বর্ণিত হয়েছে : সার্প্রাইজ ( চমক ও বিস্ময়) , কনফিউশন ( সংশয় ও বিহ্বলতা )  ও স্পিড( বেগ ও গতি ) --- এ সব কিছু বোটগুলোর কার্যকারিতার জন্য অতিপ্রয়োজনীয় ও অপরিহার্য। হোর্মূয প্রণালীর আবদ্ধ জায়গা ( confined space ) যা এর সবচেয়ে সংকীর্ণ ও সরু ( narrow ) স্থানে প্রায় ৩২ কি.মি. ( ২০ মাইল ) চওড়া তা ছোট ছোট বোটের ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমণ সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় ।

 

    ২০১৫ সালের ঐ সব মহড়া ও ড্রিল চলাকালে , ইরান সামুদ্রিক মাইন পাতারও অনুশীলন করেছিল । ১৯৮৬ সালে একটি ইরানী সামুদ্রিক মাইন ইউএসএস স্যামুয়েল বি. রবার্টস নামের মার্কিন ফ্রিগেট প্রায় ডুবিয়েই দিয়েছিল ।

 

   শুষ্টার বলেন : এ মাইনে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালের মহড়া  চলাকালে একজন ইরানী কম্যান্ডার বলেছিলেন : ইরান এমনকি ( এতদ সংক্রান্ত ) আরো ভালো ও উন্নত প্রযুক্তি ও কৌশল ( know how ) উদ্ভাবন করেছে ।

 

   ইরানী নৌবাহিনীর তদানীন্তন কম্যান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল আলী ফাদাভী বলেছিলেন : " আমাদের রয়েছে সবচেয়ে উন্নত ধরণের সামুদ্রিক মাইন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কল্পনাও করতে পারবে না ।"

 

ইরান মাইন সমূহ নিয়েও সংখ্যা সমূহের খেলা খেলে । মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা এজেন্সি বলেছে : ইরানের নতুন ও পুরোনো ভার্সনের ( সবকটি মিলিয়ে ) ৫০০০ টি এ ধরণের ( সামুদ্রিক বা জল ) মাইন আছে ।

 

আইআইএসএস বলছে : ইরান  এড়ানোর কৌশল প্রয়োগ করে ঐ সংখ্যাগুলো বাড়িয়ে বলে।

 

   আইআইএসএস বলছে : ইরান হাজার হাজার ভুয়া নকল মাইনের সাথে সত্যিকার মাইন ব্যবহার করতে পারে । আর এভাবে মাইন পরিস্কারকারীদের জন্য মাইনের হুমকি প্রশমনের কাজ অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে এবং শত্রুর নৌ শক্তি মোতায়েন ও চলাচলের গতিও কমে ও শ্লথ হয়ে যাবে ।

 

আকাশ প্রতিরক্ষা

 

   শুষ্টারের ধারণা মতে ইরানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ব্যাপক ও বিশাল কলেবরে হামলার শুরুতেই ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষার সাইটগুলো খুব সম্ভবত দুর্বল হয়ে যাবে ।

 

কিন্তু ইরান তা জানে এবং এ কারণেই ইরান তার নিজস্ব উন্নত ও অগ্রসর ভ্রাম্যমান ( মোবাইল ) আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছে । তা সমম্বিত ও সংহত (ইনটেগ্রেটেড ) রাডার ও মিসাইলে সজ্জিত যা সবচেয়ে উঁচুতে উড্ডয়নরত মার্কিন যুদ্ধ বিমান ও উড়জাহাজকে টার্গেট ( তাক করে আঘাত ) করতে সক্ষম ।

 

আইআইএসএস বলছে : সেভভোমে খোর্দাদ নামের মিসাইল সিস্টেম ব্যবহার করেই ইরান ২০১৯ সালের জুন মাসে একটি মার্কিন ড্রোন ( অত্যাধুনিক ও সবচেয়ে দামী ২৩০ মিলিয়ন ডলারের গ্লোবাল হক ড্রোন ) ভূপাতিত করে ।

 

  ২০১৭ সাল থেকে রাশিয়ার সরবরাহ কৃত দূর পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য SA-20c ক্ষেপণাস্ত্র ইরানের অধিকারে রয়েছে । ২০১৯ সালে ইরানের সামরিক শক্তির মূল্যায়ন (মিলিটারি অ্যাসেসমেন্ট ) কালে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা এজেন্সির ( ডিআইএ ) মতে রাশিয়ার সরবরাহ করা এ সিস্টেম ইরানের সমম্বিত (ইন্টেগ্রেটেড )আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সবচেয়ে বেশী কার্যকর উপাদান ( component ) ।

 

অপ্রচলিত অপ্রথাসিদ্ধ শক্তি ও প্রক্সি সমূহ :

 

   ৩রা জানুয়ারি ২০২০   মার্কিন আক্রমণে ইরান নিজ সীমান্তের বাইরে অর্থাৎ বিদেশের ভূমিতে সামরিক অভিযান পরিচালনা কারী কম্যান্ডারকে ( জেনারেল কাসেম সুলাইমানী) হারালেও সোলাইমানী কর্তৃক সংগঠিত ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মিত্র ও প্রক্সিদের বিশাল ব্যাপক নেট ওয়ার্কের কাউকেই হারায় নি ইরান ।

 

    মার্কিন ডিআইএ অনুসারে এরা ( এই মিত্র ও প্রক্সিরা ) হচ্ছে লেবানন ও অন্যত্র বিদ্যমান হিযবুল্লাহ , ইয়েমেনে হুসিরা , ইরাকে শিয়া মিলিশিয়ারা , আফগানিস্তানে তালেবান , বাহরাইনে জঙ্গীরা এবং অন্যান্যরা ।

 

     ডিআইএ বলছে : এরা সবাই ইরানের মাধ্যমে রাইফেল থেকে শুরু করে রকেট ও ড্রোন পর্যন্ত সব ধরণের অস্ত্র শস্ত্র ও হাতিয়ারে সজ্জিত ( রয়েছে )।

আর কতিপয় বিশ্লেষকের মতে এরা ( এ সব মিত্র ও প্রক্সি ) তেহরানকে যে কোনো আঞ্চলিক সংঘাতে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী (upper hand ) করে থাকে।

   *

[[ অনুবাদকের টীকা ৩ : ইরান যেমন ভাবে ইরাক থেকে মার্কিন দখলদার বাহিনী ও আল - কায়দা ও দায়েশের ( আইসিস ) মতো কুখ্যাত সন্ত্রাসীদেরকে এবং সিরিয়া থেকে আল-কায়েদা , আইএসের ( দায়েশ ) মতো কুখ্যাত জঙ্গী সন্ত্রাসীদেরকে বের করে দিয়েছে ও পরাস্ত করেছে ঠিক তেমনি ইরান , আফগানিস্তান থেকেও দখলদার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বহিষ্কার করেছে এবং এ কারণেই তালিবান শিরোনামে নয় বরং আফগানিস্তানে মার্কিন দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সকল সংগ্রামী মুক্তি যোদ্ধাদেরকে সব ধরণের প্রয়োজনীয় সাহায্য  করেছে , দিক নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় শিক্ষা - প্রশিক্ষণ দিয়েছে যা লেখক ব্র্যাড লেন্ডেনও এ লেখায় ( ৯-১-২০২০ ) স্বীকার করেছেন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের বের হয়ে যাওয়ার ঠিক এক বছর ৮ মাস আগেই ! আর বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ত্যাগ করলে দেশটিতে তীব্র খাদ্য ও অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সংকটের সময় খাদ্য , ওষুধ , পরিশোধিত জ্বালানি তেল ইত্যাদি সরবরাহ করে দুর্দিনে ভ্রাতৃপ্রতিম আফগান জাতির পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান ।

অনুবাদকের টীকা ৩ সমাপ্ত ]]

 

    আইআইএসএসের ডিরেক্টর জেনারেল ও প্রধান নির্বাহী জন চিপম্যান গত নভেম্বরে ( ২০১৯ ) এক ভাষ্যে ( commentary ) লিখেছেন : তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যুদ্ধ বিগ্রহ চালানোর এক সার্বভৌম ( sovereign ) যোগ্যতা ও দক্ষতা উদ্ভাবনের মাধ্যমে ইরান মধ্য প্রাচ্যে  কার্যকর প্রভাব বিস্তার কারী শক্তির ভারসাম্য নিজের অনুকূলে নিয়ে এনেছে ( অর্থাৎ নিজের পক্ষে জড় করেছে )।

 

    চিপম্যান বলেন :  ৪০ বছর ধরে বিশ্ব ব্যবস্থা ও আইন অমান্য কারী  বিদ্রোহী এবং এ ব্যবস্থার বিকল্প ( শক্তি ) হিসেবে টিকে থাকার কারণে ইরান তার ( মিত্র ও ) প্রক্সিদের কাছ থেকে শ্রদ্ধা , সম্মান ও আনুগত্য অর্জন করেছে ।

আর ইরানের এই প্রক্সি শক্তিগুলোকে বিরত রাখা ও থামিয়ে ফেলারও কোনো কার্যকর পথ ও পদ্ধতি বিদ্যমান নেই ইরানের শত্রুদের সামনে!!

 

   শুষ্টার বলেন : প্রক্সিরা ইরানের যুদ্ধ ও লড়াই ,এ দেশটির সীমান্তের বাইরে অর্থাৎ বিদেশেও সম্প্রসারিত করে দিচ্ছে।

 

   তিনি ভারত মহাসাগরের সাথে লোহিত সাগরকে যুক্ত কারী বাবুল মান্দাবের দিকে  ইঙ্গিত করেন । আর এটা ( বাবুল মান্দাব ) ইয়েমেনের সৈকত ও তীরের ঠিক উল্টো অর্থাৎ বিপরীত দিকে অবস্থিত । আর এ স্থান বা অঞ্চলটি ( ইয়েমেনের এই সমুদ্র সৈকত ও তীরবর্তী অঞ্চল ) তেহরানের মিত্র হুথিদের নিয়ন্ত্রণে ।

 

  শুষ্টার বলেন : তূলনা মূলক  সংকীর্ণ এ প্রণালীটিকে( বাবুল মান্দাব ) হুথিদের কাছে ইরান কর্তৃক সরবরাহ কৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে ছেয়ে ও ঢেকে ফেলা যায় (আর এ ভাবে উক্ত বাবুল মান্দাব প্রণালী ইরানের পক্ষেও বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব ) ।

 

এগুলো হচ্ছে এমন সব সামুদ্রিক জলপথ যেগুলো অবশ্যই মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজগুলোকে পাড়ি দিতে ও অতিক্রম করতেই হবে যদি তারা ভূমধ্য সাগর থেকে ভারত মহাসাগরে যাওয়ার জন্য সুয়েজ ক্যানেলকে ব্যবহার করে ।

 

   শুষ্টার বলেন : হুথিরা কাউকে যদি সমুদ্র তটে মোতায়েন করে ওখান দিয়ে অতিক্রমকারী কোনো মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের দিকে  তাক করে এক ঝাঁক রকেট ছুড়ে সেগুলো বিস্ফোরিত করে দেয় এমনকি সেগুলো যদি সুক্ষ্ম ও সঠিক ( exact ) আঘাত নাও হানে তাহলেও তা (শত্রুদের প্রতি শক্ত ও কঠিন ) বার্তা পাঠাবেই ।

 

( অনুবাদকের টীকা ৪ : হোর্মূয্ প্রণালীর মতো বাবুল মান্দাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । ভূমধ্যসাগর তথা ইউরোপ থেকে ভারত মহাসাগরে যাতায়াতের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সামুদ্রিক বাণিজ্যিক রুটের প্রবেশদ্বার বা ফটক হচ্ছে এই বাবুল মান্দাব । এই বাবুল মান্দাবের মাধ্যমেই ইউরোপ পূর্ব আফ্রিকার সাথেও যুক্ত এবং এ পথেই পূর্ব - পশ্চিমের বাণিজ্য বা আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের সিংহভাগ সুসম্পন্ন হয় বলে এ প্রণালীকে বিশ্বায়নের শাহরগ বা প্রধান ধমণীও বলা হয়। আবার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াও এ প্রণালীর মাধ্যমে ইউরোপের সাথেও যুক্ত । তাই এ রুট অর্থাৎ বাবুল মান্দাবের নিরাপত্তার ওপর বহুলাংশে বিশ্ব বাণিজ্য নির্ভরশীল ।

বাবুল মান্দাবে যে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বিশেষ করে তা যদি মুক্ত নৌ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে । তাই বাবুল মান্দাবের নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব পাশ্চাত্য তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অত্যন্ত অপরিসীম । আর এ কারণেই হুথিরা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাশ্চাত্য - ইঙ্গ - মার্কিন - ইসরাইল - সৌদি - আমিরাতী আক্ষের সমর্থনপুষ্ট জেনারেল আবদু রব্বিহ্ মনসূর্ আল - হাদী সরকার হুথিদের নেতৃত্বাধীন আনসারুল্লাহর হাতে পদচ্যুত হলে পাশ্চাত্য বিশেষ করে ইংঙ্গো মার্কিন ইসরাইলী শয়তানী ইবলীসী অক্ষের প্রত্যক্ষ সাহায্য , মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে সৌদি - আমিরাতের নেতৃত্বাধীন তথাকথিত ৩৩ জাতি জোট ইয়েমেন এবং আনসারুল্লাহ সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ সর্বাত্মক আগ্রাসন ও যুদ্ধ শুরু করে যা ৭ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর আজও অব্যাহত আছে । জলে - স্থলে - অন্তরীক্ষে সার্বিক কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ আরোপ করে এবং ব্যাপক আক্রমণ ও ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়ে রাজধানী সানার আনসারুল্লাহ প্রশাসন ও সরকারকে উৎখাত করতে পারে নি গোটা পাশ্চাত্য ( ন্যাটো ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) এবং তাদের তল্পীবাহক সৌদি - আমিরাতের নেতৃত্বাধীন তথাকথিত এই ৩৩ জাতি জোট যদিও তারা ইয়েমেনকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে  , লক্ষাধিক ইয়েমেনী পুরুষ , নারী ও শিশু শহীদ হয়েছে এবং  মিলিয়ন মিলিয়ন ইয়েমেনী তীব্র খাদ্য সংকটের শিকার । পাশ্চাত্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাবুল মান্দাবের নিয়ন্ত্রণ আনসারুল্লাহর হাতে থেকে ছিনিয়ে নিজেদের হাতে নিতে চায় বলে এখনো তারা এ রক্তক্ষয়ী ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে । আর সৌদি আরব ও আরব আমিরাত এবং তাদের নেপথ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্য এ যুদ্ধে যে ব্যর্থ হয়েছে তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরান আক্রমণের হুমকি দিলেই ইরানও ইসরাইল ও মধ্য প্রাচ্যে অবস্থিত সকল মার্কিন ঘাঁটি ও তেলের স্থাপনা সমূহ আক্রমণ এবং হোরমূয প্রণালী বন্ধ করার পাল্টা হুমকি দেয় এবং ইরানের পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব । শুধু হোর্মূয প্রণালী বন্ধ করা নয় বরং বাবুল মান্দাব প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ারও সামর্থ্য রাখে ইরান। আর এ বিষয়টা সিএনএনের এ লেখাটি থেকে বেশ ভালো ভাবেই বোঝা যায় । আর বিশ্ব অর্থনীতিতে এ দুই প্রণালীর গুরুত্ব অপরিসীম । বরং এ প্রণালীদ্বয় জীবন প্রাণ স্বরূপ ! তাই ইরানের আশেপাশের সকল দেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছড়ি ঘুরিয়েছে ও সামরিক হামলা চালিয়েছে এবং ইরাক ও আফগানিস্তানের মতো দেশ সামরিক কায়দায় জবরদখলও করেছে । কিন্তু আজ পর্যন্ত ইরান আক্রমণ করার সাহস পায় নি। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভালোভাবেই জানে যে এ কাজ করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্ব অর্থনীতি কোলাপ্স করবে এবং সমগ্র বিশ্বজুড়ে সুপার ক্রাইসিস ( মহাসংকট ) দেখা দেবে । যেহেতু ইরানের সাথে সামরিক সংঘাত ও যুদ্ধে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশী সেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেবল ইরান আক্রমণের হুমকি দেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে । তবে রাহবার হযরত আয়াতুল্লাহ আল উযমা ইমাম খামেনেঈর দৃষ্টিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে সাক্ষাৎ সামরিক যুদ্ধে জড়াবে না বরং অর্থনৈতিক যুদ্ধ ((যেমন: তীব্র কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ )) যা ৪২ বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে কেবল সেটাই চালিয়ে যাবে ।

এ অবস্থা ও ময়দানি পরিস্থিতি থেকে আমরা মহান আল্লাহর সুন্নাত ও রীতি এবং ঐশী প্রতীজ্ঞার বাস্তব সত্যতা উপলব্ধি করতে পারি ( অনুবাদকের টীকা ৪ সমাপ্ত )।

 

[[ অনুবাদকের মন্তব্য : সিএনএনে প্রকাশিত লেখাটিতে লেখক ব্র্যাড লেন্ডেন ইরানের অপ্রচলিত অপ্রথাসিদ্ধ রণ কৌশলের চার উপাদানের পাশাপাশি আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা হচ্ছে ইরানের ড্রোন ( পাইলট বিহীন প্লেন ) তা উল্লেখ করেন নি । এই ইরান ড্রোন শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , রাশিয়া ও চীনের পরে ৪র্থ স্থানে রয়েছে এবং ড্রোন ব্যবহারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরপরই ইরানের অবস্থান দ্বিতীয় ।

ইরানী ড্রোন এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের তীব্র মাথাব্যথা ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । 

সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ

পশ্চিম এশিয়ায় ( মধ্যপ্রাচ্যে )

ইরানের বর্ধনশীল সামরিক শক্তির কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভঙ্গুর ও ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা ব্লুমবার্গের নিম্নোক্ত রিপোর্টে মার্কিন সেন্ট্রাল কম্যান্ড প্রধান জেনারেল ম্যাক্কেনযীর বক্তব্যে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে । যেহেতু

অত্র অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব নি:শেষ হয়ে যাচ্ছে ও হ্রাস পাচ্ছে সেহেতু ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দের জন্য নিত্য নৈমিত্তিক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে !

জেনারেল ম্যাক্কেনযী সতর্ক করে দিয়েছেন যে ইরান কর্তৃক ক্ষুদ্র ও মাঝারী সাইজের গোয়েন্দা ও আক্রমণ কারী ড্রোনের বহুল ও ব্যাপক ব্যবহারের অর্থ দাঁড়ায় যে কোরিয়া যুদ্ধের পর থেকে এই প্রথম বারের মতো আমরা ( মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ) পুরোপুরি বিমান শক্তির শ্রেষ্ঠত্ব ছাড়াই কার্যক্রম ও কর্ম তৎপরতা চালাচ্ছি ! " ম্যাক্কেনযী বলেন : আমরা যে পর্যন্ত ইউএএস ( পাইলট বিহীন ড্রোন ) শনাক্ত করে তা পরাভূত ( ভূপাতিত ) করার নেটওয়ার্কড (নেটওয়ার্কভুক্ত ও সংঘবদ্ধ ) ক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জন না করছি সে পর্যন্ত সুবিধা আক্রমণকারীদের ( ইরানী সশস্ত্র বাহিনী ) হাতেই ( বিদ্যমান ) থাকবে ।"

 

দেখুন :Iran Is a Daily Threat as U.S. Dominance Wanes, General Says

By Peter Martin and Anthony Capaccio

 

ইরানের ইসলামী বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনী মহান আল্লাহর উপর দৃঢ় ঈমান , তাওয়াক্কুল ( ভরসা ) নিয়ে এবং ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল উযমা ইমাম খামেনেঈর দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে স্মরণাতীতকালে সুদীর্ঘ ৪২ বছরের অধিক কাল ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত  কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধের মধ্যেও এমন সামরিক শক্তি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে যে এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বিশেষ করে ইসরাঈল এখন চোখে সর্ষে ফুল দেখছে এবং ভীত হয়ে পড়েছে । আর এটাই হচ্ছে মহান আল্লাহ পাকের ওয়াদা পবিত্র কুরআনে : যদি তোমরা মহান আল্লাহকে সাহায্য কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদ সমূহ দৃঢ় করে দেবেন ।

এসব সামরিক শক্তির ( ক্ষেপণাস্ত্র , ড্রোন , বোমারু বিমান , সাবমেরিন , যুদ্ধ জাহাজ , তোপ ট্যাং ইত্যাদি ) চেয়েও মহান আল্লাহর উপর ঈমান ,তাওয়াক্কুল( ভরসা ) ,নৈতিক মনোবল , উন্নত ও কার্যকর রণকৌশল , সামরিক প্রশিক্ষণ ও টেকনিক এবং মহান আল্লাহর সাহায্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও যুদ্ধ বিজয়ে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে । অর্থাৎ এ সব হাতিয়ার ও অস্ত্রের চাইতেও এই ঈমান , তাওয়াক্কুল ও নৈতিক মনোবল অধিক শক্তিশালী যা ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর আছে এবং যা দুশমনদের নেই ।

অনুবাদকের মন্তব্য সমাপ্ত ]]

 

অনুবাদ : ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওলায় মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

২৫ দেই ১৪০০ সৌর হিজরী

১৫ জানুয়ারি ,২০২২

captcha