IQNA

গত শতকের হজযাত্রা

হাজিদের জন্য বন্দরনগরীতে ছিল বিনা মূল্যের বিশ্রামখানা

18:36 - June 30, 2022
সংবাদ: 3472060
তেহরান (ইকনা): ১৭ মার্চ রবিবার সকালে বোম্বে পৌঁছি। অপরিচিত ব্যক্তিদের জন্য বোম্বে খুব সহজ কোনো জায়গা ছিল না। যদিও বোম্বে কোনো অশিক্ষিত গ্রাম্য মানুষের আবাস নয়, বরং তা উচ্চশিক্ষিতদের শহর। তার পরও যদি পূর্ব থেকে জানাশোনা বা পরিচিতজন না থাকে, তবে প্রথমবার বোম্বে এলে মাথা ঘুরে যায়।

বোম্বেতে হাজিদের জন্য একাধিক বড় ও আরামদায়ক মুসাফিরখানা আছে। যেখানে হাজিরা কোনো ভাড়া ছাড়াই অবস্থান করতে পারে। মরহুম হাজি শেঠ সাবু সিদ্দিকের মুসাফিরখানা ক্রাফোর্ড মার্কেটের পাশেই বড় স্টেশন (ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস) থেকে কয়েক ‘ফার্লং’ (এক ফার্লং সমান ৬৬০ ফুট) দূরে অবস্থিত। এটিই সবচেয়ে আরামদায়ক মুসাফিরখানা। এর তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন মৌলভি হজরতুল্লাহ, যাঁর চেহারার দীপ্তি তাঁর আত্মিক পবিত্রতার সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর সহকারী ছিলেন মুনশি আবদুস সাত্তার, যিনি মানুষের প্রতি অত্যন্ত সদয় ছিলেন। ইচ্ছা ছিল এখানেই অবস্থান করব। 
 
১৯১২ সালে আমার পিতা আমার মাকে সঙ্গে নিয়ে হজে গিয়েছিলেন। তখন তাঁরা এখানে অবস্থান করেছিলেন। বড় স্টেশন এখনো বেশ দূরে ছিল এবং পুরোপুরি সকালও হয়নি। ‘ভাইকাল্লাহ’ স্টেশনে মাওলানা শওকত আলী সহচরদের নিয়ে উপস্থিত হলেন। নির্দেশ হলো ভিক্টোরিয়া টার্মিনাসে নেমে ‘দারুল খেলাফতে’ যেতে হবে। কার এই সাহস আছে যে বাবায়ে খেলাফতের নির্দেশ অমান্য করবে।
 
দারুল খেলাফত কোনো মুসাফিরখানা ছিল না। কেন্দ্রীয় খেলাফত কমিটির দপ্তর। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা যে ভাড়া বাবদ বহু অর্থ ব্যয়ের পর এখন ‘জমিয়তে খেলাফত’-এর নিজস্ব দপ্তর হয়েছে। দপ্তরটি ভাইকাল্লাহ স্টেশন থেকে দুই ফার্লং দূরে লোলিনে অবস্থিত। প্রশস্ত দুটি ভবন, বিস্তৃত প্রাঙ্গণ, নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশ। 
 
বোম্বেতে এমন ভবনের মালিক হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কেন্দ্রীয় ভবনের নিচতলায় ‘জমিয়তে খেলাফত’ ও ‘রোজনামায়ে খেলাফত’-এর অফিস। দ্বিতীয় তলায় শওকত আলীর বিশ্রামাগার ছাড়া আছে বিশেষ অতিথিদের জন্য প্রশস্ত অভিজাত বসার ঘর ও মেহমানখানা। দ্বিতীয় ভবনের ওপরতলায় মাওলানা মুহাম্মদ ইরফানের বিশ্রামাগার। যা ইসলামের সাদাসিধা জীবনযাপনের প্রতিচ্ছবি। নিচতলায় খেলাফত অফিস ও রোজনামায়ে খেলাফতের সম্পাদকীয় স্টাফদের কক্ষ। কেন্দ্রীয় ভবনের নিচতলার দুটি কক্ষ আমাদের জন্য খালি করা হয়। সেখানে নারীরা বিশ্রাম নেয়। পুরুষরা দিনের বেলা এদিক-সেদিক থাকে। রাতে তারা বারান্দা ও উঠানে অবস্থান করে। 
 
কেউ আবার জোর করে মাওলানা ইরফানের কক্ষে ঢুকে যায়। লখনউতে অবস্থানের সময় মাওলানা শওকত আলীর তারবার্তা পেয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, শাওয়ালের শুরুতে কোনো ভালো জাহাজ পাওয়া যাবে না। বোম্বে পৌঁছে বুঝলাম ১০-১২ দিন অপেক্ষা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। অন্তরের আকাঙ্ক্ষা মধ্যবর্তী মাসগুলো দিনের মতো, দিনগুলো মিনিটের মতো কেটে যাক। কিন্তু যিনি ডেকেছেন তিনি যদি নিজেই নির্দেশ পাঠিয়ে দেন যে দৌড়াতে দৌড়াতে, হাঁপাতে হাঁপাতে নয়; বরং রাস্তায় বিশ্রাম নিয়ে, প্রার্থনা করতে করতে দরবারে হাজির হবে, তাহলে আগন্তুকের মন কেন খারাপ হবে?
 
সফরে হিজাজ থেকে
 
আতাউর রহমান খসরুর ভাষান্তর
captcha