IQNA

কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ব্যক্তিদের চরিত্র - ১

আদম (আ.); প্রথম মানুষ নাকি প্রথম নবী?

11:51 - July 02, 2022
সংবাদ: 3472073
তেহরান (ইকনা): "আদম" (আ.) আধুনিক মানুষের আদি পিতা এবং প্রথম নবী। তিনি প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন যাতে মানবজাতি কখনই হেদায়েতহীন থাকবে না।

ইব্রাহিমী ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, হযরত আদম (আ.) সমস্ত আধুনিক মানুষের আদি পিতা। ইসলামি বর্ণনা অনুসারে, আদম (আ.) পৃথিবীতে পদচারণাকারী প্রথম মানুষ নন, বরং তার পূর্বেও অনেক মানুষ ছিল যাদের প্রজন্ম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমান যুগের মানুষ যারা হযরত আদম (আ.)এর বংশধর তাদের সাথে পূর্ববর্তী মানুষের কোন সম্পর্ক নেই।
পবিত্র কুরআন, হযরত আদম (আঃ)-কে মহান আল্লাহর প্রথম মনোনীত ব্যক্তি হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে:


إِنَّ اللّهَ اصْطَفَی آدَمَ وَنُوحًا وَآلَ إِبْرَاهِیمَ...


নিশ্চয়ই আল্লাহ আদম ও নূহকে এবং ইবরাহীমের বংশধর ও ইমরানের বংশধরদেরকে বিশ্ববাসীর ওপর নির্বাচিত করেছেন।
সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৩৩।
এই কারণেই মুসলমানরা "আদম থেকে খতম পর্যন্ত" বাক্যাংশটি ব্যবহার করেন এবং এর মাধ্যমে তারা নবুওয়তের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বোঝান। প্রথম মানুষকে তথা হযরত আদম (আ.)কে একজন নবী হিসাবে বেছে নেওয়ার মাধ্যমে বোঝা যায় যে মহান আল্লাহ মানবজাতিকে কখনই হেদায়েতহীন করে রাখেননি। পবিত্র কুরআনের ৯টি সূরায় ‘আদম’ নামটি মোট ২৫ বার এসেছে। কুরআন এবং ইসলামী ঐতিহ্যে হযরত আদমকে (আঃ) আবুল বাশার (মানবজাতির পিতা), খলিফাতু আল্লাহ (আল্লাহর প্রতিনিধি) এবং সাফি আল্লাহ (আল্লাহর মনোনীত)-এর মতো উপাধি এবং গুণাবলী দ্বারা অভিহিত করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে তাঁর সৃষ্টি "খাঁটি মাটি" দ্বারা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে:


وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسانَ مِنْ سُلالَةٍ مِنْ طینٍ


নিঃসন্দেহে আমরা মানুষকে কাদামাটির নির্যাস হতে সৃষ্টি করেছি। 
সূরা মু’মিনুন, আয়াত: ১২।
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষকে "গন্ধযুক্ত মাটি" থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।


وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسانَ مِنْ صَلْصالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ


নিঃসন্দেহে আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুষ্ক ঠনঠনে মাটি হতে যা পচা কাল কাদা হতে গঠিত হয়েছিল।
সূরা হিজর, আয়াত: ২৬।
এই আয়াতগুলো আসলে মানবদেহ সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায়কে নির্দেশ করে। প্রথমে সে মাটি ছিল, তারপর সে কাদায় পরিণত হয়, তারপর সে দুর্গন্ধযুক্ত কাদায় পরিণত হয়, তারপর সে আঠালো হয়ে যায় এবং অবশেষে সে একটি শুকনো শরীরে পরিণত হয়।
হযরত আদম (আ.) দুই মাত্রার সমন্বয়ে গঠিত হয়েছেন: শরীর এবং আত্মা: মহান আল্লাহ প্রথমে তাঁর দেহ সৃষ্টি করেন তারপর তাঁর মধ্যে আত্মা ফুঁকিয়ে তাঁকে জীবিত করেন।

সৃষ্টি জগতের মধ্যে মানব জাতিকে সর্বোত্তম আকার প্রদান করা হয়েছে:


لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسانَ فی أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ


নিঃসন্দেহে আমরা মানুষকে সুন্দরতম আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি।
সূরা তীন, আয়াত: ৪।
আর মানুষই একমাত্র সত্তা যাকে সৃষ্টি করার পর মহান আল্লাহ নিজেকে স্রষ্টা বলেছেন।


فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ


সুতরাং প্রাচুর্যময় হলেন সেই আল্লাহ, যিনি সর্বোত্তম স্রষ্টা।
সূরা মু’মিনীন, আয়াত: ১৪।
পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে, হযরত ঈসা (আ.)এর জন্মের কাহিনীকে হযরত আদমের (আ.) কাহিনীর সাথে সাদৃশ্য করা হয়েছ।


إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِنْدَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ


নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্তের ন্যায়; তিনি তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করলেন, অতঃপর তাকে বললেন, ‘হও’, আর তা (তৎক্ষণাৎ) হয়ে গেল।

 

সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫৯।

সংশ্লিষ্ট খবর
captcha