IQNA

মুসলিম নারী

বিশ্বজয়ী গণিতবিদ মারিয়াম মির্জাখানি

9:39 - November 28, 2022
সংবাদ: 3472892
তেহরান (ইকনা): মারিয়াম মির্জাখানি ১৯৭৭ সালের ৩ মে ইরানের তেহরানে জন্মগ্রহণ করেন । প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জীবন যখন শেষ করেন তখন ইরাক-ইরান যুদ্ধ শেষের পথে। সে সময় উদ্যমী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরি হচ্ছিল।
মারিয়াম ইরান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত তেহরানের ফারজানেগান মিডল স্কুল ফর গার্লসে ভর্তির সুযোগ পান।
 
নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার প্রথম সপ্তাহেই তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে রয়া বেহেশতির। উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরমেটিক্স’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথমে জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ী হতে হয়।
১৯৯৪ সালে মির্জাখানির বয়স তখন ১৭। মির্জাখানি এবং বেহেশতি দুজনেই আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করেন। সে বছর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় হংকং-এ। প্রতিযোগিতায় মোট পয়েন্ট থাকে ৪২। ৪২-এর মাঝে ৪১ তুলে সে বছর স্বর্ণ পদক অর্জন করেন মির্জাখানি।
 
১৯৯৫ সালে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় কানাডায়। সেখানেও মির্জাখানি ৪২ এর মধ্যে ৪২ পয়েন্ট অর্জন করেন। দ্বিতীয়বারের মতো সেখানেও অর্জন করেন স্বর্ণ পদক। ১৯৯৯ সালে মারিয়াম তেহরানের শরিফ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে অনার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
 
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ড মেডেলপ্রাপ্ত গণিতবিদ কার্টিস ম্যাকমুলেনের অধীনে ২০০৪ সালে মারিয়াম পিএইচডি শেষ করেন। মারিয়াম যখন হার্ভার্ডের শিক্ষার্থী তখন পরিচয় হয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির শিক্ষার্থী জ্যান ভনড্রাকের সঙ্গে। পরবর্তী সময়ে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একটি কন্যাসন্তানও আছে।
 
২০০৪ সালে পিএইচডি করার পর একই সঙ্গে মারিয়াম প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন অ্যাসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে এবং ক্লাজ ম্যাথমেটিকস ইনস্টিটিউটে রিসার্চ ফেলো হিসেবে। দুই জায়গাতেই তিনি ২০০৮ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। প্রফেসর হিসেবে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে যোগ দেন ২০০৮ সালে।
 
২০১৪ সালে তিনি প্রথম নারী এবং ইরানি হিসেবে গণিতের সর্বোচ্চ সম্মানজনক পুরস্কার ফিল্ডস পদক লাভ করেন। তাঁর বক্রপৃষ্ঠের প্রতিসাম্যের (symmetry of curved surfaces) ওপর গবেষণাকর্ম পুরস্কার কমিটি উদ্ধৃত করে। তাঁর গবেষণার বিষয়ের মধ্যে আরো অন্তর্ভুক্ত আছে টাইখমুলার জগৎ, হাইপারবলিক জ্যামিতি, অ্যারগডিক তত্ত্ব, সিম্পলেকটিক জ্যামিতি। ২০১৪ সালের ১৩ আগস্ট মারিয়াম ‘ফিল্ড মেডেল’ গ্রহণ করেন।
 
২০১৩ সালে মারিয়ামের স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। চার বছর এই ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করার পর ২০১৭ সালে এসে সেটা ছড়িয়ে পড়ে তার অস্থিমজ্জায়। ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই আমেরিকার এক হাসপাতালে মাত্র ৪০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই নারী।
 
বিশ্বের বড় গণমাধ্যমগুলো মারিয়াম মির্জাখনিকে গণিতের জগতে বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করেছে। ক্লে ম্যাথমেটিকস ইনস্টিটিউটর কর্মকর্তা জিমস কার্লসন বলেছেন, মির্জাখনি গণিতে নয়া অধ্যায়ের সূচনা করেছেন।
 
প্রকৃতপক্ষে মারিয়াম মির্জাখনি বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ গণিতবিদের একজন। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে গণিতশাস্ত্রে তাঁর দেওয়া থিওরি বা তত্ত্ব আগামী বহু বছর পর্যন্ত গণিতবিজ্ঞানে ব্যবহৃত বিষয় হয়ে থাকবে।
captcha