IQNA

ইসলামী বিশ্বের বিখ্যাত আলেমগণ/১৭

মুস্তফা মাহমুদ ও ঈমান দিয়ে বিজ্ঞানকে বোঝার চেষ্টা করছেন

6:23 - February 08, 2023
সংবাদ: 3473310
তেহরান (ইকনা): মুস্তফা মাহমুদ, একজন মিশরীয় পণ্ডিত, চিন্তাবিদ, লেখক এবং প্রোগ্রামার, ৫ দশকেরও বেশি বিজ্ঞানের আধিপত্যের যুগে বিশ্বাসের স্থান এবং এর উপর ভিত্তি করে নৈতিকতার গুরুত্ব দেখানোর মাধ্যমে অভিজ্ঞতাভিত্তিক বিজ্ঞানের বিশ্বাসভিত্তিক উপলব্ধি উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন।

মুস্তাফা মাহমুদ (জন্ম ২৯ ডিসেম্বর, ১৯২১ - মৃত্যু ৩১ অক্টোবর, ২০০৯), ছিলেন একজন মিশরীয় পণ্ডিত, চিকিৎসক, চিন্তাবিদ এবং লেখক। তিনি তফসিরে কুরআন ও ধর্মীয় ধারণার ক্ষেত্রে ৮৯টি বইয়ের রেখে গেছেন। তার পুরো নাম মোস্তফা কামাল মাহমুদ হোসেন আল-মাহফুজ, তিনি ইমাম সাজ্জাদ (আ.) (শিয়াদের চতুর্থ ইমাম)এর বংশধর ছিলেন এবং তাই তার পরিবারের অভিজাতদের উপাধি ছিল (মিশরে সাইয়্যেদেরকে দেওয়া একটি উপাধি)।

তিনি ১৯২১ সালে মিশরের মেনোফিয়ার শাবিন আল-কুমে জন্মগ্রহণ করেন এবং পরে, তার পিতার চাকরির কারণে, তিনি এবং তার পরিবার তান্তায় যান এবং সাইয়েদ আল-বাদাউই মসজিদের পাশের একটি বাড়িতে থাকতেন। এই মসজিদটি তার চিন্তা এবং বিশ্বাসের উপর গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছিল।

চার বছর বয়স থেকে তিনি কুরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি আরবি ভাষা শিখেছিলেন; পরে, তিনি স্কুলে প্রবেশ করেন এবং পবিত্র কুরআনের একটি বড় অংশ মুখস্ত করেন।

স্কুলে থাকা অবস্থায় একজন শিক্ষক তাকে শাস্তি প্রদান করে এবং এ কারণে, তিনি তিন বছরের জন্য বিদ্যালয় ত্যাগ করেন এবং ফিরে আসার পরে, শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর দুর্দান্ত প্রতিভা প্রকাশ পায় এবং তিনি উচ্চ বিদ্যালয়ের শেষ অবধি শিক্ষার বিভিন্ন স্তর চালিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদে প্রবেশ করেন। 

তিনি চিকিৎসাবিদ্যা এবং বিশেষ করে শারীরস্থান বিজ্ঞানের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন এবং তার বন্ধুরা তাকে "শারীরতত্ত্ববিদ" বলে ডাকত, তবে ফুসফুসের রোগের কারণে তাকে তিন বছর পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হয়েছিল এবং নিজের চিকিৎসা শুরু করতে হয়েছিল; তিন বছর যা তার চিন্তা-চেতনার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।

বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে কিছুকাল চিকিৎসার কাজ করার পর জীবন-মৃত্যুর সত্য, অস্তিত্বের রহস্য এবং অস্তিত্বের সত্যতা নিয়ে নানা প্রশ্নের কারণে তিনি চিকিৎসা ত্যাগ করেন এবং ধর্ম, পবিত্র কুরআন, বিজ্ঞান ও ঈমান বিষয়ে গবেষণা শুরু করেন।

1970 সালে "কুরআন, একটি নতুন বোঝার চেষ্টা" বইটি প্রকাশিত হয়েছিল, যা তার সবচেয়ে বিশিষ্ট কাজ। এই বইটিতে, মুস্তফা মাহমুদ তার সময়ের প্রয়োজনের ভিত্তিতে কুরআনের একটি নতুন উপলব্ধি একটি নতুন ব্যাখ্যার সাথে এবং নতুন বিকাশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন এবং বিভিন্ন ধর্মীয় সমস্যা প্রকাশের মাধ্যমে আয়াত সম্পর্কে তার উপলব্ধির ভিত্তিতে। এটি সৃষ্টির গল্প, পূর্বনির্ধারণ এবং স্বাধীন ইচ্ছা, হালাল ও হারাম এবং পুনরুত্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কাজ করে।

এ কাজে তিনি কুরআনের অলৌকিকতার পরিধি দেখিয়ে আয়াতের ব্যাখ্যা ও বোঝার চেষ্টা করেছেন। এই বইয়ে মাহমুদের প্রচেষ্টাকে আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত দুটি পরিবেশকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার প্রয়াস হিসেবে দেখা যায়। তার মতে, মানুষ দুটি উত্তেজনা-ভরা জগতের মধ্যে বাস করে: অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতার জগত; এবং বস্তুগত নির্ণয়বাদের পার্শ্ববর্তী বিশ্ব; এমন একটি বিশ্ব যার স্থির আইন মানুষকে শৃঙ্খলিত করে রেখেছে এবং তার স্বাধীনভাবে কাজ করার একমাত্র উপায় হল এই আইনগুলিকে জানা এবং তাদের সাথে সামঞ্জস্যের মাধ্যমে তাদের ব্যবহার করা।

 
captcha