IQNA

রমজান মাসে কুরআন পাঠে অভ্যস্ত হওয়ার শিষ্টাচার

0:40 - March 31, 2023
সংবাদ: 3473546
রমজান মাস কুরআন নাযিলের মাস এবং কুরআনের বসন্ত, আল্লাহর কিতাবকে জানা ও অধ্যয়নের সেরা সময়। যদি এ মাসে কুরআন তেলাওয়াতের কিছু নিয়ম থেকে জানা যায় সেগুলি অনেক উপকারে আসবে।

রমজান মাসে কুরআন তেলাওয়াতের শিষ্টাচার সম্পর্কে যে রেওয়ায়েতগুলি উল্লেখ হয়েছে, যদি সেগুলি অনুসরণ করা হয় তবে আল্লাহর বাণী থেকে আরও বেশি উপকৃত হওয়া সম্ভব। এসম্পর্কে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ "কানজুল মারম ফি আমালি শাহরি রামাদ্বন" থেকে উদ্ধৃত কিছু বিষয় উপস্থাপন করছি।
১) পাক-পবিত্রতা: রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কুরআনের পথের পবিত্রতা রক্ষা কর। জিজ্ঞাসা করা হল, কুরআনের পথ কি? বললেন: তোমাদের মুখ। জিজ্ঞাসা করা হল, কিভাবে আমরা তা পবিত্র রাখব? তিনি বললেন, মিসওয়াক করার মাধ্যমে।
আমিরুল মুমিনীন (আ.) বলেছেন: একজন বান্দার কখনই পবিত্রতা ছাড়া কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত নয়।
২) কিবলার দিক মুখ করে বসা: সঠিক হল ইবাদত, আনুগত্য, দোয়া, নামায ও কুরআন তেলাওয়াত পবিত্র হয়ে কিবলা মুখী হয়ে আঞ্জাম দেয়া।
৩) ইস্তেআযা: ইস্তেআযা শব্দের অর্থ হল আল্লাহর নিকট শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে পানাহ চাওয়া। কুরআনে কারীম তিলাওয়াতের পূর্বে ইস্তেআযা পাঠ করতে বলা হয়েছে: فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللّهِ مِنَ الشَّیْطَانِ الرَّجِیمِ অতএব, যখন আপনি কোরআন পাঠ করেন তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করুন। (সূরা নাহল: ৯৮)
এই আয়াতের তাফসীরে ইমাম সাদিক (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয় কিভাবে পানাহ চাইতে হবে, তখন ইমাম বলেন, বল: اَسْتَعیذُ بِاللّه ِ السَّمیعِ الْعَلیمِ مِنَ الشَّیطْانِ الرَّجیمِ অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে শ্রোতা, সর্বজ্ঞ আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
ইবনে মাসউদ (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন, বল: اَعُوذُ بِاللّهِ مِنَ الشَّیطْانِ الرَّجیمِ কেননা জিবরাইল আমাকে এরূপ পাঠ করতে বলেছে।
৪) তারতীল
কুরআনে করীমে এসেছে: وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِیلاً আর কুরআন আবৃত্তি করো ধীর-স্থিরভাবে শান্ত-সুন্দর আবৃত্তিতে (সূরা মুযাম্মিল: ৪)
ইমাম সাদিক (আ.) তারতীলের ব্যাখ্যায় বলেছেন: তারতীল হল মনোযোগ দিয়ে পাঠ করা এবং সুন্দরভাবে তিলাওয়াত করা।
৫) অযথা কথা না বলা
দোয়া, কুরআন তিলাওয়াত, মুনাজাত ও জিকিরের সময় অযথা কথা না বলা আবশ্যক।
৬) চিন্তা-ভাবনা করা
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে: کِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَیْکَ مُبَارَکٌ لِّیَدَّبَّرُوا آیَاتِهِ وَلِیَتَذَکَّرَ أُوْلُوا الأَلْبَابِ এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে। (সূরা সাদ: ২৯)
অতঃপর তিনি সতর্ক করার জন্য বলা হয়েছে: أَفَلاَ یَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَی قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবন্ধ? (সূরা মুহাম্মদ: ২৪)
৭) কুরআন মোতাবেক আমল করা:
কুরআন থেকে লাভবান হওয়ার প্রধান শর্ত হল কুরআনের আহকাম অনুসরণ করা ও কুরআনের সমস্ত সওয়াব অর্জনের লক্ষ্যে আমল করা।
৮) কুরআন পাঠ অব্যাহত রাখা:
আমিরুল মুমিনীন (আ.) তাঁর পুত্র মুহাম্মদ হানাফিয়াহকে বলেছেন: তোমাকে সুপারিশ করছি কুরআন পড়ার, এর শিক্ষাগুলি অনুশীলন করার, এর আনুগত্য ও আদেশ পালন করার, এর হারামগুলি থেকে দুরে থাকার। তাহাজ্জুদ এবং প্রতিদিন পাঠ করার। যা মানুষের জন্য আল্লাহর প্রতিশ্রুতি, তাই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য প্রতিদিন তার প্রতিশ্রুতির দিকে নজর দেওয়া বাধ্যতামূলক। অন্তত পঞ্চাশটি আয়াতও পাঠ করে হলেও।
৯) রহমত ও শাস্তির আয়াত পাঠে সময়ক্ষেপণ করা।
মাওলা মুত্তাকিন (আ.) মুত্তাকী সম্পর্কিত এক খুতবায় বলেছেন: তারা যখন রহমতের আয়াতে পৌঁছায়, তখন তারা এর জন্য আশা করে, এবং তাদের অন্তর এর জন্য লোভী হয়, যেন তারা এই নিয়ামতগুলি তাদের চোখ দিয়ে দেখে... এবং যখন তারা আযাবের আয়াতে পৌঁছায়। যেন তারা তাদের কান ও অন্তর দিয়ে শ্রবণ করতে, তাদের চোখ তা দেখতে থাকে, তাদের ত্বক কাঁপতে থাকে, তারা আতঙ্কিত হয়ে যায়, যেন তারা তাদের কান দিয়ে জাহান্নামীদের চিৎকার শুনতে পায়।

captcha