IQNA

জ্বলছে অবরুদ্ধ গাজা, সমাধান অনিশ্চিত

18:36 - August 28, 2020
সংবাদ: 2611390
তেহরান (ইকনা): শুক্রবারও গাজায় বিমান এবং ট্যাংক থেকে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। জবাবে ইসরাইল লক্ষ্য করে রকেট ছুঁড়েছে গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাস।

৬ আগস্ট থেকে অব্যাহতভাবে বর্বরতা চালাচ্ছে ইহুদিবাদীরা। মাঝে মাঝে জবাব দিচ্ছে প্রতিরোধকারীরা। তিন সপ্তাহ ধরে পাল্টাপাল্টি হামলায় জ্বলছে অবরুদ্ধ গাজা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যস্থতা সত্বেও আসছে না কোনো সমাধান।

শুক্রবার ইসরাইল লক্ষ্য করে ছয়টি রকেট নিক্ষেপ করে হামাস। আগেই থেকেই সতর্ক ছিল গাজার বাফার জোনে থাকা ইসরাইলি দখলদাররা। হামলায় কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।

২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করছে হামাস। এক বিবৃতিতে রকেট নিক্ষেপকে ইসরাইলের উস্কানির বিরুদ্ধে সরাসরি জবাব বলে অভিহিত করেছে তারা।


হামাসের কর্মকর্তা বাসেম নাইম বলেন, গাজায় নজিরবিহীন দুর্দশা বিরাজ করছে। এভাবে উত্তেজনা চলতে থাকলে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি হবে। যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে সতর্ক করেন তিনি।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাসের সামরিক স্থাপনা এবং অস্ত্র তৈরির কারখানা লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।

ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, গাজা এবং রাফায় থাকা হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসেম ব্রিগেডের পর্যবেক্ষণ চৌকিসহ দুটি স্থাপনা ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হাতে বানানো বোমা

৬ আগস্টের পর থেতে প্রায় প্রতিদিন গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। তাদের দাবি গাজা সীমান্ত থেকে, আগুনবোমা, বেলুনবোমা এবং রকেট হামলার জবাবে তারা এসব হামলা অব্যাহত রেখেছে।

আগুনবোমা, হাতে বানানো বিস্ফোরক বেলুন, ঘুড়ি এবং প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নিক্ষেপ করে ইসরাইলি দখলদারিত্বের জবাব দিচ্ছেন ফিলিস্তিনের প্রতিবাদকারীরা। ইসরাইলের ফায়ার ব্রিগেড জানায়, ফিলিস্তিনের ছোঁড়া আগুনবোমায় ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত ৪০০ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে ইসরাইল গাজায় আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে। হামাস ও তেল আবিবের মধ্যে এমন মৌখিক একটা সমঝোতা হয়। কিন্তু সে কথা রাখছে না ইসরাইল। ধারণা করা হচ্ছে, আগুনবোমার মাধ্যমে তেল আবিবকে চাপে ফেলে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের চেষ্টা করছে হামাস।

তবে, সেই প্রচেষ্টা খুব একটা কাজে আসছে না। আগুনবোমার বিপরীতে গাজার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর করছে ইসরাইল।

গাজার জেলেদের সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে ইসরাইল। বন্ধ করে দিয়েছে গাজায় পণ্য আমদানি। জ্বালানির অভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির।

মধ্যস্থতা চেষ্টা

মিশরের একটি প্রতিনিধি দল উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের চেষ্টা করছে। কাতারের গাজা বিষয়ক প্রতিনিধির সঙ্গে চলতি সপ্তাহে বৈঠক করেছে কায়রোর প্রতিনিধি দল।

মঙ্গলবার কাতারের তহবিল থেক ৩ কোটি মার্কিন ডলার অবরুদ্ধ গাজা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে কাতারি দূত মোহাম্মদ আল ইমাদি। তার আগে তিনি ইসারইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তেল আবিবে আলোচনা করেন।

কাতারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইসরাইল আল ইমাদিকে জানিয়েছে, তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জ্বালানি সরবরাহ করবে। অবরোধও শিথিল করবে। যদি আগুনবোমা নিক্ষেপ বন্ধ হয়।

দরিদ্রপীড়িত অবরুদ্ধ গাজার বাসিন্দাদের জন্য গ্যাস সমৃদ্ধ কাতারের সহায়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির সহায়তায় ২০১৮ সালে প্রথম যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায় হামাস এবং ইসারইল।

গাজায় করোনা ভাইরাসের গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে সম্প্রতি। ইসরাইল এবং মিশরের সীমান্তবর্তী উপকূলীয় এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করেছে হামাস। যেখানে ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় যুদ্ধবিরতি অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। সে কারণে যুদ্ধবিরতি কার্যকরকে গুরুত্ব দিচ্ছে মধ্যস্থতাকারীরা।

২০০৭ সালে ফিলিস্তিনি প্রতিপক্ষের কাছ গাজার শাসনভার ছিনিয়ে নেয় হামাস। তারপর উপত্যকায় অবরোধ আরোপ করে ইসরাইল এবং মিশর। ইসরাইল বলছে, হামাসের আক্রমণ ঠেকাতে অবরোধ জরুরি। তবে বিশ্লেষকরা বলছে, ইসরাইলের পদক্ষেপ গাজার ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

অবরোধ আরোপের পর ইসরাইল এবং হামাস তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এ সময়ে ছোটখাটো সংঘাত চলছে নিয়মিত বিরতি দিয়ে।

অবরোধ, নিষেধাজ্ঞায় গাজার অর্থনীতির ধ্বংসের দ্বাপ্রান্তে। বাসিন্দারে অর্ধেকের বেশি বেকার। দীর্ঘদিনের যুদ্ধ এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। এ অবস্থায় করোনা মহামারী ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে চিকিৎসা দেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে কর্তৃপক্ষের জন্য।
সূত্র:somoynews

captcha