IQNA

জাতিসংঘে সৌদি রাজার ইরান বিরোধী কড়া বক্তব্য প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হতাশার প্রমাণ

5:48 - September 25, 2020
সংবাদ: 2611531
তেহরান (ইকনা): সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫ তম অধিবেশনে অনলাইনে দেয়া বক্তব্যে ইরানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করেছেন। তিনি তার বক্তব্যে ইরানের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। সৌদি রাজা দাবি করেছেন, ইরান ইয়েমেনের মাধ্যমে সৌদি আরবে হামলা চালাচ্ছে, সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিচ্ছে, অস্ত্রের বিস্তার ঘটাচ্ছে যে কারণে পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে এবং সৌদি আরবের সঙ্গে বন্ধুত্বের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি রাজা সালমানের বক্তব্যে তিনটি বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, এ অঞ্চলে ইসলামি ইরানের শক্তিমত্তা ও প্রভাব বহুগুণে বেড়ে যাওয়ায় এবং সামরিক ভারসাম্যসহ অন্য সবকিছু ইরানের অনুকূলে থাকায় সৌদি সরকার খুবই ক্ষুব্ধ ও হতাশ। সৌদি রাজা এতটাই ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন যে তিনি দাবি করেছেন গত কয়েক বছর ধরে সৌদি সরকার ইরানের প্রতি শান্তি ও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এবং তেহরানের সঙ্গে আলোচনা ও সম্পর্ক স্থাপনে রিয়াদ আগ্রহ দেখিয়ে এসেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ এমন সময় এ দাবি করলেন যখন সে দেশটি ২০১৬ সালে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। এমনকি অন্য আরব দেশগুলোকেও তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। পার্সটুডে

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সৌদি রাজার বক্তব্যের দ্বিতীয় বার্তাটি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের অব্যাহত সমর্থন বাজয় থাকা। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সম্মেলনে বিশ্বের নেতৃবৃন্দ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মার্কিন সরকারের স্বেচ্ছাচারী নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি দেশটির আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনেরও তীব্র সমালোচনা করেছে।

এ অবস্থায় সৌদি রাজা তার বক্তব্যের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে যে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে সেটাকে ইরানের দিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন এবং বিশ্ব জনমত ও গণমাধ্যমকে ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে উৎসাহিত করেছেন।

সৌদি রাজার বক্তব্যের তৃতীয় বার্তাটি হচ্ছে, পরোক্ষভাবে তিনি ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি পরাজয়ের বিষয়টি স্বীকার করলেন। সৌদি আরব ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ থেকে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে এবং গত ৬৬ মাসে এ যুদ্ধে তারা কোন বিজয় অর্জন করেনি বরং ইয়েমেনের চোরাবালিতে আটকে পড়েছে। এ ছাড়া, দরিদ্র একটি আরব দেশের কাছে পরাজয় ও ব্যর্থতার কারণে সৌদি সরকার রাজনৈতিক হীনমন্যতায় ভুগছে। সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে ইয়েমেনি যোদ্ধাদের ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার ঘটনা রাজা সালমান স্বীকার করা থেকে বোঝা যায় এ যুদ্ধে তিনি পরাজয় ও ব্যর্থতার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি রাজার ভাষণ থেকে তিনটি বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, তিনি ইরানের অস্ত্র বিস্তার রোধ ঠেকানোর আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, পশ্চিম এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা কখনো ইরান শুরু করেনি এবং এটাকে ইরান স্বাগত জানায় না। ইরান কেবল আত্মরক্ষার স্বার্থে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু সমরশক্তি গড়ে তুলেছে। কিন্তু সৌদি আরব বিশ্বে দ্বিতীয় অস্ত্র আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে এবং এ দেশটি পাশ্চাত্যের অস্ত্র বিশেষ করে মার্কিন অস্ত্র গুদামে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, সৌদি রাজা সালমান বিন আব্দুল আজিজ লেবাননের রাজধানী বৈরুতে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের ঘটনার জন্য ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, হিজবুল্লাহ লেবানন সরকারকে অচল করার চেষ্টা করছে আর সে কারণে ওই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করা।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি রাজা এমন সময় এ ধরনের কথা বলেছেন যখন সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের কারণে লেবাননে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি রাজা এমন সময়ে লেবাননকে অস্থিতিশীলতার জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করলেন যখন দেশটির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ২০১৭ সালের নভেম্বরে লেবাননের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে পণবন্দি করেছিলেন এবং ইস্তফা দিতে তাকে বাধ্য করেছিলেন। তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, সৌদি রাজা তার বক্তব্যে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়টিকে সমর্থন করলেও ইসরাইলের সঙ্গে আমিরাত ও বাহরাইনের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে তিনি সমর্থন করেছেন। কারণ সৌদি আরবের সমর্থন না থাকলে বাহরাইন ও আমিরাত কিছুতেই ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সাহস দেখাতো না। সর্বশেষ বিষয় হচ্ছে, সৌদি রাজা সালমানের বক্তব্যে বোঝা গেছে, পশ্চিম এশিয়ায় ওই দেশটি তার প্রভাব হারিয়েছে।

captcha