আর এ হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে , হযরত ফাতিমা ( আ.) হযরত আবূ বকরের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন ।
সত্য সহীহ প্রতিষ্ঠিত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে যে ব্যক্তি যুগের ইমামকে না চিনে ও তাঁর আনুগত্য না করে মৃত্যু বরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু ।
যেমন :
১. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর ( রা:) মহানবী ( সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন :
مَنْ خَلَعَ یَدَاًمِنْ طَاعَةٍ، لَقِيَ اللّٰهَ یَوْمَ الْقِیَامَةِ، لَا حُجَّةَلَهُ، وَ مَنْ مَاتَ وَ لَیْسَ فِيْ عُنُقِهٖ بَیْعَةٌ مَاتَ مِیْتَةً جَاهِلیَّةً .
যে ব্যক্তি ( ইমামের ) আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেবে ( আনুগত্যের শপথ অর্থাৎ বাইআত করে তা ভঙ্গ করবে ) সে কিয়ামত দিবসে এমতাবস্থায় মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ ( দীদার ও লিকা ) করবে যে তার পক্ষে কোনো হুজ্জাত ( পারলৌকিক আযাব থেকে রেহাই ও নাজাতের দলীল ও প্রমাণ ) বিদ্যমান থাকবে না ( অর্থাৎ সে জাহান্নামী হবে ) । আর যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করবে এমতাবস্থায় যে তার গর্দানে বাইআত নেই সে জাহিলিয়াতের মৃত্যুই বরণ করবে । ( সহীহ মুসলিম , কিতাবুল ইমারাহ্ , হাদীস নং ৪৮১৪ , পৃ : ৭১৮ , প্রকাশক : দার সাদির , বৈরুত , লেবানন , প্রথম সংস্করণ ; আল্লামা আলবানী প্রণীত সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহাহ্ , আল- মাকতাবুল ইসলামী , ২য় খণ্ড , পৃ: ৭১৫ ) ।
২. মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে :
مَنْ مَاتَ وَ لَیْسَ عَلَیْهِ إِمَامٌ مَاتَ مِیْتَةً جَاهِلِیَّةً .
যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করবে এমতাবস্থায় যে তার ওপর ইমাম ( কর্তৃত্বশীল নেতা ) থাকবেন না সে জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করবে ।
( দ্র: মাজমাউয যাওয়ায়েদ , ৫ম খণ্ড , পৃ : ৪০৫ )
৩. আল্লামা তাফতাযানী শারহুল মাকাসিদ গ্রন্থে পবিত্র কুরআনের সূরা -ই নিসার ৫৯ নং আয়াত :
یَا أَیُّهَا الَّذِیْنَ ءَامَنُوْا أَطِیْعُوا اللّٰهَ وَ ءَاطِیْعُوا الرَّسُوْلَ وَ أُوْلِي الْأَمْرِ مِنْکُمْ
" তোমরা মহান আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর রাসূল ( সা.) ও তোমাদের মধ্য হতে উলীল আমরের ( কর্তৃত্বশীল নেতৃবর্গ ) - " এর ব্যাখ্যায় মহানবী ( সা.) থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন :
مَنْ مَاتَ وَ لَمْ یَعْرِفْ إِمَامَ زَمَانِهٖ مَاتَ مِیْتَةً جَاهِلِیَّةً.
যে ব্যক্তি নিজ যুগের ইমামকে না চিনে মৃত্যু বরণ করবে , সে জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করবে ।
তিনি ( আল্লামা তাফতাযানী ) এ হাদীসকে সুনিশ্চিত ( সন্দেহাতীত ও তর্কাতীত ) অর্থাৎ মুসাল্লাম ( مُسَلَّمٌ ) বলেছেন এবং এ হাদীসের ভিত্তিতে উক্ত গ্রন্থে স্বীয় আলোচনার অবতারণা করেছেন ( দ্র : শারহুল মাকাসিদ , ৫ম খণ্ড , পৃ : ২৩৯ ) ।
৪. আমীর মুয়াবিয়া মহানবী ( সা.) থেকে বর্ণনা করেছে :
مَنْ مَاتَ بِغَیْرِ إِمَامٍ مَاتَ مِیْتَةً جَاهِلیَّةً.
যে ব্যক্তি ইমামবিহীন ( ইমামের আনুগত্য না করে ) মৃত্যু বরণ করবে সে জাহিলিয়াতের মৃত্যু বরণ করবে ( দ্র : মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল , ৪র্থ খণ্ড , পৃ : ৯৬ ; হুলিয়াতুল আওলিয়া, ৩য় খণ্ড , পৃ: ২২৪ ( এ হাদীসটি যে সহীহ তা এখানে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে ) ।
৫. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) মহানবী ( সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন :
مَنْ مَاتَ وَ لَیْسَ عَلَیٰ إِمَامٍ فَمِیْتَتُهُ جَاهِلِیَّةٌ.
যে ব্যক্তি ইমামের ( আনুগত্যের ) ওপর মৃত্যু বরণ করবে না , তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়াতের মৃত্যু ( দ্র : ইতহাফ সাদাতিল মুত্তাকীন্ , ২য় খণ্ড , পৃ: ২৩০ ও ২৩১ ) ।
আর বিশ্বজগৎ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হুজ্জাত ( হিদায়তের ঐশী দলীল - প্রমাণ সহকারে দণ্ডায়মান ব্যক্তি অর্থাৎ ইমাম ) বিহীন বিদ্যমান ও টিকে থাকতে পারে না ।
হযরত আলী ( আ.) বলেন :
اَللّٰهُمَّ بَلَیٰ، لَا تَخْلُو الْأَرْضُ مِنْ قَائِمٍ لِلّٰهِ بِحُجَّةٍ إِمَّا ظَاهِرَاً وَ إِمَّا خَائِفَاً مَغْمُوْرَاً لِئَلَّا تَبْطُلَ حُجَجُ اللّٰهِ وَ بَیِّنَاتُهُ .
হে আল্লাহ ! হ্যাঁ , অবশ্যই নিখিল বিশ্ব মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হুজ্জাত ( হিদায়তের ঐশী দলীল- প্রমাণ সহ ) দণ্ডায়মান ব্যক্তি ( কায়েম অর্থাৎ ইমাম )বিহীন বিদ্যমান ও টিকে থাকতে পারে না । হতে পারে তিনি ( ইমাম ) প্রকাশ্যে বিদ্যমান ( যাহির ) ও প্রসিদ্ধ ( মশহূর ) নতুবা ভীত ও গোপন অর্থাৎ লোক চক্ষুর অন্তরালে ( গায়েব ) রয়েছেন যাতে করে যেন মহান আল্লাহর সুস্পষ্ট ঐশী প্রমাণাদি ( হুজাজ ) বাতিল প্রতিপন্ন না হয় ।
ইবনে হাজার আসকালানী বলেন : শেষ যুগে অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার খুব কাছাকাছি সময়ে এ উম্মার এক ব্যক্তির ( ইমাম মাহদী ) পেছনে হযরত ঈসার ( আ.) নামায আদায় করার মধ্যে সৃষ্টি জগত মহান আল্লাহর পক্ষ হতে হুজ্জাত অর্থাৎ ঐশী দলীল - প্রমাণ সহকারে দণ্ডায়মান কায়েম ব্যক্তি ( মনোনীত ও নিযুক্ত ইমাম নেতা ) বিহীন বিদ্যমান ও টিকে থাকতে পারে না - এ সত্য কথার প্রমাণ মেলে [ দ্র : ফাতহুল বারী ফী শারহি সহীহিল্ বুখারী , খণ্ড : ৬ , পৃ : ৩৮৫ । ] এ হাদীসটি আহলুস সুন্নাহর অন্যান্য গ্রন্থ যেমন : আল্লামা ফাখরুদ্দীন রাযী প্রণীত আত্ - তাফসীর আল - কাবীর , খণ্ড : ২ , পৃ: ১৯২ ; শারহুল মাকাসিদ , খণ্ড : ৫ , পৃ : ৩৮৫ ; তারীখ-ই বাগদাদ , খ : ৬ , পৃ : ৩৮৯ ;
আল - ইকদুল ফরীদ্ , খ: ১, পৃ : ২৬৫ ; তদ্রুপ ইমামীয়াহদের বিভিন্ন গ্রন্থ যেমন : আল - কাফী , খ: ১ , পৃ : ১৩৬ এবং কামালুদ্দীন ( ধর্মের পূর্ণতা ) , খ : ১ , পৃ : ২৮৭ তেও হাদীসটির উল্লেখ আছে । তাই এ হাদীসটি সকল ফির্কা ও মাযহাব নির্বিশেষে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর কাছে গৃহীত ও প্রতিষ্ঠিত হাদীস।]
[ দ্র : " যুগের ইমাম সংক্রান্ত হাদীসের ওপর একটি পর্যালোচনা " , প্রত্যাশা ( একটি মানব উন্নয়ন বিষয়ক ত্রৈমাসিক ), বর্ষ ১ , সংখ্যা ৪, জানুয়ারি - মার্চ , ২০১১ , পৃ : ৮২-৯৪ ]