IQNA

মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান

হযরত ফাতিমা'র (সা: আ:) শাহাদাতের অজানা ইতিহাস [পর্ব-৪]

0:01 - January 15, 2022
সংবাদ: 3471282
তেহরান (ইকনা): হযরত আনাস ( রা.) থেকে বর্ণিত : মহানবী (সা.) বলেন : " জগৎ সমূহের নারীদের মধ্য থেকে মারয়াম বিনতে ইমরান , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ , ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ এবং ফিরআওনের স্ত্রী আসিয়া তোমার কাছে (শ্রেষ্ঠ হিসেবে ) কেবল যথেষ্ট ।"

حَسْبُکَ مِنْ نِسَاءِ الْعَالَمِیْنَ : مَرْیَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَ خَدِیْجَةُ بِنْتُ خُوَیْلِدٍ وَ فَاطِمَةُ بِنْتُ مُحَمَّدٍ و آسِیَةُ امْرَإَةُ فَرْعَوْنَ
( দ্র : সুনান আত্ - তিরমিযী , পৃ : ১০০৮ , হাদীস নং ৩৮৮৭ )
  হযরত আবূ সাঈদ খুদরী ( রা .) বলেন : মহানবী ( সা.) হযরত ফাতিমার কাছে প্রবেশ করে বললেন : " নিশ্চয়ই আমি , তুমি , এই ঘুমন্ত ব্যক্তিটি  অর্থাৎ আলী  এবং এরা দুজন অর্থাৎ হাসান ও হুসাইন কিয়ামত দিবসে একই স্থানে থাকব ।"
হাকিম নীশাপুরী বলেন : এ হাদীসটি সহীহুল ইসনাদ এবং তাঁরা দুজন ( শাইখাইন : ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম ) তা বর্ণনা করেন নি । আর আল্লামা যাহাবী তাঁর ( হাকিম নীশাপুরী ) সাথে একমত পোষণ করে বলেছেন : " উক্ত হাদীসটি সহীহ ।"
( দ্র : আল্ - মুস্তাদ্রাক , খ : ৩ , পৃ : ৩৪৮ )
   হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ( রা.) থেকে বর্ণিত : মহানবী সা.) বলেন : চার নারী তাদের (সমসাময়িক) জগৎ অর্থাৎ (সমসাময়িক) প্রজন্মের (নারীদের) নেত্রী : মারয়াম বিনতে ইমরান , ফিরআওনের স্ত্রী আসিয়া বিনতে  মুযাহিম , খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ এবং ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ । আর জগৎ ও প্রজন্ম সমূহের দিক থেকে এ চার নারীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন ফাতিমা । 
( দ্র : আল্লামা সাইয়েদ মুহাম্মদ আল - আলূসী আল্ - বাগদাদী প্রণীত তাফসীর রূহিল মা'আনী , খ : ৩ , পৃ : ২০৬ এবং মুহিব্বুদ্দীন তাবারী যাখায়িরুল উকবা গ্রন্থের পৃ: ৪৪ এ বলেছেন : এ হাদীসটি ইখরাজ ( পূর্ণ সনদসহ নিজ গ্রন্থে রিওয়ায়ত ) করেছেন আল- হাফেয আল - আসবাহানী এবং আল্লামা সুয়ূতী আশ্ শাফিঈ যিনি আদ্ দুর্রুল্ মানসূরে ( খ:২ , পৃ : ৩২ ) সূরা -ই আল - ই ইমরানের তাফসীরে বলেছেন : 
এ হাদীসটি ইখরাজ ( পূর্ণ সনদসহ স্বীয় গ্রন্থে রিওয়ায়ত ) করেছেন (আহলুস সুন্নাতের ) নিম্নোক্ত মুহাদ্দিসগণ : 
ইবনে আসাকির যাহহাক ও হার্স ইবনে উসামা থেকে সহীহ অথচ মুরসাল সনদ সহকারে , যারান্দী হানাফী তাঁর নাযমু দুরারিস সামতাইন গ্রন্থে ( পৃ : ১৭৮ ) , আল-মুত্তাকী আল-হিন্দী আল-হানাফী কানযুল উম্মাল গ্রন্থে ( খ: ১৩ , পৃ : ১২৮ , হায়দারাবাদ থেকে মুদ্রিত ) , আল- বায়হাকী শু'আবুল ঈমান গ্রন্থে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে এবং সাইয়েদ সিদ্দীক আল- হানাফী আল - ফাত্হ্ ওয়াল বায়ান গ্রন্থে (খ: ২ , পৃ: ৪১০ , মিসরের বূলাক কর্তৃক মুদ্রিত ) । আর ইসলাম সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং এ উম্মত সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত । এ ধর্মের ধারক ও বাহকগণ যারা হচ্ছেন মহানবী (সা.) এবং তাঁর পবিত্র ইতরাৎ ( অতিনিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর ) আহলুল বাইত ( আ.)  তারা নি: সন্দেহে হবে অন্য সকল ধর্মের ধারক ও বাহকদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম ( কারণ একমাত্র পরম সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত পর্যায়ের আধ্যাত্মিক ও মানবীয় পূর্ণতা অর্জিত হয় কেবল ইসলামের দ্বারাই এবং নি: সন্দেহে এ ধর্মের ধারক ও বাহকগণ হবেন পরম সর্বোচ্চ ও চূড়ান্ত পর্যায়ের আধ্যাত্মিক ও মানবীয় পূর্ণতার অধিকারী )। আর এ উম্মতের নারীরা নি : সন্দেহ অন্য সকল উম্মতের নারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । তাহলে এ উম্মতের নারীদের নেত্রী ( হযরত ফাতিমা ) হবেন অন্য সকল উম্মতের নারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । এমনকি তিনি ( ফাতিমা ) উত্তম ও শ্রেষ্ঠ হবেন হযরত মারয়ামের চেয়েও ।  তাই হযরত ফাতিমা (আ.) হযরত মারিয়াম , আসিয়া ও হযরত খাদীজা সহ জগৎ সমূহের সকল নারী , সকল মুমিন নারী এবং বেহেশতবাসী সকল নারীর নেত্রী ।
 
  রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ফাতিমা আমার ( দেহ বা অস্তিত্বের ) টুকরা বা অংশ ( অবিচ্ছেদ্য অংশ ) ; অতএব , যে তাঁকে রাগায় সে আমাকেই রাগায় ।
فَاطِمَةُ بِضْعَةٌ مِنِّيْ ، فَمَنْ أَغْضَبَهَا أَغْضَبَنِيْ
( দ্র : প্রাগুক্ত সহীহুল বুখারী , হাদীস নং ৩৭১৪ , পৃ : ৯১০ )
    রাসূলুল্লাহ ( সা.) বলেছেন : ফাতিমা আমার ( দেহ বা অস্তিত্বের ) টুকরা বা অংশ ; অতএব , যে তাঁকে রাগায় সে আমাকেই রাগায় ।
فَاطِمَةُ بِضْعَةٌ مِنِّيْ فَمَنْ أَغْضَبَهَا أَغْضَبَنِيْ
( দ্র: প্রাগুক্ত সহীহুল বুখারী , হাদীস নং ৩৭৬৭ , পৃ : ৯১৯ )
    হযরত আলী ( আ.) বলেন : মহানবী ( সা.) হযরত ফাতিমা কে ( আ.) বলেন : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন ।
إِنَّ اللٌٰهَ يَغْضَبُ لِغَضَبِكِ وَ يَرْضَىٰ لِرِضَاكِ .
( দ্র : উসদুল গাবাহ্ , খ : ৬ , পৃ: ২২৭ )
   হযরত আলী (আ.) বলেছেন : রাসূলুল্লাহ ( সা.) হযরত ফাতিমাকে ( আ.) বললেন : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তোমার সন্তুষ্টিতে ( রিযা ) সন্তুষ্ট হন এবং তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন ।
إِنَّ اللّٰهَ يَغْضَبُ لِغَضَبِكِ وَ يَرْضَىٰ لِرِضَاكِ 
 
( দ্র : তাহযীবুত্ তাহযীব্ , খ : ১২ , পৃ : ৪৪১-৪৪২ )
তাব্রানী হাসান সনদ সহকারে হযরত আলী ( আ ) থেকে বর্ণনা করেছেন । হযরত আলী (আ.) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ফাতিমাকে (আ.) বললেন : নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট এবং তোমার ক্রোধে ক্রোধান্বিত হন ।
إِنَّ اللّٰهَ یَرْضَیٰ لِرِضَاکِ وَ یَغْضَبُ لِغَضَبِکِ.
আর এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে আমাদের সাইয়েদা ও মাওলাত্ হযরত ফাতিমা ( আ.) বিনতে রাসূলিল্লাহ্ ( সা .) স্বীয় পিতা রাসূলুল্লাহ ( সা .) এবং স্বামী আমীরুল মুমিনীন হযরত আলীর ( আ.) পরে মহান আল্লাহর সকল সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ সর্বোত্তম সৃষ্টি। কারণ তিনি ( আ. ) রাসূলুল্লাহর দেহ সত্ত্বা ও অস্তিত্বের মূল সার বত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ । এ ছাড়াও তিনি ( আ.) আরও নানাবিধ কারণেও অন্য সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । আহলুস সুন্নাহর প্রখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা আল-আলূসী আশ-শাফিঈ আল - বাগদাদী এ বিষয়টি স্বীকার করে বলেছেন : " আমি যে অভিমত পোষণ করি তা হল যে , মহানবীর ( সা.) অবিচ্ছেদ্য অংশ ( বিয্'আতু রাসূলিল্লাহ ِبِضْعَةُ رَسُوْل اللّٰه ) হওয়ার দিক থেকে বরং আরো নানাবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে হযরত ফাতিমা বাতূল্ হচ্ছেন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও উত্তম । আর যে সকল রিওয়ায়তে কিছু দিক এবং কোন এক বিশেষ দৃষ্টি কোণ থেকে তাঁর ওপর অন্য কোনো নারীর শ্রেষ্ঠ হওয়া সম্ভবপর হওয়ার প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে সে সব রিওয়ায়তও সকল নারীর ওপর তাঁর ( ফাতিমা ) শ্রেষ্ঠত্বের ক্ষেত্রে অসুবিধা সৃষ্টি করতে ও বিঘ্ন ঘটাতে সক্ষম নয় এবং এভাবে ( এতদসংক্রান্ত ) সকল হাদীসের ( আসার ) মাঝে সমন্বয় সাধন ( জাম্') সম্ভব । আর এ বিষয়টি এমনকি হযরত মারিয়ামের নুবুওয়ত সংক্রান্ত অভিমতের বরাবরেও বৈধ ( অর্থাৎ এমনকি  যদি হযরত মারয়ামকে নবীয়াহ্ বা নারী নবীও বলা হয় তবুও সকল নারী এমনকি হযরত মারয়ামের চেয়েও হযরত ফাতিমা শ্রেষ্ঠ ও উত্তম হবেন ) । কারণ , (হযরত ফাতিমার ) অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া অর্থাৎ বিয্'ঈয়াহ্ ( اَلْبِضْعِيَّةُ ) [মহানবীর (সা) বা মুহাম্মাদী ] অস্তিত্বের মূল সারবত্তা ও নির্যাস ( রূহ ) এবং প্রত্যেক অস্তিত্ববান সৃষ্টির নেতা স্বরূপ [ অর্থাৎ যেহেতু ফাতিমা (আ.) হাকীকাত ও অজূদে মুহাম্মাদীর মূল নির্যাস ও সারবত্তা ( রূহ ) স্বরূপ সেহেতু তিনি প্রতিটি অস্তিত্ববান সত্ত্বারও নেত্রী ] । আর আমি মনে করি না যে জগতের কোনো কিছুই হযরত ফাতিমা যাহরার (আ ) এ বৈশিষ্ট্য ( মুহাম্মদী হাকীকত ও অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ার বিষয়টি ) মোকাবেলা করতে ও এর সমকক্ষ হতে সক্ষম  ।
আর কোথায় সুরাইয়া তারকা যা ( মর্ত্যবাসীর ) হাতের নাগালের বাইরে ( পৃথিবীর ধরা ছোঁয়ার বাইরে ) !!! । আর এখান থেকেই  হযরত আয়েশার ওপর তাঁর (ফাতিমা) শ্রেষ্ঠত্ব মা'লূম ( স্পষ্ট বিদিত ) হয়ে যায় । " ( দ্র : আল - আলূসী আশ-শাফিঈ আল্ - বাগদাদী , আবুল ফাযল শিহাবুদ্দীন  আস্- সাইয়েদ মাহমূদ্ , রূহুল মা'আলী ফী তাফসীরিল্ কুরআন ওয়াস সাব'ইল্ মাসানী , খ: ৩ , পৃ : ২০৬ , প্রকাশক : দার ইহয়াতিত তুরাস আল - আরাবী , মুআসসাতুত তারীখ আল্ - আরাবী , বৈরুত লেবানন , প্রথম সংস্করণ , সংস্করণকাল : ১৪২০ হি.)

বরং বলা যায় : আর এখান থেকেও একই ভাবে তাঁর মা উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজাতুল কুবরা এবং ফের'আওন পত্নী হযরত আসিয়া বিনতে মুযাহিমের ওপর হযরত ফাতিমার শ্রেষ্ঠত্বও পুরোপুরি মা'লূম ( স্পষ্ট বিদিত ) হয়ে যায় ।

চলবে...
 
হযরত ফাতিমা'র (সা: আ:) শাহাদাতের অজানা ইতিহাস [পর্ব-৪]
captcha