IQNA

ইমাম হুসাইনের ( আ.) শুভ জন্মদিন

20:53 - March 06, 2022
সংবাদ: 3471528
তেহরান (ইকনা): আজ ৩রা শা'বান মহানবী ( সা.) এর ২য় দৌহিত্র , হযরত আলী (আ.) মহানবী ( সা. ) এর কন্যা হযরত ফাতিমা (আ.) এর ২য়  পুত্র সন্তান বেহেশতের যুবকদের নেতা সাইয়েদুশ শুহাদা ( শহীদদের সর্দার ) হযরত হুসাইন ( আ. ) - এর শুভ জন্মদিন। এই শুভ জন্মদিন উপলক্ষে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা , অভিনন্দন ও মুবারক বাদ ।

এই মুবারক দিবসে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে আমাদের একান্ত প্রার্থনা যে এই মুবারক ইমামের উসীলায় মহান আল্লাহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে এবং বিশ্ববাসীকে কোভিড ১৯ মহামারী থেকে নাজাত ও রেহাই দিন ।

ইমাম হুসাইন ( আ. ) হিদায়তের প্রদীপ ( মিসবাহুর হুদা ) ও মুক্তির তরী ( সাফীনাতুন নাজাত )।

إِنَّ الْحُسَيْنَ مِصْبَاحُ الْهُدَىٰ وَ سَفِيْنَةُ النَّجَاةِ .

ইমাম হুসাইন ( আ . ) মহানবী ( সা. ) থেকে এবং তিনিও ইমাম হুসাইন ( আ . ) থেকে । মহানবী ( সা.) বলেছেন : হুসাইন আমার থেকে এবং আমিও হুসাইন থেকে।

حُسَيْنٌ مِنِّيْ وَ أَنَا مِنْ حُسَيْنٌ .

   ইমাম হুসাইন ( আ.) বেহেশতের যুবকদের নেতৃদ্বয়ের একজন । মহানবী ( সা. ) থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে প্রতিষ্ঠিত অকাঠ্য সহীহ ( বিশুদ্ধ ) হাদীসে বর্ণিত হয়েছে : মহানবী ( সা .) বলেছেন :

إِنَّ الْحَسَنَ وَ الْحُسَيْنَ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الْجَنَّةِ .

অর্থ : নিশ্চয়ই হাসান ও হুসাইন বেহেশতবাসী যুবকদের নেতা ।

পবিত্র কুরআনের বক্তব্য অনুসারে কিয়ামত দিবসে প্রত্যেক জনগোষ্ঠী , সম্প্রদায়  বা দলকে তাদের নেতাদের সাথে আহ্বান করা হবে অর্থাৎ পুনরুজ্জীবিত ও পুনরুত্থিত করা হবে । পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে :

وَ يَوْمَ نَدْعُوْ كُلَّ أُنَاسٍ بِإِمَامِهِم

আর আমরা সেদিন ( কিয়ামত দিবসে ) প্রত্যেক জনগোষ্ঠীকে তাদের ইমাম ( নেতা ) সহ ডাকব ( আহ্বান করব অর্থাৎ পুনরুজ্জীবিত ও পুনরুত্থিত করব )

যে নেতারা  হিদায়ত প্রাপ্ত তাদের অনুসারী দল বা গোষ্ঠী গুলো নাজাত প্রাপ্ত হবে এবং যে নেতারা যালেম ( ظالم ) পথভ্রষ্ট , তাগুত ( طاغوت ) এবং কুফরের নেতা ( أَئِمَّةُ الْكُفْرِ ) হবে তাদের অনুসারী দল ও গোষ্ঠীরও ঠিকানা হবে তাদের নেতাদের সাথে জাহান্নাম ।

   অতএব বেহেশতের যুবকদের নেতৃদ্বয় অর্থাৎ ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হুসাইনের (আ.) পথ , শিক্ষা ও আদর্শ অনুসরণের বিকল্প নেই । আর এ দু নেতা ও ইমামের পথ , শিক্ষা ও আদর্শের অনুসারী না হলে অবশ্যই পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ , ইবনে যিয়াদ , উমর ইবনে সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস ও শিমারের অনুসারী বলে গণ্য হতে হবে । আর ইমাম হুসাইনের (আ.) সাথেও নয়  ইয়াযীদের সাথেও নয় অর্থাৎ তথাকথিত নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বনকারীদের নাকেও যে বেহেশতের সুগন্ধ পৌঁছবে না তা উপরিউক্ত  আয়াত ও উক্ত মুতাওয়াতির হাদীস তথা পবিত্র কুরআন , সুন্নাহ , ইসলামী শরিয়তের শিক্ষা ও নীতিমালা এবং বিবেক ও বুদ্ধবৃত্তির আলোকে  সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়ে যায় ।

ইমাম হুসাইনের ( আ.) জ্ন্মদিবস অর্থাৎ ৩ রা শা'বান ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অতন্দ্র প্রহরী ইসলামী বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর ( সেপহে পসদরনে ইনকিলাবে ইসলামী)ও প্রতিষ্ঠা দিবস ( রূযে পসদর ) হিসেবেও পালিত হয় । তাই তাঁদের প্রতিও জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও মুবারক বাদ । মুসলিম উম্মাহর উপর এই ইসলামী বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর হক আছে । কারণ , তারা সিরিয়া ও ইরাকে ইঙ্গ - মার্কিন - ইসরাইলী - সৌদী - আমিরাতী অশুভ খবিস প্রতিক্রিয়াশীল সাম্রাজ্যবাদী শয়তানী চক্রের পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থনপুষ্ট ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসবাদী তাকফীরী দল ও গোষ্ঠী আল-কায়দা ও দায়েশের মাথা ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে মুসলিম উম্মাহকে তথা গোটা বিশ্বকে নিরাপদ করেছে ।

এই ভয়ঙ্কর টেরোরিস্ট জঙ্গী গোষ্ঠী সমূহকে সিরিয়া ও ইরাকে দমন করা না হলে আজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমন করা সম্ভব হত না । কারণ , সিরিয়া ও ইরাকে এ সব জঙ্গি সন্ত্রাসী তকফীরী সালাফী ওয়াহহাবী গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করলে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে জঙ্গী উগ্রবাদীরা অনুপ্রাণিত হত এবং তারা এ সব দেশে ব্যাপক পরিসরে সমর্থক ও এক্টিভিস্ট জোগাড় করে এ দেশের সরকার ও জনগণের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা ও যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ও তা দীর্ঘায়িত করতে পারত । আর তখন তাদের দমন করা অসম্ভব অথবা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়ে যেত । আর সিরিয়া ও ইরাকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার সুবাদে এ সব জঙ্গি সন্ত্রাসী তাকফীরী গোষ্ঠীগুলো বিশ্বে অন্ততঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি লাভ করত । তখন বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে এদের সমর্থক সতীর্থ গোষ্ঠী গুলোর ভিত মজবুত হত এবং তাদের যেমন দমন করা যেত না বরং তাদেরকে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করা হত এ সব দেশকে । তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এদের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য দেশগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করত । আর এ সব ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী জঙ্গি গোষ্ঠী দমনে যাদের নাম বিশেষ ভাবে স্মরণ করতে হয় তারা হচ্ছেন শহীদ জেনারেল হাজ্জ কাসেম সুলাইমানী , শহীদ আবূ মাহদী আল মুহান্দিস ও কুদস আর্মি । অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  এই ইসলামী বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী বিশেষ করে কুদস আর্মি ও জেনারেল কাসেম সুলাইমানীকে সন্ত্রাসী ঘোষণা করেছে এবং সকল আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি লংঘন ও পদদলিত করে ইরাক সরকারের রাষ্ট্রীয় আমন্ত্রণে সফররত জেনারেল কাসেম সুলাইমানীকে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অদূরে হত্যা করে ।

যা হোক , ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনী সিরিয়া ও ইরাকে জঙ্গি সন্ত্রাসী তাকফীরী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের জাতীয় নিরাপত্তায় তথা বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তায় অপ্রত্যক্ষ অবদান রেখেছে যা অস্বীকার করার উপায় নেই । তাই আমাদের উচিত এ ব্যাপারে বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পাশাপাশি বিশ্ব পরিসরে  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যেন কোনো অঘটন ঘটাতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা ।

ইসলামী চিন্তাবিদ এবং গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম ওলায় মুসলেমিন মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান

 
 
captcha