IQNA

অবরুদ্ধ গাজায় বয়স্কদের ভালো থাকার সংগ্রাম

14:14 - March 21, 2022
সংবাদ: 3471583
যুদ্ধবিধ্বস্ত অবরুদ্ধ গাজার জীবনযাত্রা মানবেতর। আর তা আরো দুর্বিষহ বয়স্ক মানুষের জন্য। কেননা তাঁদের অনেকেই ঘরবাড়ি, সহায়-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও পরিবারকে হারিয়ে একেবারেই নিঃসঙ্গ। এমন সব বয়স্ক মানুষ নিয়ে কাজ করে দ্য গাজা এইজড কেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।
সংস্থাটি এরই মধ্যে গাজার বয়স্ক মানুষের আশ্রয় হয়ে উঠেছে। তারা গাজার বয়স্ক মানুষদের একত্র করেছে, তাঁদের কথা বলা ও ভাববিনিময়ের সুযোগ করে দিয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের যুক্ত করেছে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে। ফলে এখানে বহু মানুষ এমন আছেন, যাঁদের চামড়া কুঁচকে গেছে এবং হাড় দুর্বল হয়ে গেছে। কিন্তু তাঁদের কর্মস্পৃহা ও উদ্দীপনা এখনো হারিয়ে যায়নি।
মোনা আখাভি পাঁচ বছর আগে দ্য গাজা এইজড কেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হন। তখন তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। সংগঠনটি তাঁকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে। মোনার ভাষায়—‘আমি চরম হতাশার শিকার। আমি ছিলাম খুবই আত্মমুখী। অ্যাসোসিয়েশনে যোগদানের পর আমি অ্যাসোসিয়েশন ও এখানকার মানুষদের ভালোবেসে ফেলি। আমরা একসঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ের চর্চা করি। আমরা একজন অপরজনকে শিখি এবং তার চেয়ে বেশি শেখাই। ’
 
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রগ্রাম ও তুরস্কের কয়েকটি দাতব্য সংগঠনের সহযোগিতায় সংস্থাটি কারিগরি, শিক্ষা ও বিনোদনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বর্তমানে সাত শতাধিক বয়স্ক নারী ও পুরুষ সংস্থাটির সঙ্গে যুক্ত আছেন। শৈশবে যেসব বয়স্ক ব্যক্তি স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পাননি, তাঁরা সাক্ষরতা ক্লাসে অংশগ্রহণ করেন। তাঁরা বিভিন্ন হাতের কাজ শেখেন। যেমন—সুতার কাজ, এমব্রয়ডারি, কারুকাজ ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে তাঁরা অর্থ উপার্জন করেন। দ্য গাজা এইজড কেয়ার অ্যাসোসিয়েশন বয়স্ক মানুষকে গাজার দুর্বিষহ জীবন থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে। এমব্রয়ডারি বিভাগের কো-অর্ডিনেটর নাদিয়া আল-হাশিম বলেন, অ্যাসোসিয়েশনের নারী সদস্যরা নিজেদের আত্মমর্যাদা, মেধা-প্রতিভার মূল্য দিতে জানে। কাজ ছাড়াও তাঁদের আরো লক্ষ্য আছে। উৎপাদন ও অর্থই এখানে একমাত্র বিষয় নয়। তাঁরা সমাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চান।
 
তাইসির আল-শুরাফা চার বছর আগে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরে তিনি দ্য গাজা এইজড কেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর অনেক বন্ধুর মতো তিনিও সংস্থাটিকে বেছে নিয়েছেন যেন তাঁরা আবারও নিজেদের সৃজনশীলতার প্রমাণ রাখতে পারেন। তাইসির আল-শুরাফা বলেন, ‘আমি যদি কোনো দিন অ্যাসোসিয়েশনে আসতে না পারি, তবে মনে হয়, আমি কিছু হারাচ্ছি। এটা মূলত একদল দুর্বল মানুষের সংগঠন। তারা সমাজের যত্ন ও সহযোগিতা কামনা করে। একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, আমি তাঁদের সমৃদ্ধ করতে পারব। বিশেষত আমি যেহেতু বয়সে তাঁদের নিকটবর্তী, তাই আমি এখানে একজন স্বেচ্ছাসেবী ও ভাই হিসেবে অবস্থান করছি। যখন মানুষের বয়স বৃদ্ধি পায়, তখন সে পরিবার থেকে আলাদা ও একা হয়ে যায়। কিন্তু সংস্থাটি নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের একত্র করে, যেন তাঁরা জীবনের শেষ সময়টুকু ভালো কাটাতে পারে।
 
টিআরটি ওয়ার্ল্ড অবলম্বনে
captcha