IQNA

কুরআনের সূরাসমূহ/ ৮১

পৃথিবীতে কিয়ামতের আলামত

0:02 - June 07, 2023
সংবাদ: 3473843
তেহরান (ইকনা): অনেক ধর্মীয় ও তাফসীর গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, পৃথিবীর শেষভাগে  এমন কিছু ঘটনা ঘটবে যে পৃথিবীর সবকিছুই এলোমেলো ও ধ্বংস হয়ে যাবে।

পবিত্র কুরআনের ৮১তম সূরার নাম ‍“তাকভীর”। ২৯টি আয়াত বিশিষ্ট এই সূরাটি পবিত্র কুরআনের শেষ পারায় অবস্থিত। এই সূরাটি মক্কী সূরা এবং নাযিলের ক্রমানুসারে এই সূরাটি ৭ম সূরা যা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর উপর নাযিল হয়েছে।
‘তাকভীর’ মানে জট পাকানো ও অন্ধকার করা। এই নামটি এই সূরার প্রথম আয়াত থেকে নেওয়া হয়েছে। সূরা তাকভীর পুনরুত্থানের আলামত এবং পুনরুত্থানের পূর্বের ঘটনা, ওহীর ফেরেশতা (জিবরাইল) এর বৈশিষ্ট্য এবং তাঁর সাথে মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাত এবং ওহী ও পবিত্র কুরআনের সত্যতার ব্যাখ্যা সম্পর্কিত।
সূরা তাকভীরের মূল বিষয়বস্তু হল মানুষকে সতর্ক করা এবং কিয়ামতের দিন সম্পর্কে অবহিত করা।
সূরাটির বিষয়বস্তু দেখায় যে এটি ইসলামের নবী (সা.)-এর নবুওয়তের শুরুতে নাজিল হয়েছিল; কেননা মুশরিকরা নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে যে অপবাদ দিয়েছিল এবং নবীকে তাদের অপবাদ থেকে মুক্ত বলে প্রতিক্রিয়া জানানোর উদ্দেশ্যে সূরাটি নাজিল হয়।
এই সূরার আয়াতগুলিকে দুটি অংশে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে: প্রথম অংশে বিচার দিবসের আলামত এবং এর ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয়েছে; সূরার শুরুর আয়াতগুলো কেয়ামতের আলামত এবং পৃথিবীর শেষে ঘটবে এমন পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে; যার মধ্যে রয়েছে সূর্যের অনিয়ন্ত্রিত পরিচালিত হওয়া, নক্ষত্রের পতন, ভূমিকম্পের তীব্রতার কারণে পাহাড়ের স্থানান্তর এবং মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি।
আয়াতের এই অংশে, কিয়ামতের আগে পৃথিবী ব্যবস্থার ঘটনা ও তার আকস্মিকতা এবং এর সত্যতার উপর জোর দেয় এমন বারোটি শর্তযুক্ত বাক্য রয়েছে। 
দ্বিতীয় বিষয় হল কুরআনের মাহাত্ম্য এবং ওহীর ফেরেশতা জিবরাইলের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা; এই অংশে, মানুষের উপর কুরআনের প্রভাবকে বর্ণনা করা হয়েছে। এই বিষয়টির উপর জোর দেওয়ার জন্য, আল্লাহ পৃথকভাবে রাত ও সকালের তারার শপথ করেন। এই অংশে বলা হয়েছে যে, কুরআন একজন বিশ্বস্ত ফেরেশতার দ্বারা অবতীর্ণ হয়েছে, যা মুশরিকদের দাবির বিপরীতে; অর্থাৎ শয়তানের দ্বারা প্রভাবিত নয়। 
এই সূরায় যে বিষয়গুলো দেখা যায়, তা জাহিলি যুগের একটি প্রথাকে নির্দেশ করে; এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে: وَإِذَا الْمَوْءُودَةُ سُئِلَتْ بِأَيِّ ذَنبٍ قُتِلَتْ যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হল? 
এই আয়াতগুলো আরব জাহিলি যুগের একটি প্রথার সাথে সম্পর্কিত, যখন বিভিন্ন কারণে মেয়েদের জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। যে কারণগুলির মধ্যে রয়েছে চরম দরিদ্রতা, মানুষ হিসেবে নারীর প্রতি মূল্যবোধের অভাব এবং অসম্মান। ঐতিহাসিক ও তাফসীর গ্রন্থ থেকে জানা যায়, জাহিলি যুগে যখন একজন নারী সন্তান প্রসব করত, তখন নারীর বসার জন্য মাটিতে একটি গর্ত খনন করা হতো। জন্ম নেওয়া শিশুটি মেয়ে হলে তাকে একই গর্তে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো আর ছেলে হলে ওরা বাঁচিয়ে রাখতো।

captcha