ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে, খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে আরবের কেনান গোত্র এই শহরের গোড়াপত্তন করে। পরে বিভিন্ন সময়ে তা মিসরের ফেরাউনদের, আবার কখনো রোমান ও বাইজেন্টাইনদেরও দখলে যায়। ৬৩৫ খ্রিস্টাব্দে খলিফা ওমর (রা.)-এর শাসনামলে তা মুসলিমদের আয়ত্তে আসে এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হয়। (মুজামুল বুলদান, ইয়াকুত হামাবি : ৪/২০২)
কোরআনে গাজা নগরীর পরোক্ষ আলোচনা
পবিত্র কোরআনের সুরা কুরাইশে মক্কার কুরাইশ গোত্রের দুটি ব্যাবসায়িক সফরের কথা আলোচনা করা হয়েছে।
ইতিহাসের বর্ণনায় পাওয়া যায়, এক ব্যাবসায়িক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রপিতামহ হাশেম ইবনে আব্দে মানাফ এই শহরে এসে ইন্তেকাল করেন। তাঁকে এখানেই সমাহিত করা হয়। সে সূত্রেই এ শহরকে ‘গাযযাতু হাশেম’ও বলা হয়। (মুজামুল বুলদান : ৪/২০২)
হাদিসের বর্ণনায় গাজা নগরী
একটি দুর্বল সূত্রে হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘ওই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যাকে আল্লাহ তাআলা দুই বধূশহর তথা ‘আসকলান’ ও ‘গাযযা’র অধিবাসী করেছেন।’ (আলফিরদাউস-দায়লামি, হাদিস : ৩৯৪০, ফয়জুল কদির শরহে জামেউস সগির : ৪/২৭৬)
অন্য একটি দুর্বল বর্ণনায় আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) একদা কঠিন গরমের মৌসুমে খালি পায়ে বালুতে হাঁটলে তাঁর পা মুবারক গরমে ঝলসে যায়।
এ হাদিসটির সূত্রের ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের আপত্তি আছে।
মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টিতে গাজা শহর
গাজা নগরীতে প্রসিদ্ধ ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর জন্ম হয়। পরে তিনি সেখান থেকে হেজাজ ও মিসরে হিজরত করেন। কিন্তু গাজা নগরীর প্রতি তাঁর আন্তরিক টান সব সময় অনুভব করতেন। এ বিষয়ে তাঁর কবিতার দুটি চরণও প্রসিদ্ধ আছে, যার সারমর্ম হলো : ‘আমি গাজা নগরীর মাটির প্রতি টান অনুভব করি, যদিও সে আমাকে ভুলে যাক। আমি কখনো তার মাটির পরশ পেলে তা দ্বারা আমার চোখে সুরমা লাগাব।’ (মুজামুল বুলদান : ৪/২০৩)
এ ছাড়া আরো অনেক মহান মনীষী এই শহরের অধিবাসী ছিলেন।
কালের পরিক্রমায় আজ এই শহর জালিম ইহুদিদের আগ্রাসনের শিকার। যদিও তার দুঃসাহসিক ভূমিপুত্ররা এখনো তাকে বুকে আগলে রেখে জানবাজি দিয়ে আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক আল্লাহ ছাড়া তাদের সাহায্য করার মতো অন্য কেউ পাশে নেই। এমনকি স্বজাতীয় ভাইয়েরাও তাদের ভুলে গেছে। আমরা মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ফরিয়াদ করি, যেন তিনি আমাদের মজলুম ভাই-বোনদের নিরাশ ও লজ্জিত না করেন। আমিন!