IQNA

হুজ্জতুল ইসলাম মান্দেগারীর ব্যাখ্যা:

কুরআনের আলোকে ইমাম হুসাইন (আ.) ও কারবালার শহীদদের মর্যাদা

11:45 - July 07, 2025
সংবাদ: 3477662
ইকনা- ইরানের পবিত্র নগরী কুম শহরের হাওযা ইলমিয়ার শিক্ষক, হুজ্জতুল ইসলাম ও মুসলেমিন মুহাম্মাদ মেহেদী মান্দেগারী, আশুরার রাতের কুরআনিক ইবাদতের অনুষ্ঠানে, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সাথী এবং তাঁর পথের অনুসারীদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে কুরআনের আয়াতসমূহের ভিত্তিতে সেই বৈশিষ্ট্যগুলোর ব্যাখ্যা প্রদান করেন।
শনিবার রাতে কুম শহরের জমকারান মসজিদে আশুরার রাত উপলক্ষে আয়োজিত কুরআনিক জাগরণে কুরআনপ্রেমী জনগণ ও সংশ্লিষ্ট কুরআনি সংগঠনসমূহের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়।
এই অনুষ্ঠানটি ফজরের আজান পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ইরানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্বারি ওহিদ নজরিয়ান পবিত্র কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন। এরপর কুমের হাওযা ইলমিয়ার শিক্ষক হুজ্জতুল ইসলাম ও মুসলেমিন মুহাম্মাদমেহেদী মান্দেগারী বক্তব্য প্রদান করেন।
 
আশুরা — ইতিহাসের সবচেয়ে বেদনাদায়ক রাত
হুজ্জতুল ইসলাম মান্দেগারী বলেন: আশুরার রাতকে মানব ইতিহাসের অন্যতম সবচেয়ে বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক রাত হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি শুধু একটি পূর্ণাঙ্গ মানবের শাহাদাতের মুহূর্ত নয়, বরং এমন একটি সন্ধিক্ষণ, যা মানবজাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের পথে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এই রাতেই আল্লাহ তাআলা “জীবন্ত কুরআন” অর্থাৎ ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মাধ্যমে মানুষকে দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করেন:
• একদল, যারা সত্য ও ন্যায়ের পথে অগ্রসর হয়েছে
• এবং অন্যদল, যারা অত্যাচার ও বিভ্রান্তির পথে চলেছে।
মান্দেগারী আরও বলেন: আশুরার রাত এমন এক রাত, যেখানে বীর ও বুদ্ধিমান মানুষদের আলাদা করা যায় অপমানিত ও নীচ প্রকৃতির মানুষের থেকে — যারা দেখতে মানুষ হলেও বাস্তবে জন্তুর চেয়েও অধম। যদি আমরা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনযাত্রা গভীরভাবে পর্যালোচনা করি — যিনি স্বয়ং কুরআনের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি ও আসমানী শিক্ষক, এবং তাঁর পথে শহীদ হওয়া ব্যক্তিরা, যারা কুরআনিক শিক্ষায় গড়ে উঠেছেন — তাহলে আমরা বুঝতে পারি, এই মহান ব্যক্তিদের সঠিকভাবে চেনা মানে কুরআনের বাস্তবতা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে বাস্তবায়নের পথ খুঁজে পাওয়া।
এই হাওযার শিক্ষক এরপর কুরআনের কিছু আয়াত উল্লেখ করেন, যেগুলো ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পথকে ব্যাখ্যা করে, এবং বলেন:
এই তরবিয়তি পথের সূচনা হয়েছে সূরা ফাতেহা থেকে।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ؛ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ
(আমাদের সোজা পথে পরিচালিত করো — সে পথ যাঁদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ করেছো, তাদের পথ, যারা তোমার রোষের পাত্র নয় এবং যারা পথভ্রষ্টও নয়)।
এখানে আল্লাহ তাআলা একটি তরবিয়তের (নৈতিক গঠন ও দিকনির্দেশনার) ভোজের আসর সাজিয়েছেন, যাতে তাঁর বান্দাদের জন্য সিরাতে মুস্তাকিম (সোজা পথ) স্পষ্ট করা হয়েছে।
এই একই অর্থ সূরা ইনসান-এর তৃতীয় আয়াতেও রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে:
إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا
(আমরা তো তাকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি; সে হয় কৃতজ্ঞ হবে, নয়তো অকৃতজ্ঞ হবে)।
অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা হেদায়তের পথ খুলে দিয়েছেন, কিন্তু এই তরবিয়ত গ্রহণ করা নির্ভর করে মানুষের উপর — কেউ কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে গ্রহণ করে, আর কেউ অস্বীকার করে ও গাফেল থাকে।
 
মানবতার নৈতিক শ্রেণিবিভাগ
হুজ্জতুল ইসলাম ওল মুসলিমিন মানদেগারী বলেন: মানবজাতি দুই শ্রেণিতে বিভক্ত: ইতিহাসজুড়ে মানুষ দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে এসেছে—এক শ্রেণি হলো "নৈতিকভাবে গঠনযোগ্য", যারা কুরআন ও আহলে বাইতের (আ.) আদর্শে শিক্ষালাভ করে এবং সত্যের পথে অগ্রসর হয়। অপর শ্রেণি হলো "নৈতিক শিক্ষাবিমুখ", যারা এই সঠিক গঠনপ্রক্রিয়া গ্রহণ করে না।
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর যুগে গঠনযোগ্যদের সংখ্যা:
নবী করিম (সা.) এবং ইমামদের যুগে এই নৈতিক পথ গ্রহণকারীর সংখ্যা খুবই কম ছিল। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সময়ে এই সংখ্যা ৭২-এ গিয়ে ঠেকেছিল। এই ৭২ জনই কিয়ামতের দিনে বিশেষ সম্মান ও সালাম লাভ করবে এবং তারা কুরআন ও আহলে বাইতের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষার বাস্তব রূপ।
কুরআনের আলোকে গঠনযোগ্যদের শ্রেণিবিভাগ:
তিনি সূরা নিসা, আয়াত ৬৯ উল্লেখ করে বলেন:
«وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا»،
"আর যে কেউ আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, সে তাদের সঙ্গী হবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন—নবী, সিদ্দিক (সত্যবাদী), শহীদ, সৎকর্মশীল এবং যারা আল্লাহ ও রাসূলের সত্যিকারের অনুগামী। কতই না উত্তম এরা সঙ্গী হিসেবে!"
এই আয়াতে পাঁচ শ্রেণির নৈতিকভাবে গঠনযোগ্য মানুষদের কথা বলা হয়েছে:
১. নবীগণ
২. ইমাম বা সিদ্দিকগণ
৩. শহীদগণ (বদর, উহুদ, কারবালা, ইসলামী বিপ্লব, প্রতিরক্ষা যুদ্ধ, হরেম রক্ষাকারী, ও ১২ দিনের গাজা যুদ্ধের শহীদরা)
৪. সৎকর্মশীল
৫. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রকৃত অনুসারীরা
 
নৈতিক শিক্ষাবিমুখদের পরিচিতি:
তিনি বলেন, দ্বিতীয় শ্রেণি হলো "নৈতিক শিক্ষাবিমুখ" বা "الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ"—যারা হিদায়াত (সত্যপথ) থেকে মুখ ফিরিয়েছে এবং সত্য ও সৎ শিক্ষার বিরোধিতা করে। কখনো তারা নবীকে (সা.) অবমাননা করেছে, কখনো ইমাম হুসাইন (আ.)-কে পাথর ছুঁড়েছে, আর আজকের দিনে তারা হলো দখলদার জায়নবাদী শক্তি যারা শিশু ও নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করে।
তৃতীয় শ্রেণি—ভ্রান্তপথগামী বা উদ্ভ্রান্ত:
তৃতীয় শ্রেণি হলো "الضَّالِّينَ", অর্থাৎ যারা পথ হারিয়েছে বা বিভ্রান্ত। তারা না সত্যপথ গ্রহণ করেছে, না একেবারে অস্বীকার করেছে; বরং তারা হতবুদ্ধি ও উদাসীন অবস্থায় রয়েছে। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর যুগে মদিনা, কুফা ও শামে এরা উপস্থিত ছিল এবং আজও সমাজে এমন লোক রয়েছে যারা সত্য-মিথ্যার সংঘর্ষে নির্লিপ্ত হয়ে জীবনযাপন করে।
 
 
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সাথীরা: চিরজীবিত শহীদ
হুজ্জতুল ইসলাম ওল মুসলিমিন মানদেগারী বলেন: কুরআনের দৃষ্টিতে শহীদেরা মৃত নয়, বরং জীবিত: কুরআন কারিম সূরা বাকারা-তে বলেন: 
 «وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَكِنْ لَا تَشْعُرُونَ»،
"আর তোমরা আল্লাহর পথে নিহতদের ‘মৃত’ বলো না; বরং তারা জীবিত, তবে তোমরা তা অনুধাবন করতে পারো না।"
(সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৪)
ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর বিশ্বস্ত সাথীরা বাহ্যিকভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাঁরা চিরজীবিত এবং অমর। তাঁরা আজও মানবজাতিকে সত্যের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। আশুরার রজনী কেবল একটি ঐতিহাসিক রাত নয়, বরং এটি একটি নৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতীক, যা কুরআন ও আহলে বাইতের অনুসরণকে নির্দেশ করে—এ পথ অনুসরণই মানুষকে পার্থিব ও পরকালীন সাফল্য এনে দেয়।
 
শহীদদের জীবিত থাকার সত্যতা:
তিনি সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৬৯ উল্লেখ করে বলেন:
«وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ»
"তুমি কখনোই ভাবো না যে, যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে, তারা মৃত; বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের কাছে রিজিকপ্রাপ্ত হচ্ছে।"
(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৬৯)
এই আয়াতে মহান আল্লাহ শহীদদের মর্যাদা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। যাঁরা আল্লাহর পথে প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, তাঁরা প্রকৃত অর্থে জীবিত এবং মর্যাদাসম্পন্ন। আশুরার শহীদগণ, বিশেষ করে ইমাম হুসাইন (আ.) ও তাঁর অনুগত সাথীরা এই আয়াতের জীবন্ত দৃষ্টান্ত, যাঁরা চিরজীবিত থেকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ভোগ করছেন।
জাগতিক ও পরকালীন আনন্দের পার্থক্য:
তিনি আরও বলেন, এই আয়াতের পরবর্তী অংশে শহীদদের “আনন্দে থাকা” উল্লেখ আছে। আনন্দ বা ভোগের দুই ধরন রয়েছে:
১. জাগতিক আনন্দ – যা ক্ষণস্থায়ী ও সীমিত।
২. পরকালীন আনন্দ – যা চিরন্তন ও অসীম।
দুই বিপরীত পথের প্রতীক: ইয়াজিদ, অভিশপ্ত এবং অত্যাচারী, ছিল দুনিয়াবি ভোগ-বিলাসের প্রতীক। ৩৭ বছরের জীবনে সে অন্যায় ও ভোগবিলাসে লিপ্ত ছিল, যার শেষ ফলাফল ধ্বংস ও লজ্জা।
এর বিপরীতে, ইমাম হুসাইন (আ.) ও কারবালার শহীদগণ হলেন পরকালীন ও চিরস্থায়ী আনন্দের প্রকৃত প্রতীক—যাঁরা ১৪০০ বছর ধরে আধ্যাত্মিক সুখ ও সম্মান ভোগ করছেন, কারণ তাঁরা আল্লাহর পথে জীবন ও সম্পদ উৎসর্গ করেছিলেন।
শহীদদের বৈশিষ্ট্য কুরআনের আলোকে
হুজ্জতুল ইসলাম ওল মুসলিমিন মানদেগারী বলেন:
কারবালার শহীদদের চারটি বিশেষ গুণ:
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পাশে শহীদ হওয়া ব্যক্তিরা কুরআনের আলোকে অসাধারণ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ছিলেন:
১. নৈতিকভাবে গঠনযোগ্য ও হিদায়াতগ্রহণকারী — তারা কুরআন ও আহলে বাইতের আদর্শ গ্রহণ করে নিজেকে গঠন করেছিলেন।
২. তাদের বাহ্যিক মৃত্যু প্রকৃত মৃত্যুর সমান নয় — তারা আল্লাহর কাছে জীবিত।
৩. আখেরাতের সত্যিকারের সৌভাগ্যবান — তারা পরকালের চিরন্তন আনন্দ ও শান্তির ভোগকারী।
৪. বিশেষ জান্নাতের অধিবাসী — তাঁরা আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট এক বিশেষ জান্নাতে অবস্থান করছেন।
আত্মা যার শান্ত, তার পুরস্কার জান্নাতে প্রবেশ:
তিনি সূরা ফজরের শেষের আয়াতসমূহ উল্লেখ করেন:
«يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ؛ ارْجِعِي إِلَى رَبِّكِ رَاضِيَةً مَرْضِيَّةً؛ فَادْخُلِي فِي عِبَادِ؛ وَادْخُلِي جَنَّتِي»
‘‘হে আত্মা, যে শান্ত ও নিশ্চিন্ত হয়েছে!
তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে ফিরে যাও সন্তুষ্ট হয়ে এবং তিনি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট।
তুমি আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রবেশ করো,
এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।’'
(সূরা ফজর, আয়াত ২৭–৩০)
এই আয়াতগুলো সেইসব মানুষের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করেছে এবং তাদের জন্য নির্দিষ্ট হয়েছে এক বিশেষ জান্নাত—যার মহান বাসিন্দারা হচ্ছেন কারবালার শহীদগণ ও আহলে বাইতের সদস্যরা।
 
আল্লাহর ভালোবাসার যোগ্য সৈনিকেরা:
তিনি আরও সূরা সাফ, আয়াত ৪ এর দিকে ইঙ্গিত করেন:
«إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ»
‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালোবাসেন তাদের, যারা তাঁর পথে যুদ্ধ করে, পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, যেন তারা একটি সুদৃঢ় প্রাচীর।’'
(সূরা সাফ, আয়াত ৪)
এই আয়াতটি সেই সব শহীদের গুণাবলি প্রকাশ করে যারা সংগঠিত, ঐক্যবদ্ধ ও অটলভাবে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে। এই বিশেষ গুণাবলি কারবালার শহীদদের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দেখা যায়—বিশেষ করে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর মধ্যে—যাঁরা আল্লাহর প্রতি গভীর প্রেম ও আত্মোৎসর্গের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিলেন।
ইমাম হুসাইন (আ.) কেন আশুরার রাতে মেয়াদ চাইলেন?
হুজ্জতুল ইসলাম ওল মুসলিমিন মানদেগারী বলেন:
 
 
আশুরার রাতের মেয়াদ চাওয়ার মূল উদ্দেশ্য:
ইমাম হুসাইন (আ.) আশুরার রাতে যে সময় চেয়েছিলেন, তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল কুরআন পাঠ করা এবং মানুষকে আসল কুরআনের দিকে ফিরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো। তিনি নিজে বহুবার কুরআনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছিলেন এবং মানুষকে কুরআনের সত্য নির্দেশনার প্রতি আহ্বান করেছিলেন।
কুরআনের দৃষ্টিতে খবর বা তথ্য তিন প্রকার:
কুরআন মাজিদ অনুযায়ী, পৃথিবীর সংবাদ বা তথ্য তিনটি বিভাগে বিভক্ত:
১. সম্পূর্ণ মিথ্যা খবর
২. সন্দেহযুক্ত বা অর্ধসত্য খবর
৩. সত্য ও বিশুদ্ধ খবর
প্রথম ধাপ — সম্পূর্ণ মিথ্যা সংবাদ:
তিনি বলেন, সূরা মুনাফিকুন-এর প্রথম আয়াতে আল্লাহ হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে মুনাফিকদের সংবাদ, এমনকি যদি তা সত্য বলেও মনে হয়, তা আসলে মিথ্যা।
উদাহরণস্বরূপ, ইবনে জিয়াদ ও ইয়াজিদের প্রচারণা—যারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে কুফাবাসীকে বিভ্রান্ত করেছিল।
আজও এই মিথ্যা প্রচারণা ইসরায়েল ও আমেরিকার পক্ষ থেকে চালানো হয়, যারা বলে তারা কেবল সরকারবিরোধী, সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে না। কিন্তু গাজায় শিশুদের হত্যার চিত্র দেখলে বোঝা যায়, তারা মিথ্যাবাদী।
এই মিথ্যা সংবাদ ও প্রোপাগান্ডার কারণেই মানুষ ইমাম হুসাইন (আ.) ও কুরআন নাতিককে সাহায্য করেনি।
আজও কিছু ফারসি ভাষার মিডিয়া ঠিক এই কাজ করছে—সত্যকে আড়াল করে মিথ্যা প্রচার।
দ্বিতীয় ধাপ — সন্দেহজনক সংবাদ:
এই ধরণের সংবাদ সম্পর্কে সূরা হুজরাত (আয়াত ১২) এবং সূরা আবাস (আয়াত ৩৪)-এ সতর্ক করা হয়েছে:
‘‘হে ঈমানদারগণ! অধিকাংশ ধারণা থেকে বিরত থাকো, কারণ কিছু ধারণা পাপ। গুপ্তচরবৃত্তি কোরো না, একে অন্যের গিবত কোরো না। কেউ কি চায় যে, সে নিজের মৃত ভাইয়ের মাংস খাবে? নিশ্চয়ই তা ঘৃণিত।’’
(সূরা হুজরাত, আয়াত ১২)
এই শ্রেণির খবর স্পষ্ট নয় এবং অনেক সময় মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
তৃতীয় ধাপ — সত্য ও নির্ভরযোগ্য সংবাদ:
এই শ্রেণির সংবাদ আল্লাহ এবং তাঁর ওলিয়াগণ দিয়ে থাকেন। এই খবরই মানুষকে হিদায়াতের দিকে পরিচালিত করে।
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর ৭২ জন সাথী এই সত্য সংবাদের অনুসারী ছিলেন এবং সেই পথেই তাঁরা শহীদ হন।
তবে বাকি অনেকেই ছিল মিথ্যা বা সন্দেহভাজন সংবাদ দ্বারা প্রভাবিত।
অনুষ্ঠানের শেষ অংশ:
এই আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠানে হাদি সালেহজু, ইসলামিক নেটওয়ার্ক টিভির উপস্থাপক, পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন।
"আনওয়ারুল হুদা" দল ক্বিরআত ও মদীহা পরিবেশন করে। এরপর আহলে বাইতের এক ভক্ত “জিয়ারতে আশুরা” পাঠ করেন এবং শেষপর্যায়ে ক্বোম প্রদেশের একজন স্বনামধন্য ক্বারী কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করেন। 4292789#
 
 
 
captcha