IQNA

ইতিহাসের পাতায় ৮ম জ্বিলহজ ও মুসলিম ইবনে আক্বীল

20:24 - July 19, 2021
সংবাদ: 3470352
তেহরান (ইকনা): শেখ মুফীদ ( রহ:) কিতাবুল ইরশাদ গ্রন্থে লিখেছেন : জেনে রেখো যে ৬০ হিজরী সালের ৮ যিল হজ্জ্ ( ইয়াওমুত্ তার্ভিয়াহ্ অর্থাৎ তার্ভিয়াহর দিবসে ) মঙ্গলবার কূফা নগরীতে সেখানকার অধিবাসীদের কাছে ইমাম হুসাইনের (আ :) প্রেরিত দূত ও প্রতিনিধি হযরত মুসলিম ইবনে আক্বীল্ ইয়াযীদের নবনিযুক্ত গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের বিরুদ্ধে ক্বিয়াম ( গণ অভ্যুত্থান ) করেন।

কিন্তু ইবনে যিয়াদ ষড়যন্ত্র ও কূট কৌশল প্রয়োগ করে মুসলিম ইবনে আক্বীলের এ ক্বিয়াম ও গণ অভ্যুত্থান দমন করে এবং পরের দিন ৯ যিল্ হজ্জ্ - যা ইসলামী হজ্জ্ পঞ্জিকায় আরাফাত দিবস নামে প্রসিদ্ধ ও পরিচিত সে দিন পাপিষ্ঠ যালিম ইবনে যিয়াদের নির্দেশে তাঁকে ( মুসলিম ইবনে আক্বীল ) উঁচু স্থান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে শহীদ করা হয় ।

আর ৬০ হিজরী সালের ৮ যিল হজ্জ্ ইয়াওমুত্ তার্ভিয়াহর দিবসে - যে দিন হাজীগণ আরাফাতের ময়দান , মুযদালিফা ( মাশ' আর ) এবং কুরবানগাহ্ ( পশু কুরবানির স্থল ) মিনায় যাওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন সে দিবসেই ইমাম হুসাইন ( আ.) আরাফাতের ময়দান , মুযদালিফা ( মাশ'আর ) ও কুরবানগাহ মিনায় না গিয়ে ( অর্থাৎ মানাসিক - ই হজ্জ্ বা হজ্জব্রতের বদলে ) কতিপয় ঘনিষ্ঠ সঙ্গীসাথী , নিকটাত্মীয় ও স্বীয় পরিবার পরিজন নিয়ে ইরাকের কূফা নগরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন এবং পবিত্র মক্কা থেকে বের হয়ে যান।

এ যেন খানা- ই কা'বা থেকে বিদায় নিয়ে হুসাইন ( আ.) যাচ্ছেন কাতলেগাহের ( বধ্যভূমি = শাহাদাত বর্ণের স্থান ) দিকে।
স্বীয় পরিবার পরিজন ও সঙ্গীসাথী নিয়ে হুসাইন হিজরত করলেন কা'বা থেকে কা'বার প্রভুর দিকে ।
প্রতিশ্রুত ভূমি নাইনাভা ( কারবালা -'ই মুআল্লা ) এ দুনিয়ায় হুসাইনের গন্তব্যস্থল ।
কারবালার বধ্যভূমি হবে হুসাইন ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের মে'রাজস্থল ( উর্ধ্বালোকে উড্ডয়নস্থল )।
এ বধ্যভূমে আশুরার দিনে শিশু আসগর হুসাইনের কোলে দেয় হাসি হারমালার ত্রিশূল শরাঘাতে
বাবা হুসাইনের মযলুমিয়তের সাক্ষ্যী ( শাহেদ ) হয়ে
তাঁর ( আসগর ) তপ্ত লহু ( রক্ত ) সইতে পারে নি কারবালার মাটি, তাই তা উড়ে গিয়েছিল উর্ধ্ব গগণ পানে।

৮ ও ৯ যিল হজ্জ্ থেকে (১০ মুহররম) আশুরার দিবস - এই একমাস

বেহেশতের যুবকদের নেতা হুসাইনের লাল রক্তিম আন্দোলন ও ক্বিয়ামের ইতিহাস ।।

 

পবিত্র মক্কার কা'বা ও মসজিদুল হারাম ( হারাম শরীফ ) প্রাঙ্গণে হজ্জব্রত পালন কালে ইয়াযীদের গুপ্ত ঘাতক বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিলে ইমাম হুসাইন ( আ. ) সেখানে থাকা আর সমীচীন মনে করেন নি । কারণ তিনি চান নি যে পবিত্র কাবায় তাঁকে হত্যা ও রক্তপাতের মাধ্যমে পবিত্র স্থান সমূহের হুরমত ( সম্মান ও মর্যাদা ) বিদীর্ণ হোক । কারণ , আশ্রয়গ্রহণকারী প্রাণী পশু এমনকি মাছি মারা ও হত্যা করাও সেখানে হারাম ও নিষিদ্ধ ।

পাপাত্মা খবীস ইয়াযীদ ও তার যালিমশাহী সরকার ও প্রশাসন যে কোনো ধরনের অন্যায় , অপরাধ , অপকর্ম ও সহিংসতা ঘটিয়ে পবিত্র হারাম - ই আমন - ই ইলাহীর ( মহান আল্লাহর নিরাপদ হারাম অর্থাৎ পবিত্র মক্কা - ই মুআযযামাহ্ ) অবমাননা ও অসম্মান করতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠা বোধ করত না । আর ইমাম হুসাইনের ( আ .) শাহাদাতের অল্প কিছু কাল পরেই পাপিষ্ঠ নরাধম ইয়াযীদের প্রেরিত সেনাবাহিনী পবিত্র মক্কা নগরী আক্রমণ করে মিনজানিক দিয়ে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করে পবিত্র কা'বায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল । আর এ ছাড়াও পবিত্র মক্কায় হজ্জ্ ব্রত পালন কালে ইমাম হুসাইন (আ.)কে গোপন হত্যা ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হলে ইয়াযীদের নিযুক্ত গভর্ণরও গোপনে ইমাম হুসাইন ( আ.)কে গ্রেফতার ও বন্দী করে ইয়াযীদের কাছে সমর্পণের ষড়যন্ত্রও এঁটেছিল ।

আর এ সব ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হলে কারবালায় আশুরার সুমহান হুসাইনী বিপ্লব ও আন্দোলন আর সম্ভব হত না বরং খাঁটি ইসলাম ও পবিত্র কুরআন পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ ও বনী উমাইয়ার হাতে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যেত ।

সবাইকে ৮ ও ৯ যিল হজ্জে কূফাবাসীদের কাছে ইমাম হুসাইনের দূত ও প্রতিনিধি জনাব - ই মুসলিম ইবনে আক্বীলের ( রা:) শাহাদাত দিবস উপলক্ষে জানাচ্ছি আন্তরিক শোক ও তাসলিয়ত ।

৮ যিল হজ্জ্ ( ইয়াওমুত তার্ভিয়াহ ) - এর মুস্তাহাব রোযার অনেক ফযীলত আছে । বর্ণিত হয়েছে যে তা ( ইয়াওমুত তার্ভিয়াহ বা ৮ যিল হজ্জের রোযা ) ৬০ বছরের কাফফারাহ্ স্বরূপ। শেখ - ই শহীদের মতে এ দিন ( ৮ যিল হজ্জ্ ) গোসল করা মুস্তাহাব ।
৯ যিল হজ্জের রাত ( ৮যিল হজ্জের দিবাগত রাত ) মুবারক ( আশীর্বাদ পুষ্ট ) রজনী সমূহের অন্তর্ভুক্ত । এ রাত হাজত ( প্রয়োজন ও অভাব ) বিমোচন কারী মহান আল্লাহর কাছে মুনাজাত করার রাত । তৌবা এ রাতে গৃহীত হয় এবং দুআ ও প্রার্থনায় সাড়া দেয়ার রাতও এটি ।

যে ব্যক্তি এ রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করবে তার একশো সত্তর বছরের নেকী ও সওয়াব হবে । ৯ যিল হজ্জের দিন ও রাতের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল আছে ( মাফাতীহুল্ জিনান্ গ্রন্থ দ্ষ্টব্য)।

ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান
৮ যিল হজ্জ্ , ১৪৪২ হি.

 

captcha