IQNA

‘গ্লোবাল মার্চ টু গাজা’ থেকে ফিরে

0:03 - June 28, 2025
সংবাদ: 3477615
ইকনা- গাজার ওপর ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ভাঙতে চলতি মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় ‘গ্লোবাল মার্চ টু গাজা’ ক্যাম্পেইন। বিশ্বের ৮০টি দেশের চার হাজার মানবাধিকারকর্মী এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের আলহাজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন। এ বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আতাউর রহমান খসরু।
‘গ্লোবাল মার্চ টু গাজা’ একটি ওপেন ক্যাম্পেইন। পৃথিবীর ৮০টি দেশের মানবাধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংস্থার কর্মীরা এতে অংশ নিয়েছেন। এই অনলাইন ক্যাম্পেইনটি যখন আমার সামনে আসে তখন তাতে অংশ নেওয়া নিজের ঈমানি দায়িত্ব মনে করেছি। ফলে আমি মিসরে যাই এবং অংশ নিই।
 
 
কালের কণ্ঠ : গ্লোবাল মার্চ টু গাজা কেমন ছিল?
 
মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন : (মিসরে) এটা ছিল দুই দিনের কর্মসূচি। মিসরের রাজধানী কায়রো থেকে শুরু হয়। লক্ষ্য ছিল রাফাহ ক্রসিংয়ে ইসরায়েল যে অবৈধ অবরোধ দিয়ে রেখেছে তা ভেঙে দেওয়া, যেন গাজায় মানবিক সাহায্য ও ত্রাণ পৌঁছানো যায়; কিন্তু আমরা রাফাহ পর্যন্ত যেতে পারিনি। সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হওয়ার পরও ইসমাইলিয়া সীমান্তে যাওয়ার পর মার্চ টু গাজা থামিয়ে দেওয়া হয়।
 
 
সেখানে আমরা পৌঁছানোর পর আমাদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। পরে কারো পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেওয়া হয়, কাউকে কাউকে ডিটেনশনে (বন্দিশালা) পাঠানো হয় এবং কয়েকজনকে সরাসরি এয়ারপোর্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : এই কর্মসূচির প্রতি কি মিসরীয় জনসাধারণের সমর্থন ছিল?
 
মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন : অবশ্যই ছিল। তারা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করেছে।
 
 
মিসরের সাধারণ মানুষ গাজা ও ফিলিস্তিনের মানুষের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল। বাংলাদেশের মানুষের প্রতিও তারা সুধারণা পোষণ করে। তারা বাংলাদেশিদের ‘আহসানুন নাস’ (উত্তম মানুষ) বলে। আমরা গাজাবাসীর সহযোগিতা করতে এসেছি জেনে তারা অত্যন্ত খুশি হয়েছে।
কালের কণ্ঠ : গ্লোবাল মার্চ টু গাজায় অংশ নেওয়া পর গাজা, ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ইত্যাদি বিষয়ে আপনার চিন্তার কোনো পরিবর্তন এসেছে?
 
মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন : গ্লোবাল মার্চ টু গাজায় অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই ছিল ভিন্ন ধর্মাবলম্বী।
 
 
কেবল মানবিক কারণে তাঁরা অংশ নিয়েছেন। বাংলাদেশে মার্চ ফর গাজার মতো বৃহত্তর সমাবেশ হয়েছে। এই সমাবেশ দেখে আমার ধারণা হয়েছিল গ্লোবাল মার্চ টু গাজা কর্মসূচিতে কমপক্ষে ১০টি সংস্থা ও ১০০ মানবাধিকারকর্মী অংশ নেবেন। কিন্তু আমরা আর কাউকে খুঁজে পাইনি। এটাও সত্য যে সেখানে অংশগ্রহণে নানামুখী ঝুঁকি ছিল। আমি মনে করি, ঢাকার বুকে লাখ লাখ মানুষ সমবেত হওয়ার চেয়ে রাফা সীমান্তে ১০০ মানুষ উপস্থিত হওয়ার তাৎপর্য বেশি। কেননা সেখানে বিশ্ব মিডিয়ার যে মনোযোগ ছিল ঢাকার প্রতি তা নেই।
কালের কণ্ঠ : মিসরে আপনি কত দিন ছিলেন?
 
মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন : গ্লোবাল মার্চ টু গাজা কর্মসূচি ছিল দুই দিনের। কিন্তু আমি মিসরে ছিলাম প্রায় ১৭ দিন। আপনি জেনে থাকবেন, গাজার প্রায় দেড় লাখ মানুষ মিসরে অবস্থান করছে। মিসরে অবস্থানের সময় আমি এসব গাজাবাসীর সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করি, তাদের জন্য কোরবানির ব্যবস্থা করি।
 
কালের কণ্ঠ : আমরা জানতে পেরেছি, আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মিসরের আল জুদি মেডিক্যাল সেন্টারের সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। বিষয়টি যদি স্পষ্ট করতেন?
 
মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন : মিসরে যেসব গাজাবাসী অবস্থান করছে চিকিৎসাসেবা গ্রহণে তারা নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে। তাদের জন্য চিকিৎসাসেবা বৃদ্ধি করতে আমরা কায়রোর আল জুদি মেডিক্যাল সেন্টারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। সেন্টারটি মিসরের সরকার অনুমোদিত একটি সেবা সংস্থা পরিচালনা করে। চুক্তি অনুসারে আমরা মেডিক্যাল সেন্টারের সেবার পরিধি বাড়াব এবং আমাদের রেফারেন্সে কোনো রোগী গেলে সে বিনা মূল্যে বা ছাড় মূল্যে সেবা লাভ করবে।
 
কালের কণ্ঠ : বেশ কয়েক বছর ধরে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন গাজায় একটি মেহমানখানা চালাচ্ছে। সেটা কি এখনো চালু আছে? যুদ্ধ পরিস্থিতির ভেতর সেটা কিভাবে চালান?
 
মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন : গাজার খান ইউনুসের আল মাওয়াকিফে আমাদের একটা মেহমানখানা আছে। আল হামদুলিল্লাহ! সেটা এখনো চালু আছে। আমরা সপ্তাহে এক-দুই দিন সেখান থেকে খাবার বিতরণ করি। আমাদের সহযোগী সংস্থা ইসরায়েলের কাছ থেকে উচ্চ মূল্যে খাবার কিনে সেখানে বিতরণ করে।
 
কালের কণ্ঠ : ফিলিস্তিন ও আরব জনগোষ্ঠী কি ফিলিস্তিনের মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী?
 
মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন : হ্যাঁ, তারা প্রচণ্ড রকম আশাবাদী। কেননা ফিলিস্তিনে মুসলমানের বিজয়ের ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। তারা মনে করে, এই সংকট সাময়িক এবং অচিরেই তা কেটে যাবে।
 
কালের কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।
 
মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন : আপনাকেও ধন্যবাদ। ধন্যবাদ কালের কণ্ঠ পরিবার ও সব পাঠককে।
captcha