IQNA

হে হুসাইন জান! আমার ভাগ্য পরিবর্তন করুন...!  

0:01 - July 01, 2025
সংবাদ: 3477632
ইকনা- হুজ্জাতুল ইসলাম জাফর সালেহান (আল্লামা সাআদাতপরওয়ার ও আয়াতুল্লাহ সৈয়দ আবদুল্লাহ জাফরি তেহরানি রহমাতুল্লাহি আলাইহিমার সুলুকি শিষ্য)

সাইয়্যেদুশ শুহাদা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শোক পালনের দিনগুলিতে উত্তমভাবে উপকৃত হওয়ার জন্য কিছু নির্দেশনা:

এই মহররম মাসের প্রথম দশক থেকে আশুরার দিন পর্যন্ত বীজ বপন করার সময়। এই পরিপূর্ণতা ও আধ্যাত্মিকতার বীজগুলি অত্যন্ত পথপ্রদর্শক এবং এতই মাহাত্ম্য ও শক্তিধর যে, ইতিহাসের অভিজ্ঞতা এবং মাসুম ইমামগণের (আ.) বর্ণিত হাদীস থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা অনুযায়ী, বহু মানুষ রয়েছেন যারা পবিত্র রমজান মাসে - যে মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে এবং লাইলাতুল কদর রয়েছে - যারা আধ্যাত্মিক ও নৈতিক পরিবর্তন লাভ করেননি এবং তাদের জীবনের ভাগ্যেরও কোন পরিবর্তন হয়নি, কিন্তু মহররম মাস, অর্থাৎ এই মহররমের প্রথম দশক, তাদেরকে আলোড়িত করেছে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে, পতনের গহ্বর থেকে উদ্ধার করেছে এবং প্রকৃত অর্থে হুসাইনী চরিত্রের মানুষে পরিণত করেছে, এরকম উদাহরণ কম নয়।

 

 মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বগণ বলেছেন এর পথ দুটি: এক. তাওহীদের প্রতি মনোযোগ, দুই.  বেলায়াত(ইমামতের নেতৃত্ব)-এর প্রতি মনোযোগ। এই রাত থেকেই সিদ্ধান্ত নিন যে [আগামীকাল থেকে], যা হিজরি নববর্ষের প্রথম দিন এবং মহররম মাসেরও প্রথম দিন, আজীবন এই আমলটি করবেন; প্রতিদিন, শনিবার থেকে দ্বিতীয় শুক্রবার পর্যন্ত, অর্থাৎ চৌদ্দ দিন [এই কাজটি করবেন]। [দিন] শনিবার একশতবার সূরা ইখলাস (তাওহীদ), একশতবার দরূদ, সমস্ত নবী ও আল্লাহর অলিদের পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ (সা. আ.)-এর পবিত্র ও মুবারক রূহের উদ্দেশ্যে হাদিয়া করুন। রবিবার আমীরুল মুমিনীন (আ.)-এর জন্য, সোমবার সিদ্দিকায়ে তাহেরা (আ.)-এর জন্য, এভাবে দ্বিতীয় শুক্রবার পর্যন্ত, যা আপনি কুতবে আলামে মাওজুদ হযরত বাকিয়্যাতুল্লাহ আল-আযাম ইমাম আল মাহদী (আ.)-এর উদ্দেশ্যে পেশ করবেন - যার জন্য আমার রূহ ও অন্য সকলের রূহ কুরবান হোক। এরপর আবার পরের শনিবার থেকে একইভাবে, অর্থাৎ প্রতি দুই সপ্তাহে, চৌদ্দ মাসুমের উদ্দেশ্যে।

মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিবর্গ ও আমাদের শিক্ষকগণ এটিকে অত্যন্ত পথপ্রদর্শক বলে মনে করতেন; কারণ আপনি জানেন যে, সূরা ইখলাস তিনবার পাঠ করলে একটি পূর্ণ কুরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়; অর্থাৎ আপনি উদাহরণস্বরূপ শনিবারে প্রায় তেত্রিশটি কুরআন খতমের সওয়াব রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রূহে হাদিয়া করছেন।

এবং তা আপনি সমস্ত নবী ও অলিদের পক্ষ থেকে পেশ করছেন। এখানে যখন আপনি সমস্ত নবী ও আল্লাহর অলিদের প্রতি মনোযোগ দিলেন, তখন অন্যদিক থেকেও বিশেষ মনোযোগ, অনুগ্রহ ও দৃষ্টি আপনার উপর বর্ষিত হবে।

 হযরত আয়াতুল্লাহ কাজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, এই দশকে যদি মাতমের মজলিস দীর্ঘ হয় এবং এর কারণে আপনার তাহাজ্জুদের সালাত কাযা হয়ে যায়, তাহলে মাতমে অংশগ্রহণ তাহাজ্জুদ সালাতের উপর অগ্রাধিকার পাবে। তিনি বলেছেন, মাতমের মজলিসে অংশ নিন, তাহাজ্জুদ সালাত কাযা হয়ে গেলে পরে তার কাযা আদায় করে নেবেন। এটি প্রমাণ করে যে, সাইয়্যেদুশ শুহাদার মজলিসে উপস্থিতি, অশ্রু, আহাজারি, বিলাপ এবং হুসাইনী কাফেলার সাথে একাত্মতা প্রকাশ, আধ্যাত্মিকভাবে অত্যন্ত বড় গিট খোলার কাজ করে, অত্যন্ত কার্যকরী, অত্যন্ত পথপ্রদর্শক।

 প্রতিদিনের রুটিন করুন যে, এই সকল প্রাকৃতিক, পার্থিব ও আসমানী বিপদ-আপদ থেকে হিফাযতের জন্য, আপনার তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে আপনার শরীরের উপর লিখুন "ইয়া আলী (হে আলী)" এবং আপনার নিয়্যাত হোক যে আপনি নিজেকে আমীরুল মুমিনীন (আ.)-এর হিফাযতে সমর্পণ করছেন এবং নিশ্চিতভাবে সেই মহান ব্যক্তি যত্ন নেবেন, হিফাযত করবেন, এই মহান ব্যক্তিদের হাতেই জগতের চাবিকাঠি।

 

 এই দশকে মাতমের মজলিসে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে অত্যন্ত তাকিদ করা হয়েছে। আপনার কর্মক্ষেত্রে, আপনার ঘরে, খাবার রান্নার সময়, খাবার খাওয়ার সময়, প্রতিটি অবস্থায় হুসাইন ইবনে আলী (আ.)-কে স্মরণ করুন এবং বারবার বলুন:

"صَلَّی اللهُ عَلَیکَ یَا اَباعَبْدِاللَّهِ!"

(সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া আবা আবদিল্লাহ! - হে আবা আবদিল্লাহ! আপনার উপর আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক!)

এই বাক্যটি যেন আপনার জিহ্বার ডগায় থাকে, এই আধ্যাত্মিক সংযোগ ও রূহানী সম্পর্ক মানুষের উপর বিস্ময়কর প্রভাব বয়ে আনে।

আমাদের অত্যন্ত মহান শিক্ষক, মরহুম আয়াতুল্লাহ পাহলওয়ানির (র.) এই নির্দেশনাটি আপনার সেবায় পেশ করছি, তিনি বলতেন:

"যদি আপনাকে কোন নির্দেশ দেওয়া হয় যে দৈনিক এক পৃষ্ঠা কুরআন তিলাওয়াত করবেন, এবং যদি উদাহরণস্বরূপ কোন একদিন তা করতে না পারেন, তাহলে পরের দিন দ্বিগুণ পড়বেন। যদি আপনি এটি না করেন, শয়তান আপনার উপর চেপে বসবে। শয়তান যাতে মুখ থুবড়ে পড়ে, মানুষের উপর চেপে বসতে না পারে, মানুষ যাতে নিজের নফসকে পরিচালিত করতে পারে, এর জন্য এই সকল ওয়াসওয়াসার (কুমন্ত্রণার) বিরোধিতা করা অপরিহার্য।"

 আজকের এই রাত থেকেই সফর মাসের শেষ পর্যন্ত, আপনার মৃত ব্যক্তিদেরকে মাতমের সওয়াবে শরিক করুন। এই দুই মাস আপনার সকল মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে নিবেদন করুন।

মরহুম আল্লামা তাবাতাবাঈ (র.) বলেন যে, এই কাজ মৃত ব্যক্তিদেরকে বারযাখে আনন্দিত করে এবং তাদের আনন্দ দুনিয়ার জগতে আপনার জন্য আধ্যাত্মিক সুখ ও আনন্দের কারণ হয়।

অর্থাৎ তারা দুআর জন্য হাত উঠাবেন এবং আপনার জন্য দুআ করবেন। শিক্ষকগণ, গুরুজন, প্রতিবেশী, পিতা, মাতা, পূর্বপুরুষগণ, ইমাম খোমেনি (রহ.), শহীদগণ, সকলকে আহলে বাইত (আ.)-এর জন্য এই দুই মাসের মাতমের সওয়াবে শরিক করুন।

সাইয়্যেদুশ শুহাদা (আ.)-এর শোকার্ত ও মাতমকারী সেই সকল ভক্তদের পবিত্র আত্মার উদ্দেশ্যে, যারা মাটির শয্যায় শায়িত আছেন, একটি দরূদ হাদিয়া করুন

captcha