এরপর আর সি মজুমদার অডিটোরিয়ামে আরবি ভাষা বিষয়ক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির। সেন্টার ফর অ্যারাবিক টিচিং এর পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ড. মো. নুরে আলম।
অধ্যাপক ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক বলেন, ‘আরবি ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস দেড় হাজার বছরের বেশি সময়ের ইতিহাস। আরব-কবি সম্রাট ইমরুল কায়েসের কবিতা আজও প্রাসঙ্গিক। পবিত্র কোরআন ও হাদিস এ ভাষাকে চিরজীবী করেছে। এটাই আরবি ভাষা ও সাহিত্যের অনবদ্য স্বীকৃতি।
আধুনিক যুগে নিত্য-নতুন শব্দগুলো ইংরেজিতে পরিচিত হলেও আরবি ভাষায় এসব শব্দের জন্য নতুন পরিভাষা তৈরি করা হয়। এটাই ভাষার অনন্য বৈশিষ্ট্য।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর যুগ থেকে খলিফাদের শাসনামল দেখলে বোঝা যায়, ইসলানের ইতিহাসে আরবি ভাষার সাহিত্য কতটা সমৃদ্ধ ছিল। আরবি ভাষা চর্চা ও এর সাহিত্য ভাণ্ডার যুগে যুগে বহু জাতিকে আলোকিত করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষা দিবস উদযাপন হচ্ছে এতে আমরা খুবই আনন্দিত।
আরো বেশি খুশি হব যখন শিক্ষার্থীরা কর্মক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। আমি আশা করব, শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে এই ভাষা শিখবে এবং নিজেদের যোগ্য করে তুলবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘অনেকেই বলে আরবি ইসলামের ভাষা। আরবি রাসুলের ভাষা। কিন্তু আরবি ভাষার ইতিহাস আরো অনেক প্রাচীন। তখনও আরবি সাহিত্য ছিল সমৃদ্ধ। মূলত কবিতা এই ভাষাভাষীদের রক্তেই বহমান ছিল। বর্তমানে প্রতিদিন ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ আরবি ভাষায় কথা বলে বা এর চর্চা করে। জ্ঞান-বিজ্ঞান বিকাশের প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। আর আরবি ভাষার মধ্য দিয়ে তা বিস্তার লাভ করে। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে এই ভাষায়। আশাকরি, এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।’
আরবি ভাষা বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাগুলো অন্যতম। আরববিশ্বের ২৫টি দেশ ছাড়াও পৃথিবীর অনেক দেশে তা দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইসলাম ধর্মের পবিত্র কোরআন, হাদিস ও মুসলিম মনীষী ও বিজ্ঞানীদের রচনার ভাষা হিসেবে তা ব্যবহৃত হয়। কয়েক হাজার বছর পার হলেও আরবি ভাষা আপন মহিমায় সমুজ্জ্বল হয়ে আছে আজ পর্যন্ত।
উল্লেখ্য, ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছরের ১৮ ডিসেম্বর বিশ্ব আরবি ভাষা দিবস উদযাপিত হয়। ১৯৭৩ সালের এই দিনে আরবি ভাষা জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা লাভ করে। এ বছর ‘আরবি : কবিতা ও শিল্পের ভাষা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আরবিকে দাপ্তরিক ভাষা ঘোষণার ৫০ বছর উদযাপন করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো। বহু ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য প্রচারের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষাগুলোর মধ্যে আরবি ১৮ ডিসেম্বর, চীনা ১২ নভেম্বর, ইংরেজি ২৩ এপ্রিল, ফরাসি ২০ মার্চ, রাশিয়ান ৬ জুন ও স্প্যানিশ ১২ অক্টোবর পালিত হয়।