ইউরোপের বিভিন্ন দেশের (বিশেষ করে ফ্রান্স, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, ব্রিটেন ও ইতালি) মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী একদল ইমাম দখলকৃত ফিলিস্তিন সফর করেছেন এবং মঙ্গলবার (৯ জুলাই) তারা পশ্চিম জেরুজালেমে অবস্থিত হোলোকাস্ট স্মৃতিস্তম্ভ ‘ইয়াদ ভাশেম’ পরিদর্শন করেছেন। সফরকালে তারা একটি আরবি ভাষায় পরিচালিত গাইডেড ট্যুরে অংশ নেন এবং ‘নেম হল’-এ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
এই সফর এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন ইসরায়েল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় মার্কিন সমর্থনে ভয়াবহ হামলা ও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ তার টুইটার অ্যাকাউন্টে জানান, তিনি ইউরোপের মুসলিম নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং ধর্মীয় সহাবস্থান নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি তাদেরকে "সংলাপ ও আধ্যাত্মিকতার সেতু নির্মাণকারী" হিসেবে প্রশংসা করেন।
এই সফরের নেতৃত্ব দেন ফ্রান্সে বসবাসকারী তিউনিসীয় বংশোদ্ভূত ইমাম হাসান শালগুমি, যিনি ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের বিরোধিতা করে পরিচিত হয়েছেন। সফরকারী দলে বেশিরভাগ সদস্যই তিউনিস ও মরক্কো বংশোদ্ভূত।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম এই সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করে এবং জানায়, সফরটি ইউরোপীয় লিডারশিপ নেটওয়ার্ক (Elenet) কর্তৃক সংগঠিত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ইউরোপ ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা।
সমালোচনা ও ক্ষোভ
এই সফরের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই এই সফরকে "স্বাভাবিকীকরণের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়ানো পাগড়িপরা লোকদের ভ্রমণ" বলে অভিহিত করেছেন। একজন লিখেছেন, এটি "ইমামদের মধ্যে মোসাদের ভয়াবহ প্রভাব" এর প্রমাণ।
আরও বলা হয়, এই ইমামরা ইউরোপে মুসলিমদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন এবং ইসলামবিরোধী একটি বিকৃত শান্তির ধারণা উপস্থাপন করেছেন।
মরক্কান পর্যবেক্ষণ সংস্থার প্রতিক্রিয়া
মরক্কান অবজারভেটরি ফর অ্যাগেইনস্ট নরমালাইজেশন নামের সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আজিজ হান্নাভি এই সফরকে "স্বাভাবিকীকরণের চেয়েও বড় অপরাধ" বলে অভিহিত করেন এবং সফররতদের মধ্যে হাসান শালগুমিকে “ঘোষিত ইসরায়েলপন্থী এজেন্ট” হিসেবে চিহ্নিত করেন।
তাদের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই দলে প্রকৃতপক্ষে কেবল একজন ইমাম ছিলেন—ইউসুফ মাসিবেহ, যিনি মরক্কোর নাগরিক এবং নেদারল্যান্ডসের আলকমার শহরের বিলাল মসজিদের ইমাম। বিলাল মসজিদ এক বিবৃতিতে জানায়, এই কাজ ইমামের ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং এর সাথে মসজিদের কোনো সম্পর্ক নেই। এর পরপরই তাকে ইমামের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানানো হয়।
সমালোচকদের মন্তব্য
মরক্কো বংশোদ্ভূত গবেষক তিজানি বোলআউয়ালি বলেন, এই সফরকারীরা কেউ প্রকৃত ইমাম নন, তাদের বেশিরভাগই অজানা এবং ইউরোপীয় মুসলিম সমাজে তাদের কোনো বিশেষ অবস্থান নেই। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন: “যদি তারা ইমাম হয়, তাহলে তারা কোন মসজিদে ইমামতি করেন?”
শাইখ হাসান বিন আলি আল-কাতানি বলেন, “এটি কিছু লজ্জাজনক শাইখদের দ্বারা সংঘটিত একটি অপরাধ। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মুসলমানদের উচিত তাদের পিছনে নামাজ না পড়া।”