একদা ইমাম আলী(আ.) খুতবা দিচ্ছিলেন, তখন আশয়াস বিন কাইস বললেন, হে আমিরুল মু’মিনিন! আপনি কেন ইরানীদেরকে বেশী প্রাধান্য দেন। তখন ইমাম বললেন: না এমনটি নয়, আমার কাছে সবই সমান। তবে যারা বেশী পরহেজগার এবং ইসলামের জন্য বেশী নিবেদিতপ্রাণ আমার কাছে তারা বেশী মর্যাদাবান। ইরানিরা তোমাদের থেকে বেশী কর্মঠ তারা দ্বীন ইসলামের জন্য বেশী আত্মত্যাগ স্বীকার করেছে।
আল্লাহর শপথ করে বলছি! মহানবী হযরত মুহাম্মাদ(সা.) বলেছেন: আরবরা যেভাবে তলোয়ারের মাধ্যমে ইরানীদেরকে মুসলমান করেছে এমন একদিন আসবে যখন ইরানীরা তলোয়ারের মাধ্যমে আরবদেরকে মুসলমান বানাবে।
শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সকলের সাক্ষ্য মতে হযরত আলী (আ.) ছিলেন একজন পরিশুদ্ধ মানুষ এবং ইসলামী জ্ঞান ও মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও দিকনির্দেশনা লাভকারী এক যথার্থ দৃষ্টান্ত।
মহানবী (সা.)-এর সাহাবায়ে কেরাম এবং সাধারণভাবে সকল মুসলমানের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানে তিনি শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তিনিই প্রথম তাঁর জ্ঞান-ভাণ্ডারের মাধ্যমে যুক্তিবিদ্যা ও খোদায়ী বিজ্ঞান (মা’রেফুল ইলাহিয়ার) দ্বার উন্মোচন করেন। কুরআনের প্রকাশভঙ্গী সংরক্ষণের জন্য তিনি আরবি ব্যাকরণ উদ্ভাবন করেন।
রাসূল (সা.) বিভিন্ন সময়ে বলেছেন: আলী আমার থেকে এবং আমি তাঁর থেকে এবং আলীই আমার পর সমস্ত মুমিনদের ওলি তথা অভিভাবক ও নেতা। (তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ-১১০)
রাসূল (সা.) আরো বলে গেছেন, আলী সব সময়ই হকের পথে থাকবে। আলী (আ.)-কে মহব্বত করা ঈমান, আর আলী(আ.)’র সঙ্গে শত্রুতা করা মুনাফেকি।(মুসলিম, ১ম খণ্ড, পৃ-৪৮)।আমি জ্ঞানের শহর, আলী তার দরজা।(সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড, পৃ;২০১)। এমনকি রাসূল (সা.) এ দোয়াও করেছেন যে, হে আল্লাহ সত্যকে আলীর পক্ষে ঘুরিয়ে দিও। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, কেবল মুনাফিকই আলীর সঙ্গে শত্রুতা করবে।
যে আলীকে দোষারোপ করল, সে আমাকে দোষারোপ করল, আর যে আমাকে দোষারোপ করল সে খোদাকে দোষারোপ করল। আল্লাহ তাকে মুখ নিচু করে দোজখে নিক্ষেপ করবেন।(সহি বুখারী-দ্বিতীয় খণ্ড, সহি মুসলিম- দ্বিতীয় খণ্ড, সহি তিরমিজি, ৫ম খণ্ড)।
আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে খোদা যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ, যে আলীর সাথে শত্রুতা রাখে তুমিও তার সাথে শত্রুতা রাখ।” (সহি মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ-৩৬২, মুসনাদে ইমাম হাম্বল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-২৮১)
সাহাবিদের অনেকেই বলতেন, আমরা আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও শত্রুতা দেখে কে মুনাফিক ও কে মুমিন তা নির্ধারণ করতাম।
রাসূল (সা.) আরো বলেছেন: এই আলী আমার ভাই, আমার ওয়াসি এবং আমার পর আমার প্রতিনিধি হবে। তাই তাঁর আদেশ শোন, তাঁর আদেশ মত কাজ কর।(তাফসিরে তাবারি, ১৯ খণ্ড, পৃ-১২১, ‘লাইফ অফ মুহাম্মাদ’-ড. মো. হোসাইন হায়কাল, প্রথম সংস্করণ১৩৫৪ হি,প্রথম খণ্ড, পৃ-১০৪)
হযরত আলী সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, আলী প্রেম মানুষের পাপ এমনভাবে ধ্বংস করে যেমনি আগুন জ্বালানী কাঠ ধ্বংস করে দেয়। একবার হযরত আলী (আ.)-কে দেখে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছিলেন, তিনটি এমন বৈশিষ্ট্য তোমার রয়েছে যেটা আমারও নেই, এই তিনটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তুমি এমন একজনকে শ্বশুর হিসেবে পেয়েছে, যা আমি পাইনি, এমন একজনকে তুমি স্ত্রী হিসেবে পেয়েছে, যে কিনা আমার কন্যা, আর তৃতীয়টি হচ্ছে তুমি হাসান- হুসাইনের মত সন্তানের পিতা যেটা আমার নেই।
একবার বিশ্বনবী (সা.) কয়েকজন সাহাবির সঙ্গে ঘরে বসেছিলেন। সেখানে একটি বিশেষ পাখীর মাংস খাবার হিসেবে আনা হয়েছিল। রাসূল (সা.) বললেন, হে আল্লাহ তোমার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। এমন সময় দরজায় টোকা দিলেন আলী (আ.)। রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে নিয়ে সেই মাংস খান।
হযরত আলী (আ.) ছিলেন জ্ঞান, বীরত্ব, সাহস, দূরদর্শিতা, মহানুভবতা, দয়া, পরোপকার, ন্যায়নিষ্ঠা ইত্যাদি গুণের আকরসহ মানবীয় মূল্যবোধ ও যোগ্যতার সব দিক থেকে একজন ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিপূর্ণ আদর্শ মানব। বিশ্বনবী (সা.) তাঁকে প্রায় ৫/৬ বছর বয়স থেকে নিজের হাতে ও নিজের ঘরে রেখে মনের মত করে গড়ে তোলেন এবং জ্ঞানগত নানা দিকসহ সব দিকে যোগ্য উত্তরসূরি হিসেব প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।