লেবাননের বিশ্লেষক ইয়াহইয়া আল-সাদেক আল-মায়াদিন নেটওয়ার্কে প্রকাশিত এক লেখায় উল্লেখ করেছেন: এখন আর প্রশ্নটা এই নয় যে সিরিয়ার আহমদ আল-শারআ সরকারের সঙ্গে ইসরায়েলের সরাসরি বা পরোক্ষ কোনো আলোচনা হচ্ছে কি না। বরং বর্তমান প্রশ্ন হলো, এই আলোচনা কোন স্তরে পরিচালিত হচ্ছে। এই আলোচনা কি ইসরায়েলের এবং বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু পশ্চিমা দেশের প্রচারিত স্বাভাবিকীকরণ লক্ষ্যেই হচ্ছে? নাকি, সিরিয়ার নতুন সরকারের দাবি অনুযায়ী, ৮ ডিসেম্বর পূর্ববর্তী পরিস্থিতিতে ফেরার নিশ্চয়তার জন্য একটি নিরাপত্তা চুক্তির আলোচনাই হচ্ছে?
গত কয়েক মাসে, সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে সরাসরি এবং পরোক্ষ উভয় ধরনের আলোচনা ও সাক্ষাতের বহু তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এসব বিষয় সম্প্রতি আহমদ আল-শারআ নিজেই নিশ্চিত করেছেন। কুনাইত্রা প্রদেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পরোক্ষ আলোচনা চলছে’ এবং এর উদ্দেশ্য হলো দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করা।
এরপর, যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়াবিষয়ক প্রতিনিধি টমাস বারাক এবং ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তারা একাধিক বিবৃতিতে বলেছেন যে ‘দামাস্কাস ও তেলআবিবের মধ্যে আলোচনা সত্যিই শুরু হয়েছে।’ এমনকি ইসরায়েলি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান ত্সাহি হানেগবি কনস্ট সদস্যদের বলেছেন যে তিনি সরাসরি আহমদ আল-শারআ সরকারের সঙ্গে নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক আলোচনার তদারকি করছেন।
গত কয়েক সপ্তাহে আরব ও পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোতে এই বিষয়ে প্রচুর প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ এসেছে, যাতে অনেক সময় সরাসরি বা পরোক্ষ আলোচনার অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। কিছু গণমাধ্যম উভয় পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি এবং সম্ভাব্য রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরের মূল্যের বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করেছে।
প্রত্যক্ষ বাস্তবতা – সিরিয়ার দিক থেকে
সাম্প্রতিক সময়ের তথ্য, বক্তব্য ও অবস্থান বিবেচনা করে নিম্নলিখিত বাস্তবতাগুলোকে তুলে ধরা যায়:
সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে আরব ও পশ্চিমা মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তায় আলোচনা চলছে; তা সরাসরি হোক বা পরোক্ষ। উভয় পক্ষ ভবিষ্যতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সম্পর্কে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ও চাহিদা উপস্থাপন করেছে।
এই মুহূর্তে আলোচনা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল পর্যায়ে রয়েছে; তাই এর ফলাফল নির্ধারণ করতে এখনই কিছু বলা খুব তাড়াতাড়ি হবে। উভয় পক্ষই রাজনৈতিক জয় চায়, যাতে অভ্যন্তরীণ বৈধতা ও আঞ্চলিক অবস্থান মজবুত হয়, এবং কোনো "ছাড়" না দিতে হয়।
আগামী দুই মাসের মধ্যে আলোচনা ও এর নিরাপত্তা-রাজনৈতিক মাত্রা স্পষ্ট হবে। যদি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠকের ফাঁকে আহমদ আল-শারআ ও নেতানিয়াহুর কথিত বৈঠক ঘটে, তাহলে এটা স্বাভাবিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার ইঙ্গিত। না ঘটলে, এর মানে বর্তমান সিরীয় সরকার একটি সীমারেখা নির্ধারণ করেছে এবং তারা কেবল ১৯৭৪ সালের যুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধশেষ চুক্তিতে ফিরে যাওয়ার চেষ্টায় রয়েছে — যার অর্থ ৮ ডিসেম্বরের পর ইসরায়েলের দখল করা এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার।
এখন পর্যন্ত, সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার স্বাভাবিকীকরণ বা "আব্রাহাম চুক্তি" অনুসরণে পশ্চিমা চাপে কী অবস্থানে রয়েছে, সে বিষয়ে কোনো বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। তাই এই বিষয়ে গুজবই আলোচনার মূল উপাদান রয়ে গেছে।
তবে, সিরিয়ার পরিস্থিতির নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ একাধিক বাস্তবতাকে তুলে ধরে, যা আল-শারআ সরকারের ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম বাস্তবতা: সিরীয় জনমত
সিরীয়দের একাংশ সাময়িকভাবে স্বাভাবিকীকরণে রাজি থাকলেও তা শর্তসাপেক্ষ: ইসরায়েল ১৯৬৭ সাল থেকে দখলে রাখা গোলান মালভূমি ফিরিয়ে দিতে হবে।
আরেক অংশ স্বাভাবিকীকরণকে পুরো আরব-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে। তারা একতরফা চুক্তির বিরোধী এবং জাতিসংঘের প্রাসঙ্গিক প্রস্তাবনাসমূহ (বিশেষত ২৪২ ও ৩৩৮) অনুসারে একটি পূর্ণাঙ্গ সমাধান চায়। তারা মনে করে, একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া কোনো শান্তি হতে পারে না।
দ্বিতীয় বাস্তবতা: শারআ সরকারের অবস্থান ও মিত্রদের ভূমিকা
আহমদ আল-শারআ ও তার সহযোগী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরে সাবেক সরকারকে গোলান ইসরায়েলের কাছে "বিক্রি" করার অভিযোগ দিয়ে এসেছে। তারা জেরুজালেম ও আল-আকসা মসজিদ মুক্ত করার অঙ্গীকারও করেছে। তাই, তারা কোনো এমন চুক্তি করতে পারবে না যা সাবেক প্রেসিডেন্ট হাফেজ আল-আসাদের প্রস্তাবিত শর্ত থেকেও দুর্বল।
অনেক গোষ্ঠীর কাছে এখন এই বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও, ভবিষ্যতে এটাই তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। তারা কীভাবে শান্তি চুক্তি করবে যখন ফিলিস্তিনে গণহত্যা চলছে এবং আল-আকসা আক্রান্ত হচ্ছে?
তৃতীয় বাস্তবতা: যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
আহমদ আল-শারআ সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিঃস্বার্থ নয়। অতীত অভিজ্ঞতা বলে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ইসরায়েলের পক্ষে যাবে। প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র কি দামেস্ককে চুক্তিতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করবে?
গোলান মালভূমি নিয়ে কী হবে, যা ট্রাম্প ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন? শারআ সরকার কি এই চাপে টিকে থাকতে পারবে?
ইসরায়েলের অবস্থান
ইসরায়েল বর্তমানে ১৯৪৮ সালে গঠনের পর সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছে — যুক্তরাষ্ট্রের নিরঙ্কুশ সমর্থন এবং আরব দেশগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্কের কারণে।
তাই, ইসরায়েল দুইটি মূল অবস্থান নিয়েছে:
গোলান মালভূমিতে ইসরায়েলের অগ্রগতি ও সিরিয়ার লক্ষ্য
অনেকেই মনে করেন, আহমদ আল-শারআ একটি ১৯৯০-এর দশকে তুরস্ক-সিরিয়া নিরাপত্তা চুক্তির মতো একটি চুক্তি করতে চাচ্ছেন, যার লক্ষ্য হচ্ছে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করে সিরিয়ার অভ্যন্তরে চাপ কমানো, অভিবাসীদের প্রত্যাবর্তনে উৎসাহ, ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। গোলান এখন ইসরায়েল ছাড়বে না, আর সিরিয়া ছাড়তে পারবে না। তাই, এই ইস্যু ভবিষ্যতে তোলা হোক। ১৯৭৪ সালের যুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধশেষ চুক্তির মতো একটি নিরাপত্তা চুক্তি শারআ সরকারকে সুযোগ দিতে পারে গোটা দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে। তবে, পার্থক্য হলো: ১৯৭৪ সালের চুক্তি যুদ্ধের পর হয়েছিল, আর এখনকার প্রস্তাব আসছে ইসরায়েলি হামলায় সম্পূর্ণ দুর্বল অবস্থায়।
পারস্পরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, বিশেষ করে দক্ষিণ সিরিয়ায় "বিদেশি হস্তক্ষেপ" মোকাবিলায়। এক মার্কিন ব্যবসায়ী জনাথন বাসকে শারআ বলেন: “আমি স্পষ্ট বলতে চাই: একে অপরের ওপর অবিরাম বোমাবর্ষণ বন্ধ হওয়া উচিত। একটি দেশ কখনও বিকশিত হতে পারে না যদি তার আকাশে আতঙ্ক ভর করে থাকে। বাস্তবতা হলো, আমাদের শত্রুরা অভিন্ন, এবং আমরা আঞ্চলিক নিরাপত্তায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি।” 4295156#