বার্তা সংস্থা ইকনা: অবশ্য কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী তাঁর জন্ম হয়েছিল ৪২ হিজরিতে। তাঁর মায়ের নাম ছিল লায়লা।
হযরত আলী আকবর ইবনে ইমাম হুসাইন (আ)’র চেহারা, চাল-চলন ও কথা-বার্তা ছিল প্রায় অবিকল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)’র মত। হযরত আলী আকবর ছিলেন নানা সৎ স্বভাব ও মহান গুণের অধিকারী। তাই এই মহাপুরুষের জন্ম-বার্ষিকী ইরানে মহৎ যুবকদের দিবস হিসেবে স্বীকৃত।
হযরত আলী আকবর ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী ও বাগ্মী। তিনি হাদিসও বর্ণনা করতেন। মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ যে তিনি এমন এক মহাপুরুষ উপহার দিয়েছেন মানবজাতিকে। অনন্য এই মহান যুবকের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
ইমাম হুসাইন (আ) বলতেন, নানাজির কথা মনে হলে তাঁর জন্য যখন আমাদের প্রাণ কাঁদত তখন আমরা আলী আকবরের দিকে তাকাতাম। আর এ জন্যই আশুরার দিনে তাঁকে যুদ্ধে পাঠাতে ইমাম হুসাইন (আ) খুবই কষ্ট অনুভব করেছিলেন। আলী আকবারকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাঠানোর সময় ইমাম বলেছিলেন: হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন যে আমি আমার এমন এক সন্তানকে আপনার ধর্মের পথে পেশ করলাম যে দেখতে আপনার নবীর মত।
কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী তাঁকে যুদ্ধ না করার শর্তে নিরাপত্তার প্রস্তাব দিয়েছিল ইয়াজিদ বাহিনী। কিন্তু তিনি তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। ইয়াজিদ বাহিনী ভেবেছিল তাঁর মা বনি উমাইয়া গোত্রের হওয়ায় তিনি সেই সম্পর্কের কথা ভেবে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকবেন! আলী আকবর তার পিতাকে বলেছিলেন: সত্যের পথে আছি বলে এর জন্য মৃত্যুকে ভয় করি না!
পবিত্র আশুরার দিনে হযরত আলী আকবরই ছিলেন নবী পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি শাহাদত বরণ করেন। শাহাদত বরণের আগে তিনি অত্যন্ত সাহসী বীরের মত লড়াই করে বেশ কয়েকজন বিখ্যাত যোদ্ধাসহ বহু ইয়াজিদি সেনাকে জাহান্নামে পাঠান। শত্রু-সেনাদের লাইনগুলো ও প্রতিরক্ষা-ব্যুহ ছিন্ন-ছিন্ন করে তিনি এগিয়ে যেতে সক্ষম হন। তাঁর বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে বিচলিত হয়ে ওঠে শত্রু পক্ষ। ফলে ইয়াজিদ বাহিনীর কমান্ডার ওমর সাদ আলী আকবরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার ও তাঁর ওপর নির্দয় হামলার নির্দেশ দেয়। ওমর সাদ বলেছিল: আলী আকবর নিহত হলে হুসাইন আর বাঁচতে চাইবে না এক মুহূর্তের জন্যও!!
কথিত আছে তিন দিন ধরে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত আলী আকবর বহু ইয়াজিদি সেনাকে জাহান্নামে পাঠিয়ে একবার পিতা ইমাম হুসাইনের (আ) কাছে ফিরে আসেন এবং বাবাকে বলেন, একটু পানি যদি পেতাম! যদিও তিনি নিজেও জানতেন পানি-অবরোধের শিকার নবী-পরিবারের শিবিরে এক ফোটা পানিও নেই। ইমাম পুত্রের মুখে রাখেন নিজের জিভ। কিন্তু পিতার শুকনো জিভ থেকে পুত্র তাঁর বাহ্যিক তৃষ্ণা মেটানোর কিছুই পেলেন না। হয়তো আধ্যাত্মিক কোনো তৃষ্ণা তিনি মেটাতে পেরেছিলেন। এটাও কথিত আছে যে, ইমাম নিজের আংটি রেখেছিলেন পুত্রের মুখে যাতে তার প্রভাবে পুত্রের মুখ কিছুটা রসালো হয়ে ওঠে। ইমাম জানতেন আর কিছুক্ষণ পরই তাঁর পুত্রের তৃষ্ণা মেটাবেন বেহেশতে অপেক্ষমান নানা বিশ্বনবী (সা)।
মুররাহ ইবনে মুনকাদাহ নামের এক ইয়াজিদি সেনা পেছন থেকে কাপুরুষের মত আলী আকবরের ওপর বর্শা নিক্ষেপ করে। বর্শাটি পেছন দিক থেকে এই মহান যুবকের বুকে বিদ্ধ হয়, ফলে তিনি পড়ে যান ঘোড়া থেকে। নরাধম মুররাহ ঝাপিয়ে পড়ে নবী পরিবারের এই সদস্যের ওপর এবং তাঁকে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা দেয়ার জন্য বর্শার কাঠের অংশটি ভেঙ্গে ফেলে।
শাহাদতের প্রাক্কালে আলী আকবর (আ) বলছিলেন, হে পিতা! আমার শেষ সালাম আপনাকে! আমি দেখতে পাচ্ছি আমার বড় নানা (রাসুলে পাক সা.) আমার দিকে আসছেন এক বাটি পানি নিয়ে!
সেদিনের 'ইব্রাহিম' যেন ছিলেন পিতা ইমাম হুসাইন(অা), আর 'ইসমাইল' ছিলেন আলী আকবর। আর এই কুরবানি ছিল ইব্রাহিম নবীর (আ) ওই কুরবানির চেয়েও অনেক বড় কুরবানি।
আলী আকবরের শাহাদতের ঘটনায় ইমাম অশেষ বেদনায় মুষড়ে পড়েছিলেন। তাই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাঁর লাশ শিবিরে ফিরিয়ে আনতে তিনি নিজে যাননি, বরং বনি হাশিমের যুবকদের পাঠান। ফুফু জাইনাবও (সা.আ) ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসেন ভাতিজার লাশের কাছে। পিতার পবিত্র মাজারের পাশেই রয়েছে তাঁর কবর।
বলা হয় তিনি যুদ্ধের ময়দানে জোহরের নামাজের সময় হলে আজান দেন। তাঁর কণ্ঠস্বরও ছিল হুবহু প্রপিতামহ বিশ্বনবীর (সা) কণ্ঠের মত। এতে ইয়াজিদি বাহিনীর অনেক বয়স্ক সেনা চমকে ওঠে। অনেকের কাছেই মনে হচ্ছিল যেন যুবক মুহাম্মাদই (সা) কারবালার ময়দানে আবির্ভূত হয়েছেন! কিন্তু পাষাণ-হৃদয় ইয়াজিদি সেনারা তাঁকে লক্ষ্য করে বর্শা ও তিরের বৃষ্টি বর্ষণ করতে দ্বিধা বোধ করেনি। চির-অভিশপ্ত ও জাহান্নামি হোক তাঁর হত্যাকারী।
হযরত আলী আকবরের জন্মদিনকে ইসলামী ইরানে 'সৎগুণের অধিকারী যুবকদের দিবস' হিসেবে প্রতি বছর পালন করা হয়। সূত্র: