
বার্তা সংস্থা ইকনা: তিনি বলেছেন, ভারতের অগ্রগতি রুখে দেয়ারই এক ষড়যন্ত্রের আওতায় এ ধরনের হামলা চালানো হচ্ছে।
সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গরু জবাই ও গরুর গোশত কেনা-বেচার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছে এবং সর্বোচ্চ আদালতের এ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আর এ রায়ের পর থেকে উগ্র হিন্দুদের প্রতি ক্ষমতাসীন বিজেপির কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি বেড়ে গেছে।
কিন্তু অনেকেই বলছেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসার কারণেই ভারতে মুসলমানদের ওপরে উগ্র হিন্দুদের হামলা জোরদার হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ভারতের ওয়েলফেয়ার দলের মহাসচিব কাসেম রাসুল ইলিয়াস বলেছেন, ‘২০১৪ সালে ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর থেকে উগ্র হিন্দুদের তৎপরতা এবং মুসলমান ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর তাদের হামলা জোরদার হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির ওপর উগ্র হিন্দুদের প্রভাব রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু মুসলমানসহ ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ওপর হামলা ভারতের চেহারার মারাত্মক ক্ষতি করছে।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি আধুনিক ভারত গড়ার কথা তুলে ধরে বলেছেন, এ ধরনের সমাজে জাতিগত, ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত পার্থক্য ও বৈষম্য থাকার কোনো অর্থ হয় না।
এটা স্পষ্ট ভারতে উগ্র হিন্দুদের ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ব্যাপারে অসহিষ্ণুতা যে দেশটির প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে বেমানান তা বিজেপির অনেক শীর্ষ নেতাও আজ বুঝতে পারছেন। তারা জানেন সহিষ্ণুতা ও সংলাপের সংস্কৃতি জোরদার না করে ভারত বিশ্বে যেমন সম্মান ও আস্থা অর্জন করতে পারবে না তেমনি বিদেশী পুঁজি-বিনিয়োগও আকৃষ্ট করতে পারবে না।
যদিও ক্ষমতাসীন বিজেপি বা ভারতীয় জনতা পার্টি উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল আর এস এস-এরই মধ্যপন্থী শাখা কিন্তু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিষয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আর এস এস ভারতকে কেবল হিন্দুদের জন্য বসবাসযোগ্য রাখতে চায় এবং সহিসংতার মাধ্যমে ভারত থেকে মুসলমান ও খ্রিস্টানসহ অ-হিন্দু সম্প্রদায়গুলোকে তাড়িয়ে দিতে চায় । অন্যদিকে বিজেপি ভারতের হিন্দু ও অহিন্দুদের মধ্যে সমঝোতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানসহ দেশটির সার্বিক উন্নয়ন চায়। এমনকি দলটি আগামী নির্বাচনেও জয়ী হওয়ার জন্য সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের ভোটও পেতে চায়।এ ছাড়াও দলটি গরুর গোশতের লাভজনক ব্যবসা ছাড়তে রাজি নয়।
ভারতের বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক জাফারুল ইসলাম খান বলেছেন, ভারতের উগ্র হিন্দুরা যখন গো-রক্ষা বিষয়ে নানা গোষ্ঠী গড়ে তুলছে ও গরুর গোশত খাওয়ার অভিযোগ তুলে মুসলমানদের ওপর হামলা করছে তখন দেশটির সরকার গরুর গোশত রপ্তানি অব্যাহত রেখেছে এবং তা নিষিদ্ধও করেনি। আর দেশটির গরুর গোশত রপ্তানির ৮০ শতাংশই ঘটছে হিন্দুদের মাধ্যমে। এভাবে উগ্র ও মধ্যপন্থী হিন্দুদের পার্থক্য স্পষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় ভারতে গরু জবাই ও গরুর গোশতের ব্যবসার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় উগ্র হিন্দুদের স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপগুলো মোকাবেলায় মোদি সরকারের হাতকে শক্তিশালী করেছে।
ভারতের স্বাধীনতা ও উন্নয়নে মুসলমানদের ব্যাপক অবদানের কথা এবং দেশটির ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মধ্যপন্থী হিন্দুরা মুসলমানদের ওপর হামলা বন্ধ করার জন্য নানা বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে আসলেও তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। তাই মুসলমানদের ওপর উগ্র হিন্দুদের হামলা ঠেকাতে ভারতের উচ্চ আদালতের এ ধরনের রায় বেশি কার্যকর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। পার্সটুডে