বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: আবুধাবির কোরআন প্রদর্শনীতে সপ্তম শতাব্দীর কুরআনের ডিজিটাল সংস্করণটি বহু দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
পবিত্র কুরআনের এই সংস্করণ, যা এক হাজার ৩৫০ বছরের পুরাতন এবং ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে আবিষ্কৃত হয়, আবুধাবির ডিজিটাল কোরআন প্রদর্শনীতে এটি প্রদর্শিত হয়।
কুরআনের এই চার পৃষ্ঠার সংস্করণ, যা ১৯৩০ সাল থেকে ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ইসলাম ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআন শরীফের ১ হাজার ৩৭০ বছর আগের প্রাচীনতম সংস্করণটি খুঁজে পেয়েছেন বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটি। এ প্রাচীন গ্রন্থটি সম্পূর্ণ হাতে লেখা, এ যাবৎকাল পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া কুরআনের মধ্যে প্রাচীন সংস্করণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনতম এটি।
প্রাচীন হাতে লেখা পুঁথি বিষয়ক গবেষক বৃটিশ গ্রন্থাগার বিশেষজ্ঞ ড. মুহাম্মাদ ইসা ওয়ালি জানান, এ রকম ‘চমৎকার আবিষ্কার’ মুসলিমদের ‘দারুণ আনন্দিত’ করবে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির রেডিওকার্বন অ্যাক্সিলারেটর ইউনিটের পরীক্ষায় দেখা গেছে, পুঁথিটি ভেড়া কিংবা ছাগলের চামড়ার ওপর লেখা হয়েছিল। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে যতগুলো কুরআন রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন হস্তাক্ষর রয়েছে সম্প্রতি আবিষ্কৃত কুরআনটিতে।
বেশ কয়েক দফার পরীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে বিভিন্ন সময়, যা নির্দেশ করছে যে চামড়ার ওপর লেখা পুঁথিটি ৫৬৮ থেকে ৬৪৫ সালের মধ্যে লেখা হয়েছে এমন সম্ভাবনা ৯৫ শতাংশেরও বেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির খৃস্ট ও ইসলাম ধর্ম বিষয়ের অধ্যাপক ডেভিড থমাস বলেন, ‘ঠিক কখন থেকে ইসলাম ধর্মের প্রচলন শুরু হয়েছিল, সে প্রশ্নের উত্তরের খুব কাছাকাছি আমাদের নিয়ে যেতে পারে এই বইটি। মুসলিম ঐতিহ্য অনুযায়ী, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) কুরআনের আয়াত সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে ‘ওহি’ বা ‘বাণী’ হিসেবে পেয়েছিলেন ৬১০ সাল থেকে শুরু করে তাঁর মৃত্যুর বছর ৬৩২ সাল পর্যন্ত, যার সামগ্রিক রূপটি হলো কুরআন শরীফ, যা ইসলামের প্রধান ধর্মগ্রন্থ।’
থমাস জানান, বার্মিংহামে খুঁজে পাওয়া ভাঁজ করা কাগজগুলোর যে সময়কাল বেরিয়ে এসেছে- তাতে এটা হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে যেই ব্যক্তি লেখাগুলো নিজ হাতে লিখেছিলেন, তিনিও মহানবীর (স.) জীবদ্দশাতেই বেঁচে ছিলেন।
বৃটিশ এই অধ্যাপক আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি এটি লিখেছিলেন, তিনি হয়তো মহানবীকে (সা.) খুব ভালোভাবে চিনেও থাকতে পারেন। সম্ভবত তিনি মহানবীকে (সা.) দেখেছেনও, হয়তো তিনি মহানবীর (সা.) প্রচারকৃত ধর্মীয় বক্তব্য সরাসরি শুনেছেনও। হয়তো তিনি মহানবীকে (সা.) ব্যক্তিগতভাবে জানতেন।’
থমাস জানান, কুরআনটির কিছু পৃষ্ঠার লেখাগুলো ছিল চামড়ার ওপর, পাথরের ওপর, তাল গাছের পাতার ওপর এবং উটের ‘শোল্ডার ব্লেড’ হিসেবে পরিচিত হাড়ের ওপর। এবং বই রূপে খুঁজে পাওয়া চূড়ান্ত সংস্করণটি লিখে শেষ করা হয়েছিল ৬৫০ সালের দিকে।
তিনি আরো বলেন, ‘চামড়ার ওপর লেখা অংশগুলো মহানবীর (সা.) মৃত্যুর দুই দশকেরও কম সময়ের আগে লেখা হয়েছে, একথা বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলা যায়। আজ কুরআনের যে বইগুলো মানুষ পড়েন, সেগুলোর সাথে প্রাচীন কুরআনটির খুব ঘনিষ্ঠ একটি ধাঁচ রয়েছে এসব অংশের, অর্থাৎ এর মানে হচ্ছে যে দীর্ঘ সময়ে কুরআনের মূল বাণীগুলোতে একেবারেই কোনো পরিবর্তন হয়নি এবং যখন কুরআন নাজিল হয়েছিল, সে সময়ের খুব কাছাকাছি সময়ের মধ্যেই এটি লেখা হয়ে থাকতে পারে।
iqna