IQNA

কোরআনের আলোকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পথচলা / ১৮

আশুরার দিনে ইমাম হুসাইন (আ.) কোরআনের যে সকল আয়াতের উদ্বৃতি দিয়েছেন

7:33 - July 14, 2025
সংবাদ: 3477701
ইকনা- পবিত্র কোরআন ও নবী (সা.)-এর সুন্নাহর আলোকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আশুরার বিপ্লব শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয় বরং একটি আলোর দিশারী। এ বিপ্লব ছিল কোরআনের আয়াতগুলোর জীবন্ত প্রতিফলন—যেখানে ন্যায়বিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

পবিত্র কোরআন ও নবী (সা.)-এর সুন্নাহর আলোকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আশুরার বিপ্লব শুধু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা নয় বরং একটি আলোর দিশারী। এ বিপ্লব ছিল কোরআনের আয়াতগুলোর জীবন্ত প্রতিফলনযেখানে ন্যায়বিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলেমিন সাইয়্যেদ মোহাম্মদ ইসমাঈলী, কোরআনিক জ্ঞান ও শিক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, বলেন: ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর আন্দোলনের সমস্ত পর্যায়ে কোরআনের উপর নির্ভর করেই পথ নির্ধারণ করেন। 'তাথীর আয়াত' (আহযাব ৩৩) থেকে শুরু করে 'প্রতিরোধ ও শাহাদাত' সম্পর্কিত আয়াত পর্যন্ত, তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ ছিল আল্লাহর বাণীর জীবন্ত ব্যাখ্যা। আজকের দুনিয়াতেও এই বার্তাগুলো শুধু মুসলিম জাতির জন্য নয়, বরং সমস্ত মুক্তিকামী মানুষের জন্য প্রেরণাদায়ক।

ইকনা: আশুরার বিপ্লব ও ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পদক্ষেপগুলোকে কিভাবে কোরআনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যায়?

উত্তর:
নবী করীম (সা.) ইন্তেকালের পূর্বে বলেছিলেন:


«إِنِّي تَارِكٌ فِيكُمُ الثَّقَلَيْنِ...»


অর্থ: ‘‘আমি তোমাদের মধ্যে দুটি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি: কোরআন এবং আমার আহলুল বায়ত। যদি তোমরা এ দু'টিকে আঁকড়ে ধরো, তাহলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না। এ দুটি কখনো একে অপর থেকে আলাদা হবে না, যতক্ষণ না কাওসারের হাউজে আমার সঙ্গে মিলিত হবে।’’

এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, কোরআন এবং আহলুল বায়তএই দুইয়ের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। তাই ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবন ও বিপ্লব কোরআনের আলোকে বোঝা ছাড়া অসম্ভব।

আশুরার দিনে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কিছু কোরআনি উদ্ধৃতি

  1. আহযাব ৩৩:
    ইমাম যখন ইয়াজিদের প্রতিনিধিকে বলেন যে তিনি বাইআত গ্রহণ করবেন না, তখন তিনি আহলে বাইতের পবিত্রতা উল্লেখ করেন:
    «إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ... »
    অর্থ: "আল্লাহ চান, তোমাদের (আহলে বাইতের) থেকে সব অপবিত্রতা দূর করে তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করে তুলুন।"
  2. কাসাস ২১:
    মদিনা থেকে বের হওয়ার সময়, ইমাম (আ.) বলেন:
    «فَخَرَجَ مِنْهَا خَائِفًا يَتَرَقَّبُ...»
    অর্থ: ‘‘তিনি (মূসা আ.) শহর থেকে ভয়ে ও সতর্ক অবস্থায় বের হলেন এবং বললেন: হে আল্লাহ! আমাকে জালিম সম্প্রদায় থেকে রক্ষা করুন।’’
  3. নিসা ১৪২-১৪৩:
    মক্কায় থাকাকালীন ইয়াজিদের ভণ্ডামি ও প্রতারণার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এই আয়াতগুলো পড়েন, যেখানে মুনাফিকদের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে।
  4. বাকারা ১৫৬:
    «إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ»
    যখন তিনি মুসলিম ইবনে আকীলের শাহাদাতের সংবাদ পান, তখন এই আয়াত পাঠ করে তাঁর শাহাদাতকে স্বীকৃতি দেন।
  5. আহযাব ২৩:
    «فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ...»
    ক্বাইস ইবনে মুশহারের শাহাদাতের সময় তিনি এই আয়াত তেলাওয়াত করেন।
  6. ইউনুস ৭১:
    «فَأَجْمِعُوا أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءَكُمْ...»
    ইমাম হুসাইন (আ.) এই আয়াত দিয়ে শত্রুদেরকে বলেন, যে তোমরা যেটা করতে চাও করো, আমি পিছপা হবো না।

 

"হাইহাত মিন্না-য্-জিলা" (অপমান আমাদের থেকে দূরে) - এই স্লোগানের তাৎপর্য

ইমাম হুসাইন (আ.) মৃত্যুর বদলে অপমান গ্রহণ করেননি। আজকের প্রজন্ম যদি এই বার্তাটি গ্রহণ করে, তবে তারা জানবে আত্মমর্যাদা কীভাবে রক্ষা করতে হয়। আজকের যুগে ইরান ও তার বীর সন্তানরা, যেমন শহীদ সোলাইমানি, এই বার্তাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন।

 

কিভাবে তরুণ প্রজন্মের মাঝে কোরআনিক আশুরার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যায়?

এই প্রজন্মকে ইমামের লক্ষ্য ও আদর্শ বোঝাতে হলেশিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির সমন্বয়ে কাজ করতে হবে। মসজিদ, হোসাইনিয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং পরিবারের মাধ্যমে মানসিক সংযোগ গড়ে তুলতে হবে।

তরুণদেরকে বুঝাতে হবে যে আশুরা শুধু কান্না নয়, বরং তা একটি শিক্ষা, যা স্বাধীনতা, ন্যায়, ও আত্মোৎসর্গের প্রতীক।

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর বিপ্লব কোরআনের জীবন্ত বাস্তবায়ন। তাঁর পদক্ষেপগুলো প্রতিটি মুক্তপ্রাণের জন্য পথপ্রদর্শক। কোরআনের আলোকে তাঁর পথচলা আজও অন্ধকার সমাজের জন্য আলোর মশাল হয়ে আছে।

 

ভিডিও ও প্রতিবেদন: হানিয়ে মোহাম্মদনেজাদ
4293386#

 

captcha