IQNA

ইসরাইলের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে ইমাম খামেনেয়ীর সাফল্যের রহস্য

13:02 - July 13, 2025
সংবাদ: 3477700
ইকনা - ভৌগোলিক সীমানা ও সময়ের দিক থেকে ইরানের উপর ইসরায়েলের চাপিয়ে দেয়া সাম্প্রতিক বারো দিনের যুদ্ধ হয়তো খুব ব্যাপক বিস্তৃত বিষয় নয়, কিন্তু তা সত্ত্বেও সংকটকালীন সময়ে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার বিষয়ে এ যুদ্ধ ছিল খুব বড় ধরনের পরীক্ষাগার। এক্ষেত্রে ইরানে সর্বোচ্চ নেতা নানা কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে শত্রুর মোকাবেলায় তাঁর দেশকে বিজয়ী করতে সক্ষম হয়েছেন। 

গত ১৩ জুন ইরানে হামলা শুরু করেছিল ইহুদিবাদী ইসরায়েল। ইরানের কয়েকটি পরমাণু স্থাপনা ও সামরিক কেন্দ্র ছাড়াও বেশ কিছু বেসামরিক স্থাপনা ও ঘরবাড়ি ইসরাইলি হামলার শিকার হয়েছিল। তেহরানের এভিন কারাগার ও সারাদেশে বেশ কয়েকটি চিকিৎসা কেন্দ্রও ইসরায়েলের নির্বিচার আগ্রাসনের শিকার হয়েছিল। ইসলামী ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় সেনা কামান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী, ও বেসামরিক জনগণ শাহাদাত বরণ করেছিলেন এইসব হামলায়।   এসব হামলার পর ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এক বাণীতে বলেছিলেন, 'ইরানের জাতীয় নিরাপত্তার ওপর যে কোন হামলার কঠোর ও অনুশোচনা-জাগানো জবাব দেয়া হবে'! এ প্রবন্ধে আমরা যুদ্ধ চলাকালীন মহসংকট  মোকাবেলায় ও দেশ পরিচালনায় ইমাম খামেনেয়ির প্রধান ভূমিকা এবং বিশ্ববাসীর ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে  কিছুটা আলোকপাত  করব।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর দ্রুত পুনর্বিন্যাস 

গত ১৩ জুন খুব ভোরবেলায় ইরানে হামলা শুরু করে ইহুদিবাদীর ইসরায়েল। এই হামলার প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন সেনা কমান্ডার শহীদ হন।  এ অবস্থায় চেইন অফ কমান্ড ভেঙ্গে পড়া ছিল স্বাভাবিক। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াও স্থবির হয়ে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু ইরানের বাস্তবতার ময়দান ছিল এমন অবস্থার ঠিক বিপরীত। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খুব দ্রুত নতুন সেনা কমান্ডারদের নাম ঘোষণা করেন এবং তাদের কি করতে হবে তা জানিয়ে দেন। ফলে খুব শীঘ্রই ইরানের সশস্ত্র বাহিনী নিজেকে গুছিয়ে নেয় ও সরবরাহ লাইনগুলো কার্যকর করে তোলে। কয়েক ঘণ্টারও কম সময়ে ইরানের ভয়াবহ পাল্টা হামলাগুলো শুরু হয়। প্রথম কয়েক দফার ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জোয়ার ইসরাইলের তেল  আবিবের অস্ত্র  গুদামগুলোসহ প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে নানা সামরিক কেন্দ্র ও বিমান বিধ্বংসী স্থাপনা গুলোর উপর আঘাত হানে। এমনটি সম্ভব হয়েছে সম্ভবত দুটি প্রধান কারণে: মিশ্র পদ্ধতির অতীতের নানা সামরিক মহড়ায় বিকল্প কমান্ড সেন্টার গড়ে তোলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিল ইরানের সশস্ত্র বাহিনী। দ্বিতীয়তঃ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিজেই কমান্ড দেয়ার কাজ শুরু করেন যাতে সময় নষ্ট না হয়। আধুনিক যুগের দ্রুতগতির যুদ্ধক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলায় কেন্দ্রীয়করণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ বেশ গুরুত্বপূর্ণ।  ইরানের সর্বোচ্চ নেতা নেতৃত্বে সাম্প্রতিক যুদ্ধে এমন সফল ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল।  

জনমত নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ

সামরিক সংকটগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় সাধারণত শীর্ষস্থানীয় নেতারা পরোক্ষভাবে ও সামরিক মুখপাত্রের বক্তব্যের ভিতর দিয়ে বক্তব্য রাখেন। কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সাম্প্রতিক সামরিক সংকট চলাকালে তিনবার জনগণের উদ্দেশ্যে সরাসরি বক্তব্য রেখেছেন। এ ধরনের পদক্ষেপ কেবল বক্তব্যের বিষয়বস্তুর গুরুত্বের মধ্যেই সীমিত নয় সময় ও বাস্তবায়নের ধরনের মধ্যেও এর গুরুত্ব কম নয়।

তিনি প্রথমবার ঠিক এমন সময় বক্তব্য রাখছিলেন যখন ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো তেল আবিবে আঘাত হানছিল। এই যে একই সময়ে দুটি ঘটনা - এ বিষয়টি বৈধ প্রতিরক্ষার যুক্তি ও বর্ণনার সম্পৃক্ততাকে জনগণ ও বিদেশী পর্যবেক্ষক মহলসহ সবার কাছে স্পষ্ট করেছিল। অর্থাৎ একই সময়ে অভিযান চালানো ও অভিযানের বিষয়ে তথ্য সম্প্রচার অবিচ্ছিন্ন বিষয় নয়।

দ্বিতীয় বার্তাটি তিনি দিয়েছিলেন যুদ্ধের ষষ্ঠ দিনে। এটা ছিল এমন একটা সময় যখন ইসরাইল ইরানের প্রথম দফার পাল্টা হামলার মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ইরানের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন হামলা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিল। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা শান্ত অথচ কড়া ভাষায় প্রতিরোধ, প্রশান্তি ও পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন ওই ভাষণে। আর এভাবে তিনি উৎকণ্ঠিত প্রতিক্রিয়ার পর্যায় থেকে সমাজকে সক্রিয় বা কার্যকর নিয়ন্ত্রণের আদর্শ পর্যায়ে উপনীত হওয়া দেখাতে সক্ষম হন।

আর তৃতীয় ভাষণে তিনি আত্মসমর্পণের আবদারের প্রতি কড়া ভাষায় না উচ্চারণ করেছেন। এটা ছিল সেই সব বিদেশি মহলের প্রতি স্পষ্ট বার্তা যারা যুদ্ধ থামানোর বিষয়টিকে ইরানের পরাজয় বলে দেখাতে চেয়েছিল। সংকটকালীন যোগাযোগ বা জনসংযোগের দৃষ্টিকোণ থেকে এই তিনটি বার্তা ছিল জাতীয় বিবৃতি বা বর্ণনার তিন মহাসড়ক বা মহাসংযোগ সেতু। এভাবে তিনি সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হতে দেননি এবং শত্রুদের বক্তব্যকে জোরালো হতে দেননি 

যাতে জনমত দুর্বল বা হতাশ হয়ে যায়। ফলে অতিরঞ্জন ও গুজবের জায়গায় আসিন হয় স্পষ্টতা  এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বার্তাগুলো বন্ধু নয় এমন জনগণের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনয়ির সংকট মোকাবেলার ব্যবস্থাপনা ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। বিশ্বের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমগুলো যেমন আল জাজিরা ও গার্ডিয়ান বলেছে যে ইরান খুব কম ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে ও ইসরায়েলের ওপর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চাপিয়ে দিয়ে ইসরায়েলকে পিছু হটাতে সক্ষম হয়েছে। একইভাবে সামাজিক মাধ্যমগুলোতেও ইমাম খামেনেয়ি আলোচনা ও প্রশংসার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। ফলে বিশ্ব জনমতের কাছে ইরান ও এর নেতৃবৃন্দ উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী হয়েছে।  নানা গুজব ও অপপ্রচারের দাঁতভাঙ্গা জবাবযুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর ইহুদিবাদী ও পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমগুলো বারবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার হুমকির সংবাদ প্রচার করেছে। কিন্তু মহররমের শোক সমাবেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার উপস্থিতি প্রতীকী শক্তি ব্যবহারের  বাস্তব দৃষ্টান্ত হয়ে দেখা দিয়েছে, যদিও তিনি কোন কথাই বলেননি । তাঁর এই উপস্থিতি প্রমাণ করেছে যে নানা ধরনের হুমকি সত্ত্বেও ইরানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা বজায় রয়েছে, বরং তা আগের চেয়েও শক্তিশালী হয়েছে।  এ থেকে বোঝা গেল দেশটির সর্বোচ্চ নেতা রয়েছেন জনগণের পাশে এবং দেশটির নেতৃবৃন্দ ময়দানে কার্যকর উপস্থিতি বজায় রেখেছেন য যা সত্যিই খুবই অনুপ্রেরণাদায়ক। #

পার্সটুডে

captcha