IQNA

সিয়োনিস্টদের সহিংসতার মূল: কোরআনের আলোকে বিশ্লেষণ | পর্ব ১

সূরা মায়েদা, আয়াত ৮২ – ইয়াহুদিদের সহিংসতার শিকড়ে কোরআনের ইঙ্গিত

8:50 - July 28, 2025
সংবাদ: 3477782
ইকনা- হুজ্জাতুল  ইসলাম দানিয়াল বাসির, যিনি একজন বিশিষ্ট আলেম ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, তিনি ইয়াহুদিদের এবং আধুনিক সিয়োনিস্টদের সহিংসতা ও বর্বরতার মূল শিকড় ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, এই সহিংসতা ও নিরপরাধ নারী-শিশুদের ওপর চালানো নৃশংসতার শিকড় কোরআনের সূরা মায়েদার ৮২ নম্বর আয়াতে নিহিত রয়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, ইসলামি ইতিহাসের শুরু থেকেই ইয়াহুদিরা ইসলাম ও নবী করিম (সা.)-এর প্রতি সবচেয়ে অনমনীয় ও কঠোর মনোভাব পোষণ করেছে। তারা কখনোই নবী ও তাঁর অনুসারীদের প্রতি শত্রুতা লুকায়নি।

তিনি আরও বলেন, খাইবার যুদ্ধে পরাজয়ের পরও তারা শক্তিশালী মিত্রদের সহায়তায় প্রকৃত অর্থে পরাজয়ের স্বাদ পায়নি। বর্তমান যুগে তারা ফিলিস্তিনকে মুসলিম বিশ্বের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দখল করে, ইতিহাসে নজিরবিহীন অপরাধ সংঘটিত করছে।

কোরআনের দৃষ্টিতে সহিংসতার মূল

দানিয়াল বাসির বলেন, কোরআন বারবার ইয়াহুদিদের ও তাদের বর্তমান রূপ সিয়োনিস্টদের শত্রুতাপূর্ণ ও সহিংস আচরণের প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছে। বিশেষত সূরা মায়েদার ৮২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

"لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا"


"
তুমি নিশ্চয়ই বিশ্বাসীদের প্রতি সবচেয়ে প্রবল শত্রুতা পোষণকারী হিসেবে ইয়াহুদিদের ও মুশরিকদেরই পাবে।"

এই আয়াত স্পষ্টভাবে সিয়োনিস্টদের সহিংসতার শিকড় তাদের বর্ণবাদী মনোভাব ও আত্মঅহংকারে নিহিত রয়েছে বলে নির্দেশ করে। তারা নিজেদের নির্বাচিত জাতিবলে মনে করে এবং অন্যদের নিজেদের চেয়ে নিচু বলে গণ্য করে।

বর্ণবাদ ও নির্বাচিত জাতিভাবনার প্রভাব

ইহুদি ধর্মে নির্বাচিত জাতিধারণা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা হয়েছে, যার চূড়ান্ত রূপ সিয়োনিস্ট ব্যাখ্যাযেখানে ইসরায়েল জাতিকে পৃথিবীর অন্য সব জাতির ঊর্ধ্বে ও আলাদা এক শ্রেণির মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এর ফলে সামাজিক আইন, নৈতিক আচরণ, এমনকি অপরাধমূলক বিচারেও ইহুদি ও অ-ইহুদিদের মধ্যে বৈষম্য দেখা যায়।

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনের প্রধান এবং হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইসরায়েল শাহাক তাঁর বই "ইহুদি ইতিহাস ও ইহুদি ধর্ম"-এ লিখেছেন যে, এই সহিংসতার শিকড় তাদের ধর্মগ্রন্থ তালমুদের বর্ণবাদী শিক্ষায় নিহিত।

তালমুদের ব্যাখ্যায়, ইয়াহুদিরা মানুষএবং অ-ইয়াহুদিরা পশু’, যাদেরকে মানব আকৃতিতে সৃষ্টি করা হয়েছে যেন তারা ইয়াহুদিদের সেবা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:

  • একজন ইয়াহুদি যদি অন্য ইয়াহুদিকে হত্যা করে, তবে সেটি বড় গুনাহ; কিন্তু যদি একজন অ-ইয়াহুদিকে হত্যা করে, তা হলে তা দুনিয়াতে শাস্তিযোগ্য নয়, শুধু আখিরাতে গুনাহ হবে।
  • একজন অ-ইয়াহুদি গর্তে পড়লে, ইয়াহুদি তাকে সাহায্য না করেই মই সরিয়ে নিতে পারে।
  • একজন ইয়াহুদি ডুবে গেলে তাকে উদ্ধার করা ধর্মীয় দায়িত্ব, কিন্তু একজন অ-ইয়াহুদিকে উদ্ধার করা নিষিদ্ধ।

অর্থনৈতিক বৈষম্য ও ধর্মীয় বৈধতা

  • ইয়াহুদির কাছ থেকে সুদ নেওয়া নিষিদ্ধ, কিন্তু অ-ইয়াহুদির কাছ থেকে তা বাধ্যতামূলক।
  • একজন ইয়াহুদি যদি হারানো সম্পত্তি খুঁজে পায় এবং ধারণা করে মালিক ইয়াহুদি, তাহলে তাকে ফেরত দিতে হবে; কিন্তু যদি মালিক অ-ইয়াহুদি হয়, তাহলে সে তা নিজের করে নিতে পারে।
  • ইয়াহুদি প্রতারণা, চুরি বা সুদের মতো অপরাধ নিজেদের মধ্যে নিষিদ্ধ হলেও অ-ইয়াহুদিদের প্রতি এসব বৈধ বলে মনে করা হয়।

ভিকটিম কার্ড খেলা ও ইতিহাস বিকৃতি

দানিয়াল বাসির বলেন, আরেকটি বড় সমস্যা হলোসিয়োনিস্টরা নিজেদের মজলুমহিসেবে উপস্থাপন করে। তারা বহু জাতির সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, কিন্তু বদলে জাতিদেরই ইয়াহুদি বিদ্বেষীবলে অপবাদ দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা গণমাধ্যমে অর্থ ঢেলে, বিশ্বমঞ্চে নিজেদের নির্যাতিত ও নিপীড়িত বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।

তিনি বলেন, এই অপপ্রচার ও ইতিহাস বিকৃতির মাধ্যমে তারা সিয়োনিজম নামক একটি দানবীয় রাজনৈতিক মতাদর্শ গড়ে তোলে। এরপর বিশ্বের বিভিন্ন জাতির ওপর নির্মম শত্রুতাপূর্ণ হামলা চালিয়ে ধ্বংস ও রক্তপাত ঘটিয়ে নিজেদের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার করে।

একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমেরিকার কংগ্রেসে বক্তৃতায় নেতানিয়াহু ইরান-বিরোধী সহানুভূতি পাওয়ার জন্য পুরিমউৎসবের প্রসঙ্গ তোলে, যেখানে কথিত আছে যে পারস্যের সময়ে ইয়াহুদিদের হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল, যা এক নারী এস্তারনস্যাৎ করেন। এই মজলুমিরগল্পগুলো সিয়োনিস্ট রাজনীতির কৌশলমাত্র। 4294006#

 

captcha