IQNA

অবশেষে নিরীহ কাশ্মীরিদের বেআইনি হত্যার কথা স্বীকার করল ভারতীয় সেনাবাহিনী

18:05 - September 19, 2020
সংবাদ: 2611498
তেহরান (ইকনা): ভারতশাসিত কাশ্মীরে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় অধিবাসীদের ওপর অন্যায় নির্যাতন ও বেআইনি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বা বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে নিরীহ কাশ্মীরিদের হত্যার কথা স্বীকারের ঘটনা বেশ বিরল। তবে, গত জুলাইয়ে করোনাভাইরাসের কারণে চলা লকডাউনের মধ্যে তিন কাশ্মীরি শ্রমিককে হত্যার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার হয়েছে বলে স্বীকার করেছে ভারতীয় বাহিনী।

শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, গত ১৮ জুলাই সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, তারা শোপিয়ানের আমশিপোরা গ্রামে অজ্ঞা'ত তিন ‘বি'দ্রোহীকে’ হ'ত্যা করেছে। এখন ত'দ'ন্তে দেখা গেছে, তারা রাজৌরি জেলার বাসিন্দা ছিলেন, যাদের সাজানো বন্দু'কযু'দ্ধে হ'ত্যা করা হয়েছে বলে অভি'যোগ করেছিল তাদের পরিবার।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া বি'বৃতিতে বলেন, ‘সেনা কর্তৃপক্ষের নি'র্দেশ অনুসারে আমশিপোরা অভি'যানের বিষয়ে তদ'ন্ত শেষ হয়েছে। তদ'ন্তে প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু প্রমাণ মিলেছে যাতে মনে হয়েছে, অভি'যানের সময় সশ'স্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষ'মতা আইনের (এএফএসপিএ) অধীনে প্র'য়োগ করা ক্ষ'মতা মাত্রা ছা'ড়িয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘তদ'ন্তে সংগৃহীত প্রাথমিক প্র'মাণ ই'ঙ্গিত দিচ্ছে, আমশিপোরা অভি'যানে নিহ'ত তিন অপ্রমাণিত সন্ত্রা'সী হলেন ইমতিয়াজ আহমেদ, আবরার আহমেদ ও মোহাম্মদ ইবরার। তারা রাজৌরি থেকে ফিরছিলেন। তাদের ডিএনএ প্রতিবেদ'ন আসার অপেক্ষায় রয়েছে। স'ন্ত্রা'স বা এ সম্পর্কিত ক'র্মকাণ্ডে তাদের যোগসূত্রের বিষয়ে পুলিশ তদ'ন্ত করছে।’ এর আগে পুলিশের বি'বৃতিতে দাবি করা হয়েছিল, ওই অভি'যানে সেনা কর্মকর্তাদের ওপর গু'লি চা'লানো হয়।

এ ঘ'টনার কিছুদিন পরে নিহ'ত তিন ব্যক্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাই'রাল হয়ে পড়ে। সেখান থেকেই তাদের শনা'ক্ত করেন স্বজনেরা এবং বেআইনি হ'ত্যাকা'ণ্ডের অভি'যোগ করেন।শুক্রবার ভারতীয় সেনাবাহিনী বেআইনি হ'ত্যাকা'ণ্ডের দা'য় স্বী'কারের পর নিহ'ত ইবরারের চাচাতো ভাই নসিব খাতানা জানান, নিহ'তরা সবাই একে অপরের চাচাতো ভাই ছিলেন। তারা কাজের উদ্দেশ্যে রাজৌরি থেকে শোপিয়ান গিয়েছিলেন।

নসিব বলেন, ‘তারা ১৭ জুলাই শোপিয়ান পৌঁ'ছায় এবং ওই রাতেই শেষবার তাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমাদের। এটা লকডাউনের সময় ছিল, তাই আমরা ভেবেছিলাম তাদের হয়তো কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আমরা অপেক্ষা করছিলাম, তবে কোনও খবর ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ছবি দেখার পর স্বজনদের চিহ্নি'ত করে অভি'যোগ দা'য়ের করি। তাদের সন্ত্রা'সী বলে দা'বি করেছিল সেনাবাহিনী। নিরপরা'ধ মানুষদের সঙ্গে তারা আর কত অন্যায় করতে পারে!’ ভু'ক্তভো'গী আরেক পরিবারের এক সদস্য জানান, স্বজনদের ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ঘুরেও তা এখনও পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ‘গত ৩ আগস্ট নমুনা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, কিন্তু এখনও ফলাফল আসেনি। আজ প্রত্যেক পরিবারের একজনকে ডেকে তারা স্বী'কার করেছে, তিনজনকে একটি মিথ্যা ব'ন্দুকযু'দ্ধে হ'ত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই তাদের হ'ত্যাকারীদের প্রকাশ্যে এনে সাজা দেয়া হোক। আমরা পরিবারের সদস্যদের ম'রদে'হ চাই।’

জুলাইয়ের ওই মিথ্যা ব'ন্দুকযু'দ্ধে নিহ'তদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন ইবরার। তিনি পড়াশোনার জন্য দিনমজুরের কাজ করে অর্থ জমাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছে তার পরিবার। মানবাধিকার কর্মীদের দা'বি, কাশ্মীরে ভারতীয় সেনারা আর্থিক সুবিধা ও মেডেলের জন্য বেসামরিক লোকদের হ'ত্যা করে অনেক সময় ‘বি'দ্রোহী’ বলে চালিয়ে দেন।

আগেও এ ধরনের ঘ'টনা ঘ'টেছে। ২০১০ সালের মে মাসে মাচিল এলাকায় নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ভারতীয় সেনারা সাজানো ব'ন্দুকযু'দ্ধে তিন বেসামরিক নাগরিককে হ'ত্যা করেছেন, কাশ্মীর পুলিশের তদ'ন্তে এ ত'থ্য বেরিয়ে আসার পর বি'ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে উপত্যকায়। সেনারা পুরস্কারের লোভে ওই তিন নিরীহ মানুষকে হ'ত্যা করে ‘সশ'স্ত্র বি'দ্রোহী’র ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
সূত্র: আল জাজিরা

captcha