পার্সটুডের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী ও ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীও সর্বকালের সেরা এই মহামানব সম্পর্কে গবেষণাধর্মী ও প্রশংসাসূচক অনেক বক্তব্য রেখেছেন। এইসব বক্তব্য ও প্রশংসার অংশ-বিশেষ তুলে ধরা হল এই বিশেষ প্রবন্ধে:
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (র) বলেছেন, শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ এতো বেশি ইবাদত তথা নামাজ আদায় ও খোদাপ্রেমের সাধনায় নিয়োজিত হন যে মহান আল্লাহ সুরা ত্বাহায় তা উল্লেখ করে বলছেন, ‘আপনাকে ক্লেশ দেবার জন্য আমি আপনার প্রতি কুরআন নাজিল করিনি।’
‘মহান আল্লাহর কাছে মহানবীর ইস্তিগফার বা তওবা ও বিনম্রতা সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, রাসুলে খোদা (সা) কোনো সমাবেশ বা সভা থেকে বের হতেন না ২৫ বার তওবা করা তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা না করা পর্যন্ত। হাদিসে আরও এসেছে, মহান আল্লাহর ফেরেশতা জিব্রাইল (আ) ভূপৃষ্ঠের ধনভাণ্ডারের চাবি আনেন বিশ্বনবীর (সা) জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে, কিন্তু তিনি বিনম্রতা দেখালেন ও তা নিলেন না, বরং দারিদ্রকেই নিজের জন্য গর্ব বলে মনে করতেন।’
ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মহানবীর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে আরও বলেছেন, রাসুলে খোদা (সা)’র কোনো কোনো স্ত্রী জানিয়েছেন, আমরা রাসুলে খোদার সঙ্গে কথা বলতাম, তিনিও আমাদের সঙ্গে কথা বলতেন, কিন্তু নামাজের সময় হলে তিনি এমন হয়ে যেতেন যেন আমাদেরকে তিনি কখনোই চিনতেন না এবং আমরাও কখনও তাকে যেন দেখিনি, তিনি অন্য সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এভাবেই আল্লাহর গভীর ধ্যানে ডুবে যেতেন।
ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বিশ্বনবী (সা) সম্পর্কে বলেছেন, যে ইসলামের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা) ও মহান আল্লাহর আওলিয়ায়ে কেরাম জীবন দিয়েছেন এবং যে ইসলাম সমাজের নিম্ন শ্রেণীর মানুষকে শক্তি, সম্মান ও পৌরুষত্ব দান করে; যে ইসলাম বলদর্পি, জালিম ও তাগুতি শক্তিকে ক্ষমতার সিংহাসন থেকে নীচে নামিয়ে আনে আমরা সেই ইসলামই চাই।
যারা খাঁটি মুহাম্মাদি ইসলাম ও মুহাম্মাদি আদর্শের সঙ্গে যত বেশি ঘনিষ্ঠ তারা দাম্ভিক শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে তত বেশি আঘাত, হামলা, অপবাদ, হৈচৈ, হত্যা প্রচেষ্টারও কাছাকাছি হবেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন, বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র নাম বিশ্বের সব মুসলমানের জন্য অন্যতম প্রধান আকর্ষণ, কারণ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবেগ ও ঈমান। তাই এই নাম ও এই নামের স্মরণ মুসলমানদেরকে নানা ক্ষেত্রে এমন শক্তি যোগায় যে ইসলামের অন্যান্য দিকও যা কেবল ঈমানের সঙ্গে জড়িত ও আবেগের প্রভাবমুক্ত সেসব কখনও এমন শক্তি যোগায় না।
এ কথা সত্য যে মহানবীর নবুওত প্রাপ্তির দিবসটি গোটা মানব জাতির জন্য উৎসবের দিন, কারণ, এই আধুনিক যুগেও ইসলাম মানব জাতির সব সংকট ও সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান দেয়।
বিশ্বনবীর বিনম্রতা প্রসঙ্গে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার ইমাম খোমেনী (র) বলেছেন, আল্লাহর বান্দাহদের প্রতি রাসুলে খোদার বিনম্রতা ছিল অন্য সবার চেয়ে বেশি। সঙ্গী বা সাহাবিরা তাঁর সম্মানে দাঁড়াবেন-এটা তিনি পছন্দ করতেন না। তিনি মসজিদে গেলে সবার পেছনে বসতেন। তিনি মাটিতে বসে খাবার খেতেন ও মাটিতে বসতেন। তিনি ঘরের লোকদের সঙ্গে ঘরের কাজে শরিক হতেন। নিজের পবিত্র হাতে ছাগলের দুধ দোহন করতেন, নিজের জামা ও জুতো নিজেই সেলাই করতেন, খাদেমের সঙ্গে গম ভাঙ্গানোর ডালা ঘুরাতেন ও রুটির খামির তৈরি করতেন।
মহানবী (সা)’র প্রশংসনীয় গুণের কথা স্মরণ করতে গিয়ে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেছেন, মহান নবীর জীবনযাপনের অবস্থা ছিল খুবই সহজ-সরল। তিনি সর্বোচ্চ উচ্চ পদে থেকেও নিজের বৈষয়িক জীবনের স্বার্থে পদকে কখনও ব্যবহার করেননি ও নিজের জন্য কিছুই রেখে যান নি। তিনি ছিলেন জনসেবক। আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হয়েও তিনি ছিলেন মানুষের সেবক ও তাদের সেবা করতেন। বিশ্বনবী (সা)’র পবিত্র আহলে বাইত ও আলী (আ)সহ পবিত্র ইমামরাও সাধারণ মানুষের মতই, বরং সাধারণ জনগণের চেয়েও সাদামাটা জীবন যাপন করতেন।
ইসলামী বিপ্লবের রূপকার আরও বলেছেন, বিশ্বনবী (সা) এতোসব কষ্ট স্বীকার ও পরিশ্রমের পরও জালিমের বিরুদ্ধে জিহাদের পথ কখনও ত্যাগ করেননি এবং তিনি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই নীতিতে অবিচল ছিলেন।
বিশ্বনবীর প্রশংসা করতে গিয়ে ইরানের বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, জীবনের সবক্ষেত্রেই মহানবীর অনুসরণ করতে মহান আল্লাহ মুসলমানদের নির্দেশ দিয়েছেন। মহানবী কেবল তাঁর বক্তব্যে নয়, আচার-আচরণে, জনগণের সঙ্গে মেলামেশায় ও লেনদেনে, পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের সঙ্গে আচরণে, শত্রু ও বিজাতীয়দের সঙ্গে আচরণে এবং দুর্বল ও দরিদ্র আর শক্তিশালী বা ধনীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রসহ সবক্ষেত্রেই সর্বোত্তম আদর্শ।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরও বলেছেন, মহানবীর জীবনের প্রথম ক্ষেত্রটি হল দাওয়াত ও জিহাদের ক্ষেত্র। মানুষকে সত্য ও মহান আল্লাহর দিকে এবং জিহাদের দিকে আহ্বান ছিল তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিজের যুগের সেই অন্ধকার দিনগুলোতেও তিনি কখনও উদ্বেগ বা হতাশার শিকার হননি। যখন মক্কায় নিঃসঙ্গ ছিলেন ও তার চারদিকে যখন গড়ে উঠেছিল অতি ক্ষুদ্র একটি মুসলিম সমাজ সে সময় তাঁকে মোকাবেলা করতে হয়েছে দাম্ভিক আরব ও বর্বর আর বেয়াড়া এবং শক্তিশালী কুরাইশ নেতাদেরকে। একই সময়ে তাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে অসভ্য বেদুইন ও শিক্ষা-দীক্ষাহীন সাধারণ জনগণকে। সেই সময়ও তিনি কখনও ভয় পাননি, বরং বলেছেন ন্যায্য কথা। সেইসব কথা তিনি বার বার বলতেন ও ব্যাখ্যা দিয়ে স্পষ্ট করতেন। এ জন্য তিনি সহ্য করেছেন অনেক অপমান এবং প্রাণপণ ধৈর্য ধরে সেইসব দুর্বিসহ কষ্ট আর যাতনা সহ্য করেছেন। ফলে বহু মানুষ হন মুসলমান। সেইসব কঠিন দিনে কিংবা যখন তিনি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করে সেই রাষ্ট্রের প্রধান হন ও ক্ষমতাসীন হন সেইসব দিনেও তিনি ছিলেন সত্য-প্রচারে অবিচল এবং নিঃশঙ্ক। # (চলবে)