
ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে যে, অধিকৃত অঞ্চল-জুড়ে অনেক জায়গায় বিক্ষোভকারীরা নানা সড়কে অবরোধ আরোপ করে সেসব বন্ধ করে দিয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করতে বন্দি বিনিময় চুক্তির দাবিতে ও গাজায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু'র নেতৃত্বাধীন দখলদার মন্ত্রীসভার যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অধিকৃত জেরুজালেম-আল-কুদস ও তেল আবিবের বেশ কিছু মহাসড়ক অবরোধ করেছে বিক্ষোভকারী ইহুদিবাদী বসতি স্থাপনকারীরা।
তেলআবিবসহ ইসরাইলের নানা শহরে শত শত ইহুদিবাদী নেতানিয়াহু-বিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়েছে। ইহুদিবাদী বন্দিদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারগুলো এইসব প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল। তারা গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করার ও ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্ত করতে বন্দি বিনিময় চুক্তির দাবি জানায়।
কিন্তু নেতানিয়াহুর মন্ত্রীসভার কয়েকজন উগ্র ইহুদিবাদী মন্ত্রী এইসব বিক্ষোভের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ইহুদিবাদী সরকারের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গিভার এইসব প্রতিবাদ সমাবেশের নিন্দা জানিয়ে বলেছে: "আজকের ধর্মঘট ইসরায়েলকে দুর্বল ও হামাসকে শক্তিশালী করবে এবং বন্দিদের প্রত্যাবর্তন বিলম্বিত করবে।"
জায়োনিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ইয়ের গোলানও সাধারণ ধর্মঘটের সময় ঘোষণা করেছিলেন যে সুযোগ ফুরিয়ে আসছে এবং "অবিলম্বে বন্দীদের ফেরত পাঠানোর" জন্য সকল প্রচেষ্টা চালানো উচিত।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান এবং বিরোধী দলের অন্যতম নেতা গাদি আইজেনকোট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন যে নেতৃত্ব দেওয়ার এবং দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা তার নেই, কারণ তিনি ইসরায়েলের স্বার্থের চেয়ে নিজের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে কঠিন সিদ্ধান্তগুলিকে একপাশে রেখে দেন; এবং এই পদক্ষেপগুলো ইসরায়েলকে অতল গহ্বরে নিয়ে যাচ্ছে।
অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে বিক্ষোভের তীব্রতা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। অনেক বিক্ষোভকারী মনে করেন যে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা গাজা যুদ্ধ পরিচালনায় অক্ষম এবং ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তির জন্য এই শাসকচক্রের কোনো পরিকল্পনাও নেই। ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক, সামরিক এবং নিরাপত্তা স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র মতপার্থক্যও একটি নতুন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলরা ও প্রাক্তন কমান্ডাররা ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর যুদ্ধ নীতির সমালোচনা করছেন এবং কেউ কেউ গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। অব্যাহত বিক্ষোভ ও জনসাধারণের অসন্তোষ রাস্তায় সংঘর্ষ এবং ব্যাপক দাঙ্গার সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তুলেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধিকৃত নানা অঞ্চলে ইহুদিবাদীদের বিক্ষোভ বৃদ্ধির ঘটনাগুলোয় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ অভিযানের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। "যুদ্ধ বন্ধ করুন" এবং "বন্দীদের মুক্ত করুন"-ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভকারীরা কার্যকরভাবে স্বীকার করেছেন যে গাজা যুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসকচক্র তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
নজিরবিহীন শক্তি প্রদর্শন ও সংহতির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ সামরিক ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই ইহুদিবাদী দখলদারদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এই চাপ মন্ত্রিসভা ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ সৃষ্টি করেছে এবং নেতানিয়াহুর নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে করেছে তীব্রতর।
নেতানিয়াহুর নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ থেকে বোঝা যায় যে অধিকৃত অঞ্চলের বাসিন্দারা আর তেল আবিবের যুদ্ধবাজ এবং নিরাপত্তা নীতির উপর আস্থা রাখে না। ইসরায়েলি দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি, নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের পদত্যাগ এবং মন্ত্রিসভার ভেতরে মতবিরোধ - এই সবই বৈধতার সংকটের লক্ষণ। পার্সটুডে#