
বার্তা সংস্থা ইকনা: বুরকিনি পরার কারণে ফ্রান্সে কমপক্ষে চার মুসলিম নারীকে জরিমানা করা হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে বুরকিনি নিষিদ্ধ নিয়ে বেশ রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস। এ নিয়ে আদালতে চ্যালেঞ্জ হয়েছিল। কিন্তু আদালত ওই নিষেধাজ্ঞার পক্ষেই রায় দিয়েছেন। প্রথমে ফ্রান্সের কান শহরে বুরকিনি নিষিদ্ধ করেন সেখানকার মেয়র ডেভিড লিসনার্ড। এরপরপরই নিষিদ্ধ হয় ভিলেনুয়েভ লুবেত ও কারসিকার সিসকোতে। তারই ধারাবাহিকতায় বুরকিনি নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে আরও তিনটি শহরে। এ শহরগুলো হলো লুকেট, চ্যানেল টাউন এবং লি তোকুয়েত। বুরকিনি হলো এমন একটি পোশাক যা পরলে একজন নারীর পুরো শরীর ঢেকে থাকে। তার শুধু মুখ ও হাত দেখা যায়। এ পোশাক পরা নিয়ে কারসিকার সিসকোতে বড় ধরণের এক সংঘর্ষ হয়ে গেছে। তাতে আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে কর্তৃপক্ষ। শহরগুলোতে, বিশেষ করে পর্যটন স্পট, সমুদ্র সৈকতে এ পোশাক নিষিদ্ধ করায় স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। মুসলিমরা তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়ে চলছে গরম বিতর্ক। সেই বিতর্কের মাঝেই বুরকিনি নিষিদ্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালস। তিনি বলেছেন, এ পোশাক ফ্রান্স ও প্রজাতন্ত্রের মূল্যবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেসব শহরের মেয়র এ পোশাককে নিষিদ্ধ করছেন তিনি তাদেরকে সমর্থন করেন। অনলাইন ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান-এ বুরকিনি পরার জন্য কয়েকজন নারীকে জরিমানা করা হয়েছে। সেখানকার সমুদ্র সৈকতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বুরকিনি পরে গোসল করতে গিয়েছিলেন তিন জন নারী। তাদের বয়স ২৯ থেকে ৫৭ বছর। এ সময় কয়েকটি শিশু ছিল তাদের সঙ্গে। এ অবস্থা দেখতে পেয়ে পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করে পুলিশ এবং তাদেরকে জরিমানা করা হয়। ওদিকে অনলাইন লি পারিসিয়েন লিখেছে, এ সময় চারজন নারীকে ৩৮ ইউরো (৩৩ পাউন্ড) করে জরিমানা করা হয়েছে। তাদেরকে এ পোশাক পরে আর না আসতে সতর্ক করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে ওই এলাকা ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। ওই অনলাইনটি লিখেছে, ওই নারীরা ছিলেন যুবতী মা অথবা দাদী বা নানী। তারা নিজেদের অপরাধী হিসেবে মনে করেন না। কিন্তু পুলিশের এমন আচরণে তারা ভীষণ হতাশা প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য, প্রথমেই কান শহরে নারীদের পুরো শরীর ঢাকা বুরকিনি নিষিদ্ধ করে মুসলিমদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে দিয়েছেন মেয়র ডেভিড লিসনার্ড। তিনি বলেছেন, আমার শহরকে আমি নিরাপদ রাখতে আরও কিছু নির্দেশের সঙ্গে বুরকিনি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশে জরুরি অবস্থায় আওতায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে তার নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল আদালতে। কিন্তু আদালত তার নির্দেশই বহাল রাখে। বিচারক তার রায়ে বলেছেন, মেয়রের ওই নির্দেশ ফরাসি আইনের অধীনে বৈধ। ফরাসি আইন স্কার্টের বিষয়ে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা সেখানে স্বীকৃত নিয়ম। ফ্রান্সে ইসলামপন্থিদের সাম্প্রতিক হামলা ও জরুরি অবস্থার আওতায় বুরকিনি নিষিদ্ধ করাকে বৈধতা দেন। গত মাসেই সেখানে নিস শহরে সন্ত্রাসী হামলা হয়। কান থেকে ২০ মাইলেরও কম দূরত্বে নিস শহর। সেখানে বাস্তিল দুর্গের পতন উদযাপনের অনুষ্ঠানে ট্রাক উঠিয়ে দিয়ে মোহামেদ লাহোইয়েজ বেহলাল কমপক্ষে ৮৪ জনকে হত্যা করে। উল্লেখ্য, নিস শহরের কাছে আরেকটি অবকাশ যাপনের স্থান হলো ভিলেনুয়েভ লুবেত। সেখানকার সৈকতেও নিষিদ্ধ হয়েছে বুরকিনি। নতুন করে সেখানে একটি আইন জারি করা হয়েছে। তার অধীনে সেখানে এমন পোশাক পরতে বলা হয়েছে যাতে নৈতিকতার ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হয়, স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তার মানদন্ড অনুসরণ করে। এ শহরের মেয়র লিয়নেল লুকা স্বাস্থ্যগত কারণে এ পোশাক নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আমাকে বলা হয়েছে, আমাদের এই সৈকতে এক দম্পতি এসেছেন। এর মধ্যে নারীটির পুরো শরীর পোশাকে ঢাকা। তাই আমি মনে করেছি, এটা স্বাস্থ্যগত কারণে অগ্রহণযোগ্য। সার্বিক পরিস্তিতিতে এমন পোশাককে সমর্থনও করা যায় না। উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৪ সাল থেকে ফ্রান্সে পুরো মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ রয়েছে। এ নিয়েও বিতর্ক আছে।#মানবজমিন