বার্তা সংস্থা ইকনা: তবে পবিত্র হজ পালন কোনো বয়সের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়। সমাজে প্রচলন থাকলেও হজ এখন আর শুধু বৃদ্ধদের ধর্মীয় আচরণ নয়। তরুণ প্রজন্মের মাঝে দিন দিন হজ পালনের আগ্রহ বাড়ছে। হজ পালনে প্রাণবন্ত মুসলিম তরুণদের অংশগ্রহণ বদলে দিচ্ছে চিরচেনা হজের পরিবেশ।
সদ্য শেষ হওয়া হজ পালনের জন্য সৌদিতে আসা বিভিন্ন দেশের তরুণদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে এএফপি। সেখানে বলা হয়েছে, তরুণদের মাঝে হজ পালনের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে
ব্রিটেন থেকে ২৫ বছর বয়সী সানিয়া দ্বিতীয়বারের মতো সৌদি আরব এসেছেন। তিনি বলছিলেন, ‘আপনি যত তরুণ হবেন, এটা (হজ পালন) তত সহজ। ১২ বছর আগে আমার পরিবার আর আমি এখানে এসেছিলাম ওমরা পালন করতে।’
সানিয়া আবার মক্কায় হজ করতে এসেছেন কারণ এটি যেমন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা তেমনি জীবনের আমূল পরিবর্তন এনে দেয়। সানিয়ার মতোই এবার হজে করতে পবিত্র নগরীতে সমবেত হয়েছেন প্রায় ১৮ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মানুষ।
এক হাতে কোমল পানীয় আর আরেক হাতে ফ্রেন্স ফ্রাই হাতে নিয়ে মক্কার পবিত্র কাবা শরিফের পাশে একটি আধুনিক বাণিজ্যিক সেন্টারে বসে কথা বলছিলেন সানিয়া। দারুণ সাজের সবুজ আর কালো বোরখা পরা সানিয়ার পাশে ছিলেন তার স্বামী। তিনি বলেন, আগে লোকজন হজ পালন করার জন্য বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করত। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে অনেক বেশি ওয়াকিবহাল।
হাসিমুখে তিনি
বলেন,
তপ্ত রোদে হজের নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করা তরুণ বয়সেই বেশি সহজতর।
প্যারিস থেকে সস্ত্রীক হজে এসেছেন ৩৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ। তিনি বলেন, তাদের অনেক বন্ধুই
ইতোমধ্যে হজ পালন করেছেন। তার স্ত্রী মাহিদার বয়স ২৮ বছর। তিনি শিক্ষা বিজ্ঞানের
ছাত্রী। তাদের ট্রাভেল এজেন্সিও জানায় যে বহু তরুণ দম্পতিকে ইতিমধ্যেই
তারা হজে পাঠিয়েছেন।
মোহাম্মদ বলেন, হজ একটা বাধ্যবাধকতা। সচ্ছল হওয়ামাত্রই হজ পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। গাড়ী অথবা অন্যান্য পার্থিব উপকরণ কেনার পরিবর্তে এমন কাজে অর্থ ব্যয় করা উচিত যা আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে সক্ষম।
লিবিয়ার ত্রিপোলি থেকে হজে এসেছেন মোহাম্মদ খাজমা। বয়স ২৭। তিনি একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে কাজ করনে। খাজমা বলেন, তিনি আনন্দিত যে, আল্লাহতায়ালা তাকে হজ করার তওফিক দিয়েছেন। অনেকের ভাগ্যেই এই সুযোগ জোটে না।
মসজিদুল হারামের এক নিরাপত্তাকর্মী আবদুল বারী বলেন, আমি এখানে দায়িত্ব পালন করছি প্রায় ১২ বছর হতে চলল। এ দীর্ঘ সময়ে আমার পর্যবেক্ষণ হলো- হজ পালনে ধীরে ধীরে শিক্ষিত ও পর্যটনে অভ্যস্ত তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বাড়ছে। তাদের সরব উপস্থিতি পবিত্র মক্কা নগরীর অবয়বকেই বদলে দিচ্ছে। তরুণরা নিজেরা যেমন সাগ্রহে হজের আনুষ্ঠানিকতা সারছেন, পাশাপাশি অন্যদের প্রতি সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিতে পারছেন।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই তরুণরা কিন্তু হজ পালনে এসে তারকা হোটেলে উঠেন না, বিলাসিতার ধার ধারেন না, অভিজাত শপিং সেন্টারে ঘুরেন না, ভালো রেস্তোরাঁয়ও আগ্রহ নেই। এসবের পরিবর্তে তারা সামান্য কিছু খেজুর আর জমজম পানি পান করে পবিত্র কোরআন হাতে দুপুর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাবা শরিফের চত্বরেই সময় কাটিয়ে দেবেন। - banglanews24